ব়্যাবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন
৮ মে ২০১৪ব়্যাব সঠিক পথেই আছে৷ তবে বিশ্লেষকরা ডয়চে ভেলেকে ব়্যাবের সংস্কারের কথা বলেছেন৷ ক্রসফায়ারসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ব়্যাবকে বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে৷ কিন্তু বাংলাদেশের ভিতর থেকে এ ব্যাপারে তেমন কোনো জোরালো সমর্থন তারা পায়নি এতদিন৷ তবে নারায়ণগঞ্জে ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ৭ জনকে হত্যার পর বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি বুধবার ব়্যাবের ব্যাপারে তাদের অবস্থান মোটামুটি পরিষ্কার করেছে৷
বুধবার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত যে বাহিনী, তারাই আজ জীবন রক্ষার বদলে জীবন হরণ করছে৷ এই অবস্থায় এলিট ফোর্স নামে এ বাহিনী রাখার প্রয়োজন আছে কি-না তা ভাবার সময় এসেছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘নারায়ণঞ্জের হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ব়্যাবের সেখানকার অধিনায়কসহ তিনজনকে ক্লোজড করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে৷ এর মাধ্যমে সরকার স্বীকার করে নিয়েছে হত্যার ঘটনায় ব়্যাব জড়িত৷ সারা দেশের মানুষ ও সুশীল সমাজের লোকজন বলছেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা দেবে এমন বাহিনী যদি নাগরিকদের জীবন হরণ করে, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের আর দরকার আছে কি?
বিএনপি ব়্যাব বিলুপ্তি চায় কি না – এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘‘বিএনপি জনগণের দল৷ জনগণের বক্তব্য আমাদের বক্তব্য৷'' উল্লেখ্য, বিএনপি-র শাসনামলেই ২০০৪ সালে ব়্যাব গঠন করা হয়েছিল৷
আর বুধবার বিকেলে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে অপহরণ,গুম ও খুন নিয়ে বিএনপির অবস্থান কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে৷ বিএনপি নেতারা কূটনীতিকদের বলেছেন, সরকার ‘অনির্বাচিত' হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে সরকারের কর্তৃত্ব শিথিল হয়ে পড়েছে৷ কাউকে সরকার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না৷ তাঁরা ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের এই সময় পর্যন্ত সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত, অপহরণ ও গুমের পরিসংখ্যান দেন৷
অন্যদিকে ব়্যাব বিলুপ্ত করার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন, ‘‘দুই-একজন কর্মকর্তার দোষের কারণে কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রশ্ন আসে না৷ নারায়ণগঞ্জে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘ব়্যাব যে উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছে, তারা সেই পথেই আছে৷ তারা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে৷ কোনো ব্যক্তির দায়ে প্রতিষ্ঠান দায়ী হতে পারেনা৷ ব়্যাব বিলুপ্তের কোন প্রশ্নই আসে না৷''
মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ব়্যাবের সংস্কার প্রয়োজন৷ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ব়্যাব গঠন করা হয়েছে৷ ফলে এর মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং মূল লক্ষ্যে একতাবদ্ধ হওয়া নিয়ে সমস্যা আছে৷ তাই সার্বিকভাবে জনকল্যাণে ব়্যাবকে কাজে লাগাতে হলে এর সংস্কার অপরিহার্য৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘ব়্যাবের যে সব কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তা তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে৷ আর তা যদি ধারাবাহিকভাবে করা যায়, তাহলে প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব়্যাব দায়মুক্ত থাকবে বলে মনে করেন তিনি৷