মাটিবিহীন চাষাবাদ
৭ অক্টোবর ২০১২গোপালগঞ্জের একটি গ্রাম বৈকান্তপুর৷ একসময় সেখানকার উন্নতমানের ধানের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে যেতেন সেখানে৷
কিন্তু এখন দিন বদলেছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক বছর ধরে বন্যার কারণে ঐ গ্রামটি এখন প্রায় সারা বছরই পানির নীচে থাকছে৷ ফলে সম্ভব হচ্ছে না ধান চাষ৷ তাই বিপদে পড়েছিলেন সেখানকার মানুষ৷
তবে সেই বিপদ এখন কেটে গেছে৷ কারণ চাষীরা পানির উপরেই চাষাবাদ শুরু করেছেন৷ তবে সেটা ধান নয়, সবজি আর মসলা৷ তবে তাতে কোনো সমস্যা অনুভব করছেন না সেখানকার কৃষকরা৷ কেননা ধান উৎপাদন করে যে রোজগার হতো তাদের সবজি আর মসলা চাষের কারণে তার চেয়ে বরং একটু বেশিই আয় করছেন তারা৷
এমন কথাই জানালেন প্রায় ৯০০ হিন্দু পরিবারের গ্রাম বৈকান্তপুরের দুই কৃষক ভাই বিজয় কুমার সেন আর ধীরেন চন্দ্র সেন৷ ঐ গ্রামের আরেক কৃষক কার্তিক মন্ডল সেন, যার বয়স এখন ৭৮, তিনি জানালেন আগে বৈকান্তপুরের যতদূর পর্যন্ত চোখ যেত শুধু ধানের খেত দেখা যেত৷ কিন্তু গত ৫০ বছর ধরে নিয়মিত বন্যার কারণে এখন শুধু পানি দেখা যায়৷
এই অবস্থায় গ্রামবাসীকে একটি নতুন ধরনের চাষাবাদ পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন বেসরকারি সংস্থা ‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ' বিসিএএস'এর কর্মীরা৷ সেটা হচ্ছে ‘মাটিবিহীন চাষাবাদ'৷ বিষয়টা এরকম - পানির উপর কচুরিপানা দিয়ে ‘বায়রা' বা ভাসমান বেড তৈরি করে সেখানে ফসল উৎপাদন৷ যেটাকে ‘হাইড্রোপনিক ফার্মিং' বলা হয়৷ অনেক অঞ্চলে স্থানীয় ভাষায় বায়রাকে ‘ধাপ'ও বলা হয়৷ পানিতে ভাসমান এই বায়রাতে কচুরিপানা ছাড়াও ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন জাতের জলজ লতা-গুল্ম৷
এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের সুবিধা হলো এতে কোনো সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন পড়ে না৷ ফলে কম খরচে ফসল উৎপাদন করা যায়৷ স্বরবতী সেন নামের এক কৃষক বলছেন, এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসল তারা গ্রামের হাটে বিক্রি করেন৷ উৎপাদন খরচ কম পড়ায় জমিতে চাষ করা ফসলের চেয়ে তারা নিজেদের উৎপাদিত ফসল কম দামে বিক্রি করতে পারেন৷
তবে শুরুতে যখন বিসিএএস সংস্থার কর্মীরা বৈকান্তপুরের কৃষকদের নতুন পদ্ধতির কথা জানিয়েছিলেন তখন তারা রাজি হচ্ছিলেন না৷ সংস্থার এক কর্মী প্রণব সাহা বার্তা সংস্থা আইপিএস'কে জানান, ‘‘শুরুতে কৃষকদের নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে বোঝাতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে৷ তবে এখন তারা সবাই খুশি৷''
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান বলেন, ‘‘গত কয়েক শতক ধরেই আসলে এই পদ্ধতির অস্তিত্ব রয়েছে৷ আমরা যেটা করছি সেটা হচ্ছে কৃষকদের এ সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করা৷ এবং তাদেরকে এই পদ্ধতিতে উৎসাহিত করা৷''
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ প্ল্যান্ট ট্যাক্সোনোমিস্ট এর মহাসচিব হাসিব মো: ইরফানুল্লাহ বলছেন, ভাসমান চাষাবাদ পদ্ধতি বৈকান্তপুরের মানুষের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে৷ এর ফলে তারা এখন ভালভাবে জীবনধারণ করতে পারছেন৷
ভাসমান পদ্ধতিতে বৈকান্তপুরের কৃষকরা সিম, মুলা, গাজর, কুমড়া, পালং শাক ছাড়াও আদা, রসুন, হলুদ ইত্যাদি উৎপাদন করছে৷
জেডএইচ / এএইচ (আইপিএস)