বস্তুর নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণে মস্তিষ্ক তরঙ্গের সাফল্য
২ অক্টোবর ২০১১বিষয়টি খুব সহজ করে বলতে গেলে, আপনি যেমনটি ভাবছেন ঠিক তার সাথে তাল মিলিয়ে একটি বস্তু কিংবা একটি জিনিস এদিক-ওদিক নড়াচড়া করছে৷ এমন ঘটনা হয়তো কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতেই সম্ভব বলে মনে হয়৷ তবে এমন ঘটনাকে সম্ভব করে তুলেছেন জার্মানির ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়বিক মনোবিজ্ঞানী নিলস বিরবাওম্যার৷ এক্ষেত্রে বিজ্ঞানী বিরবাওম্যার মস্তিষ্কের তরঙ্গকে কাজে লাগিয়েছেন তিনি৷
মানুষের মস্তিষ্ক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নানা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সৃষ্টি করে চিন্তা, স্মৃতি, সচেতনতা এবং আবেগ-অনুভূতির প্রক্রিয়া চালায়৷ বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে মাথার খুলির উপর বহুমুখী ইলেক্ট্রোড লাগিয়ে ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি তথা ইইজি'র মাধ্যমে এসব তরঙ্গ সংকেত ধরতে সক্ষম হয়েছেন৷ আর ধারণকৃত এসব সংকেতের মাত্রা বৃদ্ধি করে তা কম্পিউটারে পাঠিয়ে সেই ব্যক্তির ইচ্ছা পড়তে সক্ষম হয়েছে আধুনিক বিজ্ঞান৷ এই পদ্ধতি ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস বা বিসিআই নামে পরিচিত৷ এই পদ্ধতিতে মানুষ স্বাভাবিক পন্থায় ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ না করে অর্থাৎ কথা না বলে কিংবা হাত-পা নড়াচড়া না করে শুধুমাত্র চিন্তা বা ভাবনার মাধ্যমেই বাহিরের জিনিস বা বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হচ্ছে৷
বিরবাওম্যার তাঁর গবেষণায় থট ট্রানস্লেশন ডিভাইস বা টিটিডি নামে একটি যান্ত্রিক কৌশল প্রয়োগ করেন৷ প্যারালাইজড হয়ে পড়ায় অনুভূতি প্রকাশে অক্ষম রোগীর মাথার খুলির উপর ইলেক্ট্রোডের টুপি পরিয়ে দেওয়া হয়৷ ফলে টিটিডি তার মস্তিষ্ক থেকে স্লো কর্টিক্যাল পটেনশিয়্যাল বা এসসিপি সংকেতগুলো ধরে নেয়৷ এসব সংকেতের সাথে তাল মিলিয়ে টিটিডি'র অংশ হিসেবে ল্যাপটপের কার্সর ওঠা-নামা করে৷ এই প্রক্রিয়ার জন্য বিরবাওম্যার এবং তাঁর দলের সদস্যরা রোগীর চিন্তাশক্তিকে প্রশিক্ষিত করেন না বরং তাঁরা রোগীকে উপদেশ দেন নিবিড়ভাবে দেখার এবং বোঝার যে, কোন পন্থায় কাজ হয়৷
এই ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন হলে রোগীকে অক্ষর এবং শব্দ নিয়ে খেলতে অভ্যস্ত করে তোলা হয়৷ এই টিটিডি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে৷ তবে সুখের কথা হচ্ছে ইতিমধ্যে বিজ্ঞানী বিরবাওম্যারের তিন জন রোগী টিটিডি ব্যবহার করে সাবলীলভাবে লিখতে পারছেন৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ