বাংলা উইকি’র পরিধি বাড়লেও মান নিয়ে বিতর্ক
২৭ অক্টোবর ২০১০বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম৷ কিন্তু আয়তনের হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে ৯৩তম; ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি... ইন্টারনেটে বাংলাদেশ সম্পর্কে বাংলায় এই তথ্যটুকু পেতে কতটুকু সময় লাগবে আপনার? চলুন আরো একটু খুঁজি৷
বাংলায় ‘সুন্দরবন'-এর আক্ষরিক অর্থ ‘সুন্দর জঙ্গল' বা ‘সুন্দর বনভূমি'৷ সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায়৷ এই তথ্যটুকুও ইন্টারনেটে এখন পাওয়া যায় মুহূর্তের মধ্যে৷ বাংলাদেশের বর্তমান ইন্টারনেট প্রজন্মের কল্যাণে এমন সব তথ্য সহজলভ্য হচ্ছে সবার কাছে৷ উইকিপিডিয়া নামক মুক্ত বিশ্বকোষে যুক্ত হচ্ছে বাংলায় এমন নানা তথ্য৷
বাংলা উইকি
উইকিপিডিয়ার বাংলা সংস্করণে স্বাগতম৷ এই বিশ্বকোষে যে কেউ অবদান রাখতে পারেন৷ ২১,৮৫১টি ভুক্তির উপর কাজ চলছে - বাংলা উইকিপিডিয়ার প্রথম পাতায় শোভা পাচ্ছে এই বার্তা৷ যেখানে পরিষ্কার আহ্বান, আসুন আপনার জ্ঞানটুকু তুলে দিন উইকিতে৷
৩৬০ বছরের পুরাতন ও পুরাতাত্ত্বিক গুরুত্ববহ পুরনো ঢাকার চুড়িহাট্টা মসজিদ, মানুষের আগ্রাসনে ২০০৮ সালের জুলাই মাসে এটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায় - এই তথ্যটিও উইকিপিডিয়া থেকেই নেওয়া৷ উইকির ‘আপনি জানেন কি' অংশে থাকে ছোট ছোট তথ্য কণিকা৷ প্রথম পাতায় সেগুলো ক্রমানুসারে প্রদর্শিত হয়৷ রয়েছে বাংলায় খোঁজারও ব্যবস্থা৷ বাংলা উইকির অন্যতম প্রশাসক বেলায়েত হোসেন এই প্রসঙ্গে জানান, বর্তমানে বাংলা উইকিপিডিয়ার নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা ১৬ হাজার৷
মান নিয়ে প্রশ্ন
বাংলা উইকিপিডিয়া গড়ে তুলতে তরুণ প্রজন্মের চেষ্টা লক্ষণীয় হলেও, এর মান নিয়ে খানিকটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷ বিশেষ করে সেখানে যুক্ত নানান ভুক্তিতে তথ্যের ঘাটতি চোখে পড়ার মতো৷ মোটের ওপর সংযুক্ত তথ্যের সূত্রও থাকে না অনেক সময়৷ তাই, এই উইকির গ্রহণযোগ্যতা এখনো এক বিতর্ক৷ জনপ্রিয় বাংলা ব্লগার আলী মাহমেদ এই প্রসঙ্গে বলেন, বাংলা উইকি এখনো অনেক অসম্পূর্ণ৷ ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই, ডয়চে ভেলে লিখে সেখানে সার্চ দিলে ছয় লাইনের বেশি কিন্তু পাবেননা৷ যদিও ইংরেজি উইকির সঙ্গে তুলনা চলে না, তারপরও দু'টোকে পাশাপাশি দাঁড় করালে খানিকটা আঁচ পাওয়া যাবে৷ যেখানে ইংরেজি উইকিতে ৩৫ লক্ষ আর্টিকেল, সেখানে বাংলায় মাত্র ২২ হাজার ভুক্তিতে কাজ চলছে৷ তিনি বলেন, যেহেতু আমি বাংলায় লেখালেখি করি, স্বভাবতই চাইবো বাংলা উইকিকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করতে৷ কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না৷ এটা আমার জন্য খানিকটা কষ্টেরও৷
ঠিক এই বিষয়টি নিয়েই আমরা কথা বলি বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে৷ তাঁর মতে, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আসবে তখনই, যখন আমরা আরো বেশি কন্ট্রিবিউটর বা অবদানকারী পাবো৷ তিনি বলেন, ২০০৪-এ যখন আমরা শুরু করেছিলাম, তখন পরিস্থিতি আরো খারাপ ছিল৷ এখন ২০১০ সালে এসে অনেকটা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, কারণ আমরা অনেক বেশি মানুষকে উইকি সম্পর্কে জানাতে পেরেছে৷ ফলে অনেকে আগ্রহী হয়ে উইকিতে অবদান রাখে৷ আস্তে আস্তে এই অবদানকারীর সংখ্যা বাড়ছে, অবদান বাড়ছে৷ সঙ্গে নিবন্ধের সংখ্যা এবং মানও বাড়ছে৷
প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা
বেলায়েতের মতে, বাংলা উইকিকে আরো সমৃদ্ধ করতে পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন৷ সেইসঙ্গে তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উইকি সম্পর্কে সচেতনতাও গড়ে তুলতে হবে৷ সে চেষ্টা অবশ্য বাংলাদেশে রয়েছে৷ কিন্তু পরিধি এখনো সীমিত৷
মোবাইলে উইকি
প্রযুক্তিগত দিক থেকে কিন্তু মোটেই পিছিয়ে নেই বাংলা উইকি৷ এটি পড়া যাবে মোবাইলেও৷ ঠিকানা: bn.m.wikipedia.org৷ এজন্য মোবাইলে বাংলা পড়ার সুবিধা থাকতে হবে৷ অপেরা মোবাইল ব্রাউজার একাজে সহায়ক৷
বাংলা উইকিপিডিয়াতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন ২০ থেকে ২৫ জন তরুণ৷ তবে, এই উইকির উন্নয়নে আরো তরুণের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন৷ বিশেষ করে বাংলা ব্লগারদের সুযোগ রয়েছে এখাতে কাজ করার৷ কেননা, মুক্ত এ তথ্য ভাণ্ডার আমাদের ভাষাকেই তো সমৃদ্ধ করছে৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই