1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে নিউজ ওয়েবসাইট বন্ধ করছে কারা?

২৫ মে ২০১৯

বাংলাদেশে সম্প্রতি দু’টি নিউজ ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হলেও কারা বন্ধ করছে এবং কী কারণে বন্ধ করছে তা কিছুই জানা যাচ্ছেনা৷ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনও (বিটিআরসি) কোনো জবাব দিতে পারছেনা৷ তাহলে বন্ধ করছে কারা?

https://p.dw.com/p/3J4bt
ফাইল ফটোছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

গত রবিবার সকাল ১১টার পর থেকে ৯ বছরের পুরনো নিউজ পোর্টাল পরিবর্তনডটকম-এ বাংলাদেশ থেকে অনেকেই ঢুকতে পারছেন না৷ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সুফিয়ান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের ডোমেইন ব্লক করা হয়েছে৷ আমরা এরপর বিটিআরসিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করে যাচ্ছি, কিন্তু কেউ কোনো সদুত্তর দিচ্ছেন না৷'' 

‘‘আমাদের ডোমেইন ব্লক করা হয়েছে’’

সুফিয়ান বলেন, ‘‘তবে, আমরা আমাদের সূত্র থেকে জানতে পেরেছি ‘‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ'' নামের একটি সংগঠনের বিজ্ঞাপন নিয়ে আমরা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করায় এই ঘটনাটি ঘটতে পারে৷ বিভিন্ন পত্রিকায় ওই সংগঠনের নামে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপন তাদের নয় বলে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা জানায়৷ আমরা এরপর একটি প্রতিবেদন করি ‘‘তাহলে বিজ্ঞাপনটি কারা দিয়েছে?'' শিরোনামে৷'' 

তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক হলো, কেন বন্ধ করা হলো, কারা বন্ধ করলেন তাও আমরা জানতে পারছিনা৷ আমাদের কোনো খবরের ব্যাপারে যে কারুর কোনো কথা থাকতে পারে৷ কোনো প্রতিবাদ বা ব্যাখ্যা থাকতে পারে৷ কিন্তু সেসব না জনিয়ে নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া সরাসরি স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ৷ আর এই স্বাধীনতা আমাদের সংবিধান দিয়েছে৷''

সুফিয়ান বলেন, ‘‘ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে করে দেয়ার পর আমরা কর্মীরাও কোনো হয়রানির মুখে পড়ি কিনা সেই আতঙ্কের মধ্যে আছি৷ আর ঈদের আগে আমাদের দেড় শতাধিক কর্মীর বেতন ভাতা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে৷''

বাংলা রিপোর্টও কি নিষিদ্ধ?

এদিকে, গত ২৩ এপ্রিল থেকে আরেকটি নিউজ পোর্টাল বিএনডটবাংলাডটরিপোর্ট-এ বাংলাদেশে প্রবেশ করা যাচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে৷ তবে, ডয়চে ভেলের কয়েকজন পাঠক ফেসবুকে জানিয়েছেন যে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাইটটিতে প্রবেশ করতে পারছেন৷ 

‘‘কেউই বলতে পারছেন না কারা বন্ধ করেছেন’’

বাংলা রিপোর্ট সম্পাদক রফিকুল রঞ্জু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২১ ও ২২ এপ্রিল সোনারগাঁও হোটেলে বিপিও সামিট হয়৷ টাঙ্গাইল থেকে একজন প্রতিবন্ধী হুইল চেয়ারে করে ওই সামিট-এ যোগ দিতে এসেছিলেন৷ তিনি আইটিনির্ভর কিছু করতে চান৷ সেজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সাথে দেখা করে কথা বলতে চেয়েছিলেন সহযোগিতার জন্য৷ কিন্তু সেটা তিনি পারেননি৷''

তিনি বলেন, ‘‘এই নিয়ে আমরা ২২ এপ্রিল রাত সোয়া ১১টার দিকে ভিডিওসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করি৷ যার শিরোনাম ছিল ‘‘হতাশা নিয়ে ফিরে গেলেন কামরুল''৷ এই সংবাদ প্রকাশের কয়েকঘণ্টা পরই আমাদের পোর্টালটি বন্ধ হয়ে যায়৷ আমরা মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি৷ বিটিআরসিসহ সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি৷ কিন্তু কেউই বলতে পারছেন না কারা বন্ধ করেছেন৷''

রঞ্জু বলেন, ‘‘আমরা সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছি৷ তারাও চেষ্টা করেছেন নানা দিক দিয়ে যাতে সাইটটি চালু হয়৷ কিন্তু হয়নি৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনো আইন লঙ্ঘন করিনি৷ আমরা সংবিধান ও আইন মেনেই কাজ করছি৷ তারপরেও আমাদের পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হলো৷ আর কিভাবে কারা দিলো, কেন দিলো তাও বলা হচ্ছেনা৷ আমার দাবি হচ্ছে সরকার ও তথ্যমন্ত্রণালয়ের এই বিষয়গুলো পরিস্কার করা উচিত৷ আমরা অন্ধকারে আছি৷'' 

‘‘আমাদের ছাড়াও ওয়েবসাইট বন্ধ করা যায়’’

তাঁর মতে, বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম, বিশেষ করে অনলাইন চাপের মুখে আছে৷ আর আবু সুফিয়ান বলেন, ‘‘পোর্টালগুলো বন্ধ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গুরুত্ব দিয়ে খবর প্রকাশ করলেও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে তেমন গুরুত্ব দিয়ে খবর প্রকাশ হয়না৷ এথেকে সংবাদমাধ্যমের ওপর চাপের বিষয়টি বোঝা যায়৷''

এদিকে, শনিবার বিটিআরসিতে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট কারো বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে ইন্টারন্টে সার্ভিস প্রোভাইডার এসাসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই দু'টি নিউজ পোর্টাল বন্ধে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা ছিলনা৷ আমরা বন্ধও করিনি৷ তবে এখন নানাভাবে আমাদের ছাড়াও ওয়েবসাইট বন্ধ করা যায়৷ এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকম্যুনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) সবগুলো আইআইজিতে (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) তাদের নিজস্ব মনিটরিং ডিভাইস বসিয়েছে৷ তবে তারা বন্ধ করেছে কিনা তা আমরা বলতে পারবনা৷''

তিনি বলেন, ‘‘আরো কয়েকজন সাংবাদিক এর আগে জানতে চাওয়ায় আমি নিজেও বিটিআরসিতে ফোন করেছিলাম বিষয়টি জানতে৷ আসলে তারাও কিছু জানেনা৷''

‘স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ'

এদিকে, এই পরিস্থিতিকে সাংবাদিক নেতারাও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ বা চাপ হিসেবে দেখছেন৷ বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিউজ পোর্টালগুলো বন্ধ করা হয়নি৷ পুরো বিষয়টিই অস্বচ্ছ এবং রহস্যাবৃত৷ এই আমাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বড় ধরনের অন্তরায় সৃষ্টি করছে৷'' 

‘‘পুরো বিষয়টিই অস্বচ্ছ এবং রহস্যাবৃত’’

তিনি বলেন, ‘‘সরকার এটার জন্য কতটা দায়ী সেটা বিশ্লেষণে যাওয়ার আগে আমি বলবো বিষয়গুলো জানার পরে সরকারের ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷ কারণ গণতন্ত্রিক সরকারের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি বিষয়৷ যদি কোনো অদৃশ্য কারণে গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যায় আমরা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি সেটা গণতন্ত্রের জন্য, সরকারের জন্য বা গণমাধ্যমের জন্য কোনো শুভ খবর নয়৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ঈদের আগে এভাবে গণমাধ্যম বন্ধ হওয়া অমানবিক৷ কোনো অদৃশ্য হাতের ইশারায় যদি গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত হয়, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়৷ তবে সংবাদ মাধ্যমকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে৷''