আসছে শিশুদের জন্য চ্যানেল
৫ ডিসেম্বর ২০১৬মোহাম্মদ তোফায়েল সরকারের মত অনেক প্রযোজকের মনে ইচ্ছে থাকে শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণ করার৷ কিন্তু বাংলাদেশে সংবাদ চ্যানেল এবং মিশ্র চ্যানেলে কেবল শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান খুব বেশি নেই৷ বাংলাদেশ টেলিভিশনেও পুরোনো অনুষ্ঠানগুলোই এখনো চলে৷ তাই শিশুদের চ্যানেলে কাজ করার সুযোগ পেয়ে তিনি আনন্দিত৷ তাঁর মতে শিশুদের শিক্ষার চেয়েও বিনোদনের ক্ষেত্রটা তৈরি করা উচিত৷ আর এজন্য প্রয়োজন কেবল শিশুদের আনন্দ দানের জন্য অনুষ্ঠান নির্মাণ করা৷
ডয়চে ভেলে: আমাদের দেশে তো বেশিরভাগই চ্যানেলই সংবাদ বা অনুষ্ঠান ভিত্তিক৷ শিশুদের জন্য চ্যানেলের উদ্যোগ আগে কেন নেয়া হয়নি বলে আপনার মনে হয়?
মোহাম্মদ তোফায়েল সরকার: অনেকেই চিন্তা ভাবনা করেছেন৷ কিন্তু সময়-সুযোগ হয়নি৷ আমরা যারা অনুষ্ঠান বানাই তারা সব সময় চেষ্টা করি শিশুদের জন্য কিছু করতে৷ এই চ্যানেল প্রতিষ্ঠার পেছনে যে যুক্তিটি দেখিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা তা হলো, বিভিন্ন চ্যানেলে বিশেষ করে হিন্দি চ্যানেলে নানা কার্টুন দেখে শিশুরা বাংলার বদলে হিন্দি ভাষা শিখছে৷ কেননা তাদের বিনোদনের জন্য আমাদের চ্যানেলগুলোতে কার্টুন বা ভালো অনুষ্ঠান নেই৷ সেই জায়গা থেকে এই চ্যানেল নির্মাণের ভাবনা এসেছে৷ যেখানে কেবল শিশুদের জন্য, শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান থাকবে৷
ডয়চে ভেলে: আপনি তো এর আগে একটি মিশ্র চ্যানেলে কাজ করেছেন? তখন কি শিশুদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বা চেষ্টা করেছিলেন অনুষ্ঠান করার?
মোহাম্মদ তোফায়েল সরকার: সংবাদ ও অনুষ্ঠানভিত্তিক মিশ্র চ্যানেলগুলোতে অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভাগ করা থাকে৷ এখানে ইচ্ছে করলেও নিজের মত করে কোনো অনুষ্ঠান করা যায় না৷ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ অনুষ্ঠান করা হয়েছে৷ যেমন ঈদসহ বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে শিশুদের জন্য অনুষ্ঠান তৈরির প্রস্তাবনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই আসতো৷ আমরা শুধু সেটা সম্পাদন করতাম৷
আপনি কেন এই চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত হলেন? আগের চ্যানেলগুলোতে শিশুদের জন্য অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন কি?
প্রযোজনায় আসার শুরু থেকেই অনেক ইচ্ছে ছিল৷ মনের ভেতর লালন করছিলাম শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান করবো৷ সে কারণেই এখানেই যুক্ত হলাম৷ না, আমার কোনো অনুষ্ঠানের প্রস্তাব কখনো বাতিল হয়নি৷ আসলে অফিসে অ্যাসাইনমেন্ট থাকে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য অনুষ্ঠান করার৷ তখন কোন প্রস্তাব দিলে তা কখনো প্রত্যাখ্যাত হয়নি৷
নতুন এই চ্যানেলে কী ধরনের অনুষ্ঠান থাকছে?
প্রথমেই মাথায় রাখা হয়েছে কার্টুন৷ বিদেশি কার্টুন বাংলায় ডাবিং করে দেখানো হবে৷ বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় দিনে দুইবার প্রচার হবে সেই কার্টুন৷ কেবল শিশুদের জন্য যেসব সিনেমা রয়েছে সেগুলো দেখানো হবে৷ এছাড়া থাকবে নানা ধরনের অনুষ্ঠান৷
শিক্ষামূলক কোনো অনুষ্ঠান থাকছে কি?
দেখুন, শিশুদের শিক্ষার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিন্তু বিনোদনের জন্য নেই৷ তাই শিশুদের বিনোদনটাকেই এখানে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে৷ যেমন গ্রামের পরিবেশ কেমন, সেখানকার মানুষের জীবনযাপন – এ সবের সঙ্গে শহরের শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেয়া৷ ঐতিহাসিক জায়গাগুলো সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দেয়া, যাতে দেশের ঐতিহ্য সম্পর্কে তারা জানতে পারে৷ এছাড়া তাদের কল্পনার জগত তৈরি করা৷ যেমন শিশুদের স্বপ্নের ক্লাসরুম বা শ্রেণিকক্ষ কেমন হবে – এটা তাদের কাছেই জানতে চাওয়া হবে এবং তাদের বলা হবে স্বপ্নের ক্লাসরুমটাকে সাজাতে৷ তারা নিজেরাই সেটা করবে৷ এছাড়া বাঙালি বা বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের শেকড়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার অনুষ্ঠান থাকছে৷ যেমন ফসল কীভাবে উৎপাদন হয়৷ পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখানো হবে৷ শহরের শিশুদের গ্রামে নিয়ে গিয়ে সামনাসামনি দেখানো হবে৷ চ্যানেলটির কোনো অনুষ্ঠানে তারকা অভিনেতা অভিনেত্রী থাকবে না৷ সব শিশুরাই এতে অংশ নেবে৷
শিশুদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানানোর কোনো অনুষ্ঠান থাকছে কি?
আমাদের পরিকল্পনায় আছে৷ একটি অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ মুক্তিযোদ্ধাদের মুখ থেকে শিশুদের গল্প শোনানোর একটি অনুষ্ঠান থাকবে৷ যেখান থেকে শিশুরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে৷
(যেহেতু চ্যানেলটি এখনও সম্প্রচারে আসেনি৷ তাই চ্যানেলটির কর্তৃপক্ষের অনুরোধে নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না৷)
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷