1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে পরমাণু সরঞ্জাম সরবরাহে আগ্রহী ভারত

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ জুন ২০১৮

বাংলাদেশের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি ও জ্বালানি সরবরাহের সুযোগ আশা করছে ভারত৷ এজন্য ‘নিউক্লিয়ার সাপ্লাই গ্রুপ' (এনএসজি)-র সদস্য হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটি৷ 

https://p.dw.com/p/2zHQw

Russlands Novovoronezh-Werk, Schwesterprojekt zum ersten Kernkraftwerk der Türkei
ছবি: picture-alliance/dpa/AA/N. Shvetsov

গত ১ মার্চ  রূপপুর কেন্দ্রে যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও পরামর্শ সেবাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ, রাশিয়া ও ভারত একটি ত্রি-পক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে৷ এই সমঝোতা চুক্তির আওতায় রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহযোগিতা করবে ভারতের নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন (এনপিসিআইএল)৷ চুক্তি অনুসারে ভারত এই প্রকল্পে বিশেষজ্ঞ সেবা ও পরামর্শ দেবে৷ ভারতীয় কোম্পানিগুলো নির্মাণ কাজে যুক্ত হতে পারবে৷ এছাড়া বয়লারসহ বিভিন্ন ধরনের অপারমাণবিক যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী সরবরাহ করবে৷

রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকা ও মস্কোর মধ্যে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে রশিয়ার অ্যাটমসট্রয় এক্সপোর্ট৷

এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের অক্টোবরে এবং দ্বিতীয় ইউনিট তার পরের বছর চালু হ্ওয়ার কথা রয়েছে৷ ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি'র এক খবরে বলা হয়েছে, ‘‘এই চুক্তির ফলে প্রকল্পটি ভারতের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে৷ বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি ও জ্বালানি সরবরাহের সুযোগ পাবে ভারত৷ ভারতীয় পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি ও জ্বালানি আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির জন্য ‘নিউক্লিয়ার সাপ্লাই গ্রুপ' (এনএসজি)-র সদস্য হতে হয়৷ ভারতের এনএসজি সদস্যপদ নেই৷ বাংলাদেশ-ভারত-রাশিয়া ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ফলে তারা এনএসজি গ্রুপের সদস্য হতে পারবে বলে আশা করছে৷

‘‘আমরা তাদের সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চাই‘‘

এনডিটিভি জানায়, বাংলাদেশের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পারমাণবিক চুল্লি কেনা হচ্ছে রাশিয়ার কাছ থেকে৷ ভারতের তামিলনাড়ুর কুদানকুলামে চালু থাকা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তিটির সঙ্গে রাশিয়ার চুল্লিটির প্রযুক্তিগত মিল অনেক৷ তাই বাংলাদেশ ও ভারত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এক সঙ্গে কাজ করছে৷ বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করার জন্য নির্ধারিত প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ভারতের সহযোগিতায়৷ সব কিছু ঠিকঠাক চললে ভারত আশা করে, তারা বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে উপকরণ সরবরাহের সুযোগ পাবে৷

বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব এম আনোয়ার হোসেন এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘‘আমারা রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছি৷ এর আগে আমরা ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছি৷ ভারত ভিভিইআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে৷ তাদের এ বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞতা৷ বাংলাদেশ যেহেতু পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবীন, সেহেতু আমরা তাদের সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চাই৷'' রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ ভারতে বিদ্যুৎ রফতানি করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন এখনো বাংলাদেশের সেরকম কোনও পরিকল্পনা নেই, কারণ, ‘‘বাংলাদেশের নিজের চাহিদাই অনেক বেশি৷''

তবে এম আনোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ভারতের কাছ থেকে কোনো পারমাণবিক যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি বা জ্বালানি আমদানির কোনো চুক্তি হয়নি বাংলাদেশের৷ ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় প্রয়োজন হলে আমরা শুধুমাত্র পরামর্শ সহায়তা নেবো ভারত থেকে, প্রয়োজন না হলে নয়৷ এর বেশি কিছু নয়৷ ভারত থেকে পারমাণবিক যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি বা জ্বালানি আনার কোনো পরিকল্পনাও নেই বাংলাদেশের৷ ভারতও কোনো প্রস্তাব  দেয়নি৷''

‘‘ব্যয়ের স্বচ্ছতা থাকবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে‘‘

আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান সোমবার সংবাদ মাধ্যমকে  বলেন,  ‘‘ভারত, রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে৷ চুক্তির আওতায় ভারত আমাদের কারিগরি সহায়তা দেবে৷ ভারতের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করার কোনও আগ্রহ আমাদের নেই৷ আমাদের প্রচুর বিদ্যুৎ দরকার৷''

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম ইমামুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যয় এরইমধ্যে তিন-চার গুণ বেড়ে গেছে৷ ফলে এই প্রকল্প যে লাভজনক হবে না সেটা স্পষ্ট৷ সরকার এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে৷ এখন বাংলাদেশ, রাশিয়া ও ভারত যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করেছে, তাতে বাংলাদেশ একটা পাঁকের মধ্যে পড়ে গেছে৷ এখানে ব্যয়ের স্বচ্ছতা থাকবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ আর ভারত এখন স্বাভাবিকভাবেই চাইবে এখান থেকে কিছু ব্যবসায়িক সুবিধা নিতে৷ নির্মাণ পর্যায় পর্যন্ত এই ব্যবসা চলবে৷''

তবে তাঁর আশঙ্কা, ‘‘নির্মাণ শেষ হওয়ার পর দেখা যাবে এর পরিচালনা ব্যয় অনেক বেশি৷ তখন দেখা যাবে এটা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে৷''