বাংলাদেশে বিজ্ঞান
২৭ মার্চ ২০১২আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, জগদীশ চন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু - বাঙালি এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের নাম উচ্চারণ করে ড. শমশের আলী চলে গেলেন অতীতে৷ কিন্তু যখন বর্তমানে ফিরলেন, দেখলেন গত ৪১ বছরে আসলে সে অর্থে বাংলাদেশে বিজ্ঞানের ততোটা উন্নতি হয়নি৷ তিনি বললেন, ব্যক্তিগতভাবে বিজ্ঞানীরা সাফল্য পেয়েছেন এবং অনেকক্ষেত্রে দেশের বাইরেও তাঁরা সম্মানিত হয়েছেন৷ কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনের অবস্থা পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারেনি বিজ্ঞান৷
এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ড. শমশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকেই সামনে নিয়ে এসেছেন৷ তিনি বলছেন, অতীতে যাঁরা সরকারে কাজ করেছেন এবং এখন যাঁরা করছেন তাঁরা কেউই বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও এর গুরুত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন না৷ ড. শমশের বলেন, বাংলাদেশের মতো ভারতেও দারিদ্রতা আছে৷ কিন্তু সেখানকার নেতারা বিজ্ঞানের উন্নয়নে বিশ্বাস করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারতে বিজ্ঞানীদের এক ধরণের ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক' দিয়ে বলা হয় এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে৷ সেজন্য যা যা প্রয়োজন দেয়া হবে৷ ফলে সেখানকার বিজ্ঞানীরা অনেক নতুন নতুন কৌশল বের করতে পারছেন৷''
জনগণের মাঝে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্য ইটালির একটি সংস্থা থেকে বিশেষ পুরস্কার লাভ করা ড. শমশের বলেন, ১৯৫৭ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে ‘স্পুটনিক' পাঠানোর প্রেক্ষিতে অ্যামেরিকা তৎক্ষনাৎ ঘোষণা দেয় যে, আগামী এক যুগের মধ্যে তারা চাঁদে মানুষ পাঠাবে৷ এবং এজন্য তারা গণিতের পুরো সিলেবাসটাই পরিবর্তন করে ফেলে৷ ফলাফল ঠিক এক যুগ পর ১৯৬৯ সালে ‘অ্যাপলো ১১'র চাঁদ অভিযান৷ এই উদাহরণ দিয়ে, টেলিভিশনে বিজ্ঞান বিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ড. শমশের বলেন, বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য সরকারের এধরণের মানসিকতা থাকা প্রয়োজন৷
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা বেশ সাফল্য দেখিয়েছে৷ তাঁরা নতুন নতুন জাত আবিষ্কার করায় খাদ্য উৎপাদন অনেক বেড়েছে৷ ফলে জনসংখ্যা দ্বিগুন হয়ে গেলেও খাদ্যের ঘাটতি হচ্ছে না৷ কিন্তু শিল্পক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি বলে জানান ড. শমশের৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশে যথেষ্ট শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি৷ ফলে বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করার পর শিক্ষার্থীরা অন্য কোনো ক্ষেত্রে চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছে৷ এজন্য তিনি ব্যবসায়ীদের দোষ দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে সে অর্থে কোনো ব্যবসায়ী নেই৷ তাঁরা আজ এক টাকা তো, কাল দুই টাকা - এভাবে শুধু লাভের পেছনে ছোটেন৷ কিন্তু গবেষণার পেছনে টাকা বিনিয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদে লাভের কথা ভাবেন না কোনো ব্যবসায়ী''৷
ড. শমশের বলেন, বিজ্ঞান চর্চার জন্য বাংলাদেশে বেশ ক'টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে৷ যেমন আণবিক শক্তি কমিশন, বিসিএসআইআর, পাট গবেষণা কেন্দ্র, মহাকাশ বিষয়ে গবেষণার জন্য আছে ‘স্পারসো'৷ কিন্তু সমস্যা হলো সেগুলোতে ভালো কোনো প্রকল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে না বা হতে পারছে না৷ কেননা সেখানে যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তার একটা বড় অংশই চলে যায় বেতন, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ এসব কাজে৷ ফলে গবেষণার জন্য খুব একটা টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয় না৷
বাংলাদেশের বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়েও কথা বলেন ড. শমশের৷ তিনি বলেন বিজ্ঞানের ক্লাস মানে শুধু লেকচার দেয়া নয়, সঙ্গে যন্ত্রপাতির মাধ্যমে কিছু দেখাতে না পারলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ জন্মাবেনা৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ