বাকস্বাধীনতার উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ
১২ অক্টোবর ২০১৫বাংলাদেশে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে গণমাধ্যমে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে৷ সরকারের বিপক্ষে যেতে পারে বা বেকায়দায় পড়তে পারে, এমন প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে ভালো রকমের রাখঢাক দেখা যাচ্ছে৷ অনেক পত্রিকাই নিজেদের উপর এক ধরনের ‘স্বআরোপিত' সেন্সরশিপ বজায় রাখছে৷ তবে দৈনিক ‘প্রথম আলো' এবং ‘দ্য ডেইলি স্টার' এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম৷ আগস্টের শেষের দিকে ফেসবুকে অনেকে লিখতে শুরু করলেন, পত্রিকা দু'টিতে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে বহুজাতিক বিভিন্ন সংস্থা৷ এটা সত্য নাকি গুজব তা নিয়ে ঢাকার কোনো পত্রিকা প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি৷ খোদ আলোচিত পত্রিকা দু'টোও চুপ থেকেছে৷
গুজবের শুরুতে বলা হয়েছিল, সরকারের চাপের কারণে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো পত্রিকা দু'টিতে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে না৷ কেননা বিজ্ঞাপন দিলে তাদেরকে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলবে ক্ষমতাসীনরা৷ তবে এখন দেখা যাচ্ছে, ঠিক সরকার নয়, চাপটা সৃষ্টি করেছে সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই৷ কেননা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন তাদের মনঃপুত হয়নি৷ তাই এই অলিখিত নিষেধাজ্ঞা, যা আরোপ করায় রাতারাতি প্রায় ৩৫ শতাংশ বিজ্ঞাপন হারিয়েছে প্রথম আলো৷
ডিজিএফআই নিজেদের কাজের পরিধি নিজেরাই ঠিক করে থাকে৷ আর এটা নিয়ে কাউকে কখনো প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়নি৷ অতীতে বহুবার সংস্থাটি রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে৷ বিশেষ করে ২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সময়ে সাংবাদিকদের নির্যাতন এবং গণমাধ্যমকে কড়া নিয়ন্ত্রণে রাখার অভিযোগও রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটির বিরুদ্ধে৷ সেসময় বাংলাদেশে কার্যত সামরিক শাসন চলছিল৷
বর্তমান নির্বাচিত সরকারের সময়েও গোয়েন্দা সংস্থাটি যে গণমাধ্যমের উপর নিজেদের কর্তৃত্ব জাহিরের চেষ্টা করবে না, তা বলা যায় না৷ আর সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতাসীনরা সবসময়ই সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে৷ বর্তমান সরকার এক্ষেত্রে অতীতের সকল সরকার এবং রাজনৈতিক দলকে ছাড়িয়ে গেছে, সেকথা কিছুদিন আগেই লিখেছিল লন্ডনের ফাইনেন্সিয়াল টাইমস৷
যাহোক, গণমাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপের বিষয়টি খোলসা করে দিয়েছে গ্রামীণ ফোন৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বহুজাতিক সংস্থাটি স্বীকার করেছে, চাপে পড়েই বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দু'টি পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে তারা৷ শুধু তারা নয়, আরো অনেকে এমন চাপে পড়েছে, সেকথাও জানিয়েছে সংস্থাটি৷ আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের উপর সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার ন্যাক্কারজনক হস্তক্ষেপের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে৷ যদিও তারা সেটা স্বীকার করে না৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্রগুলো কিন্তু এখনো এই বিষয়টি নিয়ে চুপ আছে৷ সাংবাদিকরা আনুষ্ঠানিকভাবে এই নিয়ে কথা বলতে চান না, পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে চান৷ ডিজিএফআই কতটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে, এটাও তার এক প্রমাণ৷
প্রিয় পাঠক, গণমাধ্যমের উপর কি গোয়েন্দা সংস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত? আপনার মতামত জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷