বাংলাদেশে ‘ড্রোন' ব্যবহার করে হামলার পরিকল্পনা!
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪
মঙ্গলবার রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকার একটি বাড়ি থেকে তানজিল হোসেন বাবু ও গোলাম মাওলা মোহন নামের ওই দুই যুবককে আটক করা হয়৷ গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, তারা জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য৷ তাদের কাছ থেকে দূর নিয়ন্ত্রিত ‘ড্রোন' বা কোয়াডকপ্টার তৈরির যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এর মধ্যে রয়েছে, ড্রোন তৈরির প্রজেক্ট, ড্রোন তৈরির সরঞ্জাম, বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও উগ্র মতবাদ সম্বলিত কয়েকটি বই৷''
মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘দূর নিয়ন্ত্রিত ড্রোনের সাহায্যে তারা ওপর থেকে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল৷ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ছয় মাস ধরে তারা ড্রোন তৈরির জন্য গবেষণা ও কার্যক্রম চালাচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, তারা নাকি ড্রোন তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল৷ আরও কিছু টেকনিকাল সাপোর্ট পেলেই তারা এটি তৈরি করতে পারত৷''
খেলনা হেলিকপ্টারের চেয়ে একটু উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা ড্রোনটি তৈরি করছিল বলে জানান মনিরুল ইসলাম৷ তাঁর কথায়, ‘‘২০-৩০ তলা উঁচু ভবনে হামলা চালানোর জন্য ড্রোনটি তৈরি করছিল জঙ্গিরা৷''
তাদের হামলার টার্গেট বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং ব্যক্তিরা ছিলেন – এ কথা জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার বলেন, ‘‘সেকুলার রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকেরা ছিলেন হামলার লক্ষ্য৷ এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা করে বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণের পরিকল্পনা ছিল তাদের৷''
মনিরুল ইসলাম জানান, আটক মোহন গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে পড়াশোনা করছিল৷ অন্যদিকে তানজিলের অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি না থাকলেও, সে টেকনিকাল দিকে থেকে পারদর্শী৷ এই দু'জন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা জসীম উদ্দিন রাহমানীর অনুসারী, বলেন মনিরুল ইসলাম৷
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নাম প্রথম আলোচনায় আসে গত বছর শেষ দিকে৷ আগস্ট মাসে বরগুনা থেকে এ সংগঠনের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ পরদিন ঢাকার মোহাম্মদপুরে জসীমের বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সিডিসহ উসকানিমূলক বই ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়৷ এই টিমের সদস্যরাই ব্লগার হত্যা এবং তাঁদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত৷
জসীমসহ এ সংগঠনের ১০ সদস্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় গত ১৬ই সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্রও দিয়েছে পুলিশ৷
গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ছানোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, আটক দু'জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷ জিজ্ঞাসাবাদে আরো বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে বলে তাঁর আশা৷
প্রসঙ্গত বাংলাদেশে জঙ্গিদের ‘ড্রোন' ব্যবহার করে হামলার পরিকল্পনার কথা এই প্রথম শোনা গেলেও, এর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দূর নিয়ন্ত্রিত ‘ড্রোন' বা কোয়াডকপ্টার তৈরিতে সফল হয়েছেন৷ এ নিয়ে ব্যাপক উত্সাহ দেখা দিলে নিরাপত্তার কথা ভেবে অনুমতি ছাড়া এটা তৈরি ও উড্ডয়নে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়৷
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এ ধরনের ‘পরীক্ষামূলক ড্রোন বা রিমোট কন্ট্রোল চালিত বিমান অথবা হেলিকপ্টার' ওড়ানোর আগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও বিমান বাহিনীর অনুমোদন নেয়া আবশ্যক৷