বাংলাদেশে ‘চুপিসারে' আসবে না তো ইবোলা!
১৪ অক্টোবর ২০১৪ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে আঁতকে ওঠে৷ পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে মহামারি হয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশে আতঙ্ক ছড়ালেও বাংলাদেশে অবশ্য এ নিয়ে এখনো তেমন হেল-দোল নেই৷ সরকারের দাবি, ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত কেউ যাতে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ এ নিয়ে প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে বিভিন্ন সংবাদপত্রে৷ আবার ইবোলার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ‘বজ্র আঁটুনি' যে ‘ফস্কা গেরো-'র মতো- এ ধারণাও হয়েছে কোনো কোনো প্রতিবেদন পড়ে৷
দেশের শীর্ষ স্থানীয় এক দৈনিককে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘দায়িত্বশীল সূত্র' জানিয়েছে,‘‘ ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার এমন তিনটি দেশ গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওন থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁদের জন্য ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আলাদা অভিবাসন ডেস্ক খোলা হয়েছে৷ কিন্তু সেখানে সবাইকে পাঠানো হচ্ছে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না৷ পাশাপাশি বিদেশফেরত মানুষকে যথেষ্ট তথ্যও দেওয়া যাচ্ছে না৷ একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে, সেটিও দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে৷ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যে ভাবে বলছে, সে ভাবেই কাজ করতে হচ্ছে৷ এয়ারলাইনস অ্যাসোসিয়েশন আগেভাগে যাত্রীদের তালিকা পাঠাচ্ছে, কিন্তু তাঁরা তৃতীয় কোনো দেশ ঘুরে আসছেন কি না, সে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না৷''
বাংলাদেশে কোন দেশ থেকে কখন কে কীভাবে ঢুকে পড়ছে – তা যদি সত্যিই বলা যেতো তাহলে হয়তো কয়েকদিন আগে ঢাকার উত্তরায় স্কুলছাত্র জুবায়ের আহমেদকে প্রাণ দিতে হতো না৷ বয়স মাত্র ১৭৷ গত ৪ অক্টোবর ছেলেটি উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের মাঠে ফুটবল খেলেছে৷ সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, খেলা শেষে ছেলেটি ইসমাইল নামের আরেক কিশোর এবং আবু ওবায়েদ নামের এক বিদেশির সঙ্গে মাঠের পাশের পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে৷ একটু বিশ্রামের পর জুবায়ের গায়ের জার্সি খুলে পুকুরে নামে৷ সঙ্গে সঙ্গে ওবায়েদও নেমে পড়ে পানিতে৷ এক পর্যায়ে ওবায়েদ জুবায়েরকে জড়িয়ে ধরে এবং তার সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করে৷ শুরু হয় ধস্তাধস্তি৷ ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে জুবায়ের মারা যায়৷ মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ওবায়েদ পুকুরের পানিতে জুবায়েরের লাশ ডুবিয়ে ফেলে৷
হত্যারহস্য পুরোপুরি উদঘাটিত হয়েছে এমন দাবি এখনই করা যাবেনা৷ তবে বাংলাদেশ যে এখনো আত্মগোপনের জন্য আদর্শ জায়গা তা কিন্তু এ ঘটনা থেকেও বোঝা গেছে৷ সংবাদ মাধ্যমকে ডিবির (পশ্চিম) উপকমিশনারই বলেছেন, আবু ওবায়েদ ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে থাকলেও তাঁর কোনো পাসপোর্ট নেই৷আলজেরিয়া থেকে একজন যদি টুক করে ঢুকে পড়ে দশটি বছর নিশ্চিন্তে থাকতে পারে, তাহলে আফ্রিকার কোনো দেশ থেকে দু-একজন পাসপোর্ট নিয়ে আসতে পারবেনা – এমন দাবি করলেই হবে?
দাবি করা সহজ৷ সহজ কাজটি সরকার কৃতিত্বের সঙ্গেই করেছে৷ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি যদি সত্যিই ভালো হতো, তাহলে কি ইবোলা-আক্রান্ত দেশ লাইবেরিয়া থেকে আসা ৬ জন বাংলাদেশি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া দেশে ফিরতে পারতেন?
ইবোলা যে ডায়রিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগ নয় এটাও কি সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে বলতে হবে? একজন আবু ওবায়েদের চেয়ে একজন ইবোলায় সংক্রমিত মানুষ কিন্তু অনেক বেশি বিপজ্জনক৷ অস্বাভাবিক যৌনাচারে লিপ্ত হতে না পেরে আবু ওবায়েদ নৃশংস খুনীর মতোই হত্যা করেছে এক কিশোরকে৷ তবে ইবোলার রোগী না জেনে, না বুঝেই নীরবে কেড়ে নিতে পারে অসংখ্য মানুষের প্রাণ৷ বাংলাদেশ তা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই মঙ্গল৷