আইএস এ সব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে
২৭ এপ্রিল ২০১৬২৫শে এপ্রিল ঢাকায় ইউএসএআইডি-র কর্মী ও সমকামী ম্যাগাজিন ‘রূপবান'-এর সম্পাদক জুলহাস মান্নান ও তাঁর বন্ধু মাহবুব তনয়ের খুনের ঘটনার পর ঐ আহ্বান জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘হত্যাকাণ্ডের যারা শিকার, সেইসব ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতিগভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি আমরা৷ দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি আহতদের৷ এ সব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করতে এর তদন্তের প্রয়োজন আছে৷'
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ সরকার মৌলিক অধিকার হিসেবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে৷ সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য এটা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷'
এদিকে জুলহাস মান্নান হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাস৷ এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত টোমাস প্রিনৎস বলেন, ‘‘জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয়ের লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডে আমি গভীরভাবে মনঃক্ষুণ্ণ ও মর্মাহত৷ আমি এ দুই স্পষ্টভাষী উদারমনা অধিকারকর্মীর হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি৷ এটা শুধু দুই সাহসী ব্যক্তির ওপরই হামলা নয়, বরং এটা বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতার ওপর হামলা৷ এ ঘটনার দ্রুত ও যথাযথ তদন্তে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি৷ বিগত মাসগুলোতেও আমরা এ ধরনের বহু ঘটনা ঘটতে দেখেছি৷ এখন সময় এসেছে পুরো সমাজকে একসঙ্গে এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকারকে রক্ষা করার৷''
শুধু জার্মানিও নয়, ফ্রান্সও জুলহাস মান্নান, মাহবুব তনয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী এবং হিন্দু সাধু পরমানন্দ রায়সহ সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোকে নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ঘটনার পরপরই নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায়৷ বুধবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকও করেছেন৷ বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘বার্নিকাট আমাদেক বলেছেন, বাংলাদেশে যে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস আছে, সেটা আমরা বিশ্বাস করছি না৷ অথচ এগুলো তো তারাই ঘটাচ্ছে৷''
ওদিকে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘অপরাধীরা অপরাধ করে পালিয়ে যেতে পারে এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে এ দেশে৷''
এ সব প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিদেশিদের উদ্বেগের যথেষ্ঠ কারণ আছে৷ গত ১৪ মাসে ৩৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে বাংলাদেশে৷ এরা টার্গেট কিলিং-এর শিকার হয়েছেন৷ নিহতরা মূলত মুক্তচিন্তার মানুষ, অন্য ধর্মের অথবা ভিন্নমতের৷ আর এতেই স্পষ্ট যে জঙ্গিরা তাদের নিশানা আরো তীব্র করছে, যা খুবই আতঙ্কের৷ সরকার এ সব ঘটনায় বিদেশি ষড়যন্ত্র বা বিরোধী দলকে দায়ী করে দায় এড়াতে চাইছে৷ এটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷''
তাঁর কথায়, ‘‘নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব৷ সেটাই তো সরকারের কাজ৷''
বন্ধুরা, সরকার কি সেই দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে হয়? জানান নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷