বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কার্টুন
যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হলেও ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন যখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে বর্ণবাদবিরোধী নানা কার্টুন৷ বিশ্বের নানা প্রান্তের কার্টুনিস্টের তেমনই কিছু সৃষ্টি নিয়ে এই ছবিঘর৷
সবার জন্য রঙিন দুনিয়া
পৃথিবী নানা বর্ণের সমাহার হলেও কিছু মানুষ বরাবরই বৈষম্যের শিকার হন৷ দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পী ইয়ং সিক ওহ এই কার্টুনে এই বক্তব্যই ফুটিয়ে তুলেছেন৷ বিশ্ব থেকে এখনও বর্ণবাদ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি৷ কেবল কৃষ্ণাঙ্গ নয়, কোথাও নারী, কোথাও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী আবার কোথাও সমকামীদের ওপর নেমে আসছে বৈষম্যের খড়্গ৷
আপনিও রঙিন হতে পারেন
জার্মান কার্টুনিস্ট পিয়ার ভেডারভিলে এর এই কার্টুনে দেখা যাচ্ছে ধূসর একটি প্রেক্ষাপটে দুই কালো রঙের পাখি অন্য ডালে বসা রঙিন পাখিকে দেখে অবাক হচ্ছে৷ এক পাখি অন্যটিকে বলছে, ‘‘দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে অভিবাসীরা এখানকার জন্য মানানসই না৷‘‘ অথচ, রঙিন পাখি অন্যদের দৃষ্টিতে কতই না সুন্দর!
বর্ণবাদী সুরকার
‘‘ইবোনি (এক ধরনের কালো কাঠ) আর আইভরি (হাতির দাঁত) আমার পিয়ানোতে পাশাপাশি মিলেমিশে থাকে৷ হে বিধাতা, আমরা পারি না কেন?’’ বিটলসের সাবেক শিব্পী পল ম্যাকার্টনি তার ইবোনি অ্যান্ড আইভরি গানে এই বিখ্যাত বাক্যটুকু সুরে সুরে গেয়েছিলেন৷ বেলজিয়ামের কার্টুনিস্ট কিম ডুখাটয়ও সম্ভবত এমন চিন্তা মাথায় রেখেই এই কার্টুনটি এঁকেছেন৷ একবার ভাবুন, পিয়ানোতে কালো না থাকলে সেটা কতটা বেসুরো হতে পারে!
ইউরোপীয় সঙ্গীতের প্রহসন
১৭৮৫ সালে কবি ফ্রিডরিখ শিলার ‘ওড টু জয়’ লিখে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছিলেন৷ পরবর্তীতে নিজের নবম সিম্ফোনিতে তাতে সুর যোগ করে অন্য মাত্রা দিয়েছিলেন লুডভিগ ফান বীঠোফেন৷ ১৯৮৫ সাল থেকে এই গানটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত৷ ইউরোপের সীমান্তে শরণার্থীদের আটকাতে কাঁটাতারসহ নানা পদ্ধতি কিভাবে এই সঙ্গীতের পরিপন্থি, তা এই কার্টুনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷
স্বাগত (শর্ত প্রযোজ্য)
দারিদ্র্য, শোষণ, যুদ্ধ, ইত্যাদি নানা কারণে মানুষ নিজের জন্মভূমি ছেড়ে আসেন৷ তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের বৈধ উপায়ে কোনো দেশে স্বাগত জানানো হয় না৷ ফলে রাবারের নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে বা পায়ে হেঁটে অনেকেই উন্নত জীবনের খোঁজে অন্য দেশে পাড়ি জমান৷ ইয়ান টমাশোফের এই কার্টুনে দেখানো হয়েছে, শরণার্থীদের স্বাগত জানানো হলেও কিভাবে আগে তাদের সেই দেশের কাছে নিজেদের উপযোগিতা প্রমাণ করতে হয়৷
দুমুখো চরিত্র
গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে সাংবিধানিক আইন অনুসারেই বর্ণবাদ বা অন্য যেকোনো বৈষম্য নিষিদ্ধ৷ কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই অনেক দেশে জ্ঞানী-মানি ব্যক্তিদেরও আচরণে সুপ্ত ‘কট্টর ডানপন্থি’ চিন্তাভাবনা টের পাওয়া যায়৷ ব্যার্ন্ড পোলেনৎস তার কার্টুনে দেখিয়েছেন, স্যুট পরা এক ভদ্রলোকের মাথার মধ্য়ে লাঠিয়াল এক গুন্ডা বাস করছে, উঁকি দিয়ে সব দেখেও নিচ্ছে৷
গোপন বর্ণবাদ
এই কার্টুনটি এঁকেছেন ইরানের শিল্পী সায়েদ সাদেঘি৷ কার্টুনে দেখা যাচ্ছে এক দল ধূসর-কালো পেন্সিলের মধ্যে একটি সাদা হুড পরা পেন্সিল৷ এর মাধ্যমে কার্টুনিস্ট কুখ্যাত কু ক্লাক্স ক্ল্যানকে ফুটিয়ে তুলেছেন৷ এই গোপন সংগঠনটি মার্কিন গৃহযুদ্ধ (১৮৬১-১৮৬৫) শেষে দাসপ্রথা বাতিলের পরও তা মেনে নিতে চায়নি৷ শুরুতে কৃষ্ণাঙ্গ ও পরবর্তীতে ইহুদি, কমিউনিস্ট এবং সমকামীদের হত্যা করেছে সংগঠনের সদস্যরা৷
রোজা পার্কসের প্রতি শ্রদ্ধা
মার্কিন সমাজে জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক রোজা পার্কসের প্রতি সম্মান জানিয়ে এই কার্টুন এঁকেছেন মার্কিন কার্টুনিস্ট লরেন ফিশম্যান৷ বাসে শেতাঙ্গদের জন্য নির্ধারিত আসন ছেড়ে উঠতে অস্বীকৃতি জানানোয় ১৯৫৫ সালে গ্রেপ্তার করা হয় রোজা পার্কসকে৷ সেই ঘটনার ৭০ বছর পরও এখনও মার্কিন সমাজে বর্ণবাদ একটি বড় সংকট হিসাবে বিদ্যমান৷
জীবন রঙিন
বৈচিত্র্য়ই জীবনকে রঙিন করে তোলে৷ ইয়োহানেস ফেরমিয়ারের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘গার্ল উইথ দ্য পার্ল ইয়াররিংস’ ওপর ভিত্তি করে এই কার্টুন এঁকেছেন জার্মানির গউইডো ক্যুন৷ এই চিত্রকর্মটিকে ‘উত্তরের মোনালিসা’ হিসাবেও আখ্যা দেয়া হয়৷ তবে কার্টুনে মূল চরিত্রটিকে বিভিন্ন রঙের ত্বক দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷
কাল্পনিক সহাবস্থান
সমাজে আরো বেশি সহনশীলতার আহ্বান জানাতে চান তুর্কি কার্টুনিস্ট বুরাক এরগিন৷ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের চড়াও হওয়ার খবর যখন সংবাদপত্রে প্রায়ই শিরোনাম হয়, বুরাক তখন কার্টুনে এমন এক কাল্পনিক চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন যেখানে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীরা একে অপরের দিকে ফুল নিয়ে কোলাকুলি করতে এগিয়ে যাচ্ছে৷
বিশ্বের যত রঙ
নানা জাতির রঙকে এই কার্টুনে ফুটিয়ে তুলেছেন ব্রাজিলের কার্টুনিস্ট ফ্রিলাহ৷ বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন রঙের মানুষ নিজেদের মধ্যে বিয়ে করা ও সন্তান উৎপাদনের ফলে ব্রাজিলে প্রায় সব রঙের মানুষের দেখা পাওয়া যায়৷ এটাই দেশটির সাংস্কৃতিক সম্পদের অংশ৷ কিন্তু তারপরও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রায়ই বৈষম্যের শিকার হতে হয় দেশটিতে৷
ইয়িন ও ইয়াং
চীনের ঐতিহ্যবাহী ইয়িন-ইয়াং তত্ত্ব মনে ধারণ করলে বর্ণবাদ থাকারই কথা না৷ এই তত্ত্ব অনুসারে দুই ভিন্নধর্মী শক্তি পরস্পরকে সমানভাবে আকর্ষণ করে, কেউ কারো চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসাবে না৷ সাদা ও কালোতে ফুটিয়ে তোলা হয় ইয়িন-ইয়াং এর প্রতীককে৷ এই মন্তব্যই কার্টুনে ফুটিয়ে তুলেছেন কিউবার কার্টুনিস্ট মিগুয়েল মোরালেস৷