বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সদর-অন্দর
স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ মসৃণ রাখতে বিশ্বের অনেক দেশেই রয়েছে প্রেস কাউন্সিলের মতো প্রতিষ্ঠান৷ কিন্তু বাংলাদেশের প্রেস কাউন্সিল বার বার এসেছে আলোচনায়, সমালোচনায়৷
কোয়াসি বিচার-বিভাগীয় সংস্থা
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল হল বাংলাদেশের একটি কোয়াসি-বিচার বিভাগীয় সংস্থা যেটি বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আইনের অধীন৷ সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার পথ তৈরি করা যার উদ্দেশ্য৷
চার দশকের পুরানো প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেমে স্বাধীন সাংবাদিকতার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪ পাশ হয়৷ এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল৷ এরপর থেকে চার দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে সাংবাদকিতা ও সংবাদমাধ্যমের দেখভালের দায়িত্বে থাকা এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে৷ বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল ভবনের ভেতরের ছবি এটি৷
তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীণ
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এই সংস্থাটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে প্রেসের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার মান সংরক্ষন ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রেস কাউন্সিল গঠন করা প্রয়োজন৷ এটাই আইনের প্রথম কথা৷ এটাই কাজ৷’’
লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী
কী লক্ষ্য নিয়ে সংস্থাটি কাজ করবে তা প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব পেইজে স্পষ্ট বলা আছে৷ বলা আছে, ‘‘কাউন্সিলের উদ্দেশ্য হবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সুরক্ষা দেওয়া এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্র এবং সংবাদসংস্থার মানউন্নয়নে কাজ করা৷’’ যদিও প্রতিষ্ঠার পরবর্তী বছরগুলোতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষায় কতোটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবারই৷
২০ বছরের পুরোনো সংবাদপত্র ও সাংবদসংস্থা ও সাংবাদিকের আচরণবিধি
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটি সংবাদপত্র ও সাংবদসংস্থা ও সাংবাদিকের আচরণবিধি সর্বশেষ সংযোজনটি করেছে ২০০২ সালে৷ প্রযুক্তির বিকাশের ফলে গত এক দশকে সাংবাদিকতা চর্চার নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটি সাংবাদিকদের জন্য নতুন কী অনুসরণীয় নির্দেশনা দিচ্ছে তা স্পষ্ট নয়৷
এখতিয়ারে নেই নিউ মিডিয়া?
প্রেস কাউন্সিলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটি মূলত সংবাদপত্র এবং সংবাদসংস্থা নিয়ে কাজ করে থাকে৷ প্রশ্ন উঠে, ইন্টারনেট প্রসারের ফলে নতুন করে যে মিডিয়ার বাজার তৈরি হয়েছে যেমন অনলাইন নিউজপোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল তাদের সুরক্ষার বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব কার৷ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অবশ্য সম্প্রতি জানিয়েছেন, অনলাইন পত্রিকাগুলোও এর আওতায় আসবে৷
অনেক বার্তাই ইংরেজি ভাষায়
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসহ অনেক বার্তাই শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে৷ বাংলাদেশে বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে এবং যেখানে প্রায় সব সংবাদমাধ্যমের ভাষাই বাংলা সেখানে সেই সংবাদমাধ্যগুলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটি ইংরেজি ভাষায় কেন যোগাযোগ করছে তা বোধগম্য নয়৷
নতুন আইন নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল ১৯৭৪ সালের প্রেস কাউন্সিল আইনে কিছু সংশোধনের প্রস্তাব এনেছে, যার মাধ্যমে সাংবাদিকদের বড় অংকের জরিমানা করার সুযোগ তৈরি হবে৷ প্রেস কাউন্সিল ১৯৭৪ সালের এই আইনের সংশোধিত খসড়া তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠায়৷ এই আইন নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম সারির দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের মন্তব্য, ‘‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল: রক্ষক কি ‘ভক্ষকে’ পরিণত হচ্ছে৷’’
আরআর/কেএম (বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, সমকাল, ডেইলিস্টার বাংলা)