বহিঃসমর্পণ বিলের বিরুদ্ধে হংকংয়ে বিক্ষোভ
৯ জুন ২০১৯সাধারণ জনতার এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আয়োজক সংগঠন সিভিল হিউম্যান রাইটস ফ্রন্ট জানিয়েছে, এই ইস্যুতে গত এপ্রিলে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন৷ বন্দি বহিঃসমর্পণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া মানুষের সংখ্যা এখন আরো অনেক বেশি৷
হংকংয়ে যেখানে বিক্ষোভ হচ্ছে, সেখানে অবস্থানরত জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএ'র প্রতিনিধি জানিয়েছেন আজকের বিক্ষোভেও আগেরবারের মতোই অনেকমানুষ অংশ নিচ্ছে৷ বিক্ষোভকারীদের হাতে লাল কার্ডবোর্ডে চীনা এবং ইংরেজি ভাষায় লেখা রয়েছে, ‘‘চীনে বহিঃসমর্পণ নয়৷''
বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরুর ঘণ্টাখানেক পরও অনেক মানুষকে সেটিতে যোগ দিতে দেখা গেছে বলে জানা গেছে৷ ভিড় কমার কোন ইঙ্গিত সেখানে নেই, বরং ক্রমশ তা বাড়ছে৷ প্রতিবাদকারীরা মনে করছেন, বন্দি প্রত্যাবর্তনের এই আইন পাস হলে তা হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে৷
হংকং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও ২০৪৭ সাল অবধি অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দিয়েছে দেশটি৷ ১৯৯৭ সালে হংকংয়কে চীনের কাছে ফেরত দেয়া হয়েছিল৷
প্রসঙ্গত, গতবছরের এক ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত এই বিলটি তৈরি করা হয়৷ তাইওয়ানে ছুটি কাটানোর সময় অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীকে হত্যার অভিয়োগ ওঠে হংকংয়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে৷ কিন্তু তাইওয়ানের সঙ্গে হংকংয়ের বন্দি বিনিময়ের কোন চুক্তি না থাকায় সেই ব্যক্তিকে এখন তাইপেতে বিচারের জন্য পাঠানো যাচ্ছে না৷
প্রস্তাবিত বিলে এরকম পরিস্থিতিতে সন্দেহভাজন অপরাধীকে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম করা হয়েছে৷ কিন্তু চীন এই আইনের সুবিধা নিয়ে হংকংয়ের বাসিন্দাদের উপর খবরদারি বাড়াতে পারে বলে সন্দেহ থাকায় বিষয়টি সেখানে এক রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে৷ ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দারা ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ পাশাপাশি তাইওয়ানও জানিয়েছে যে সন্দেহভাজন সেই খুনের মামলার আসামিকে ফেরত নিতে চায় না তারা কেননা এটি এমন এক উদাহরণ সৃষ্টি করবে যা চীন ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারে৷
বেইজিংয়ের দুর্বল আইন এবং মানবাধিকার রেকর্ডের কারণে সেখানে কোন বন্দিকে ফেরত পাঠানোকে নিরাপদ মনে করছেন না তাইওয়ান এবং হংকংয়ের সাধারণ মানুষ৷
হংকংয়ে পুরো পরিবার সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেয়া হেরা পুন বলেন, ‘‘আমি মনে করি এটা এখন পর্যন্ত প্রস্তাবিত সবচেয়ে বাজে আইন৷ আমরা সবাই বুঝতে পারছি যে হংকংয়ের বিচার ব্যবস্থায় নাড়া দিচ্ছে চীন৷''
পুন মনে করেন, চীন সরকার কারো উপর অসন্তুষ্ট হলেই তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে যা সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশ নয়৷ রবিবারের বিক্ষোভে অংশ নেয়া আরো অনেকে তাঁর মতো একই মনোভাব প্রকাশ করেছেন৷
ক্রিস্টোফার নামের এক প্রতিবাদকারী বলেন, ‘‘আমি তিন সন্তানের পিতা এবং আমিও প্রস্তাবিত আইনের বিরুদ্ধে আমার মতামত জানাতে চাই৷ আমি মনে করি নতুন এই আইন হংকংয়ের মৌলিক স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপের সামিল৷''
হংকং সরকার অবশ্য আইনটি নিয়ে জনগণের উদ্বেগের কথা বিবেচনায় এনে কোন কোন ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে বন্দি বহিঃসমর্পণ করা যাবে তা কমিয়ে আনার এবং সমর্পিত বন্দিদের যাতে সংশ্লিষ্ট দেশে শাস্তির ধরম সাতবছর বা তার বেশি কারাদণ্ড নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে৷
তবে, প্রতিবাদকারীরা সরকারের এসব ঘোষণায় সন্তুষ্ট নয়৷ বরং অতীতে এধরনের প্রতিবাদে কাজ হওয়ায় এবারও আইনটি বাতিল হবে বলে আশাবাদী তারা৷
এআই/এডিকে (ডিপিএ, রয়টার্স)