1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

'বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া মিলছে না'

৩ জানুয়ারি ২০২৪

গত এক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভারতের চোখে বাংলাদেশকে দেখা' নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের সে অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন৷

https://p.dw.com/p/4aqBd
মেরুকরণের যে রাজনীতি বিশ্বজুড়ে চলছে, তাতে বাংলাদেশের এখনই সরাসরি কোনো পক্ষে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা।
মেরুকরণের যে রাজনীতি বিশ্বজুড়ে চলছে, তাতে বাংলাদেশের এখনই সরাসরি কোনো পক্ষে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা।ছবি: Naveen Sharma/ZUMA/IMAGO

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর বৈশ্বিক রাজনীতিতে চলছে নতুন মেরুকরণ৷ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর একমেরুকেন্দ্রীক যে রাজনীতি ছিল, এখন চীন-রাশিয়াকে কেন্দ্র করে নতুন বলয় তৈরির ফলে সে রাজনীতির বদল ঘটছে৷ এর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতেও৷

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য এসেছে আন্তর্জাতিক মহল থেকে৷ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে র‌্যাবের সাতজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের অভিযোগে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়৷

২০২৩ সালের মে মাসে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা বা তাতে সহযোগিতা করা ব্য়ক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে৷ এর আওতায় বর্তমান এবং সাবেক কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের কর্মী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্যরাও থাকবেন বলে জানানো হয় পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে৷

সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের বেশ কিছু নাগরিকের ওপর এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

১০ নভেম্বর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের  পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু' বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ এরপর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের অবস্থান ‘স্পষ্ট' করা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ কোয়াত্রা জানান, যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশের নির্বাচন সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সেদেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন৷''

বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে কি তাহলে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র মুখোমুখি?

বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন মনে করেন, পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অ্যামেরিকার দৃষ্টিভঙ্গীও বদলেছে। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘যেহেতু ইন্দোপ্যাসিফিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ অনেকটা বেড়েছে, সবক্ষেত্রে হয়তো সেটা ভারতের যে চাওয়া সেটার সঙ্গে মেলে না৷ বাংলাদেশের সঙ্গে একটা অর্থবহ সম্পর্ক তৈরি করতে যায় যুক্তরাষ্ট্র৷ সেটা আমার ধারণা, অনেকেরই ধারণা৷ সে কারণে তারা চায় এখানে একটি প্রোপার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক৷''

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘এই নির্বাচনের ব্যাপারে ভারত এবং চীনের অবস্থান এক৷ অথচ ভারত এবং চীন কিন্তু পরস্পর বিপরীত৷ এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের অবস্থান মেনে নেয়া মানে চীনের অবস্থানটাও মেনে নেয়া৷ কিন্তু এই মুহূর্তে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক চলছে, সেটা আমাদের মনে রাখতে হবে৷ কাজেই তারা তাদের স্বার্থ দেখবে, এজন্যই তারা নিজেদের একটা পদ্ধতি চাইবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু তারা মনে করছে, তাদের স্বার্থ ভারত যে অবস্থান নিয়েছে সেটা দিয়ে রক্ষিত হচ্ছে না৷''

ডয়চে ভেলে বাংলার ফেসবুক লাইভে যোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য৷ তিস্তা নদীর পানিবণ্টন, সীমান্ত হত্যাসহ নানা বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশের বিরোধ ইস্যুতে তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অনেকে মনে করেন, বড় দেশ হওয়ায় ভারত বাংলাদেশের ওপর ইনফ্লুয়েন্স খাটাচ্ছে৷ তবে এই সব বিষয়েরই লং টার্ম সলিউশন হয়ে যাবে৷ এটা নিয়ে খুব বেশি স্টাবর্ন হওয়ার কিছু নেই৷ এটা বিরোধী দলের জন্য পয়েন্ট হতে পারে৷ তবে এগুলো কয়েক বছর সময় লাগলেও শেষ পর্যন্ত সমাধান হয়ে যাবে৷''

এ বিষয়ে অবশ্য সম্পূর্ণ একমত নন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব। তিনি মনে করেন, ভারতের সদিচ্ছার অভাবই এক্ষেত্রে মূল বাধা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তই পৃথিবীর একমাত্র সীমান্ত, যেখানে নিয়মিত গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘দাদাগিরিতে কোনো সমস্যা নেই, যদি দাদা তার রোলটা ঠিকমতো প্লে করে৷ বাংলাদেশের মানুষের চোখে, দাদা সে রোলটা প্লে করছে না৷''

তিস্তা ইস্যুতে তিনি বলেন, ''২০০৬ সালে এটা সমাধানের কাছাকাছি গিয়েছিল৷ তার মানে ১৫ বছর হয়ে গেছে৷ কোনো অগ্রগতি নাই, বরং পশ্চাদপসারণ হয়েছে৷ এগ্রিমেন্টের ড্রাফট এগ্রিড হয়ে যাওয়ার পর সেটা ডিপ ফ্রিজে রেখে দেয়া হয়েছে, কোনো কথাই নেই আর এ নিয়ে৷ এগুলোর কিন্তু প্রভাব পড়ে৷ তিস্তা নদীতে পানি কম আছে, আমরা সবাই জানি৷ প্রয়োজন অনেক বেশি৷ কিন্তু সেটা যে ভাগাভাগি করা যাবেই না, একটুও করা যাবে না, সেটা তো দাদাগিরি হলো না আসলে৷ সেটা নিগেটিভ দাদাগিরি হলো৷''

নতুন যে মেরুকরণের রাজনীতি বিশ্বজুড়ে চলছে, তাতে বাংলাদেশের এখনই সরাসরি কোনো পক্ষে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন না তৌহিদ হোসেন। এমনকি সরকার পরিবর্তন হলেও তারা চীনবিরোধী জোট কোয়াডে যোগ দেবে না বলে বিশ্লেষণ তার৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ সরকার আরেকটু ভালোভাবে সামলাতে পারতো বলেও মনে করেন তিনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান