প্রশ্নের মুখে সাংবাদিকতা
২০ জুলাই ২০১৩প্রশ্নটি উঠছিল গত এক বছর ধরেই৷ তবে গত ছয় মাস ধরে বিষয়টি আরো বেশি করে আলোচিত হচ্ছে৷ প্রশ্ন হলো, কিভাবে সাংবাদিকরা নিয়মিতভাবে হরতালের সময় গাড়ি পোড়ানোসহ নাশকতার নিখুঁত চিত্রগুলি পাচ্ছেন? পেট্রোল বোমা নিয়ে হেঁটে যাওয়া থেকে শুরু করে গাড়ি থামানো, আগুন ধরানো এবং তা পুড়ে যাওয়া – কোনো কিছু বাদ যায় না৷ আর জামায়াতের ডাকা হরতালে পিকেটারদের এমনিতে চোখে না পড়লেও বেসরকারি টেলিভিশনের খবরে তাদের নাশকতার নিখুঁত চিত্র পাওয়া যায়৷
টেলিভিশনে এ ধরনের ঘটনার খবর সংগ্রহ করা কয়েকজন সাংবাদিক স্বীকার করেন যে এ ব্যাপারে তাঁদের আগে থেকেই খবর দেয়া হয়৷ শুধু তাই নয়, সে সব সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে না যাওয়ায় পর্যন্ত পিকেটাররা নাশকতার ঘটনা ঘটায় না৷ এমনকি যদি ক্যামেরা না যায়, তাহলে নাশকতার ঘটনা ঘটানো পর্যন্ত হয় না৷ শুধু টেলিভিশন নয়, পত্রিকার ফটো সাংবাদিকদেরও নাকি নাশকতা সম্পর্কে আগে থেকেই খবর দেয়া হয়৷ বৈশাখী টেলিভিশনের সিনিয়র বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, বিষয়টি তাঁদের নজরেও এসেছে৷ তবে সবাইকে যে খবর দেয়া হয়, তা নয়৷ নাশকতা সৃষ্টিকারীরা তাদের বিশ্বস্ত সাংবাদিকদের খবর দেয়৷ আর সেই সাংবাদিকদের ধারণ করা ফুটেজ অথবা ছবিই পরে ধার করে নেন অন্যরা৷ এভাবেই চলছে৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁদের কাছে প্রমাণ আছে যে সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে যাওয়ার পর নাশকতার কাজ শুরু হয়৷ তাঁদের সঙ্গে নাকি আগে থেকেই যোগাযোগ করে জানানো হয়, কোথায় এবং কখন নাশকতা করা হবে৷ শুধু তাই নয়, পুলিশ টের পেয়ে যাওয়ায় সমঝোতার ভিত্তিতে নাশকতার স্থানও পরিকর্তন করা হয় অনেক সময়৷ তাই হরতালে পুলিশ এখন সাংবাদিকদের, বিশেষ করে টেলিভিশন সাংবদিকদের অনুসরণ করেন৷ তাতে পুলিশ সুফলও পায়, জানান মনিরুল ইসলাম জানান৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টেলিভিশন সাংবাদিকতা' বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, সাংবাদিকতার এই প্রবণতা গ্রহণযোগ্য নয়৷ এটা অপরাধীদের সঙ্গে এক ধরনের সহযোগিতা৷ কোনো ঘটনা পেয়ে গেলে তা ধারণ করা সাংবাদিকতা৷ কিন্তু কেউ যদি কোনো সাংবাদিককে খবর দিয়ে কাউকে হত্যা করে আর সেই সাংবাদিক যদি পুলিশকে খবর না দিয়ে হত্যাকাণ্ডের ফুটেজ ধারণ ও প্রচার করেন, তা কোনো বিবেচনাতেই সাংবাদিকতা হতে পারে না৷ সাংবাদিকদের এ থেকে বিরত থাকা উচিত৷ নয়ত যাঁরা এর সঙ্গে যুক্ত তাঁরা অইনি ব্যবস্থার মুখে পড়তে পারেন৷
বৈশাখী টেলিভিশনের সিনিয়র বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকতার এই প্রবণতা সবাইকে মিলে বন্ধ করতে হবে৷ কারণ প্রতিযোগিতার এই সময় কোনো একক প্রতিষ্ঠান তা করতে পারবে না৷ তিনি মনে করেন, এই প্রবণতা বন্ধে সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিক সংগঠনগুলোরও সোচ্চার হওয়ায় প্রয়োজন৷ তিনি জানান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর এই প্রবণতা শুরু হয়েছে৷ অনেক সময় নাশকতা যারা করে, তারাই আবার তা ক্যামেরায় ধারণ করে পাঠিয়ে দেয়৷ আর কোনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেল তা নিজস্ব ফুটেজ হিসেবে প্রচারও করে৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামের কথায়, তাঁরা সাংবাদিকদের অনুরোধ করছেন তাঁরা যেন কোনোভাবেই কোনো অপরাধীর সহায়ক শক্তিতে পরিণত না হন৷ কেউ যদি সে রকমটা করেন এবং তার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে, বলেন মনিরুল ইসলাম৷