1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে কাঁরা ভিআইপি, তাঁরা কী সুবিধা পান?

১১ মার্চ ২০১৯

বাংলাদেশে ভিভিআইপি, ভিআইপি ও সিআইপি এই তিন ক্যাটেগরি বিশিষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের নিরাপত্তা ও বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়৷ এজন্য প্রশাসনের কাছে একটি রেডবুক আছে৷ রেডবুক অনুযায়ী ভিভিআইপি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী৷

https://p.dw.com/p/3EhrH
Bangladesch Straßenverkehr in Dhaka
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman

অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হলেন ভিভিআইপি (ভেরি ভেরি ইম্পর্টেন্ট পার্সন)৷ এর পরের ধাপে আছেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা, যাঁদের বলা হয় ভিআইপি (ভেরি ইম্পর্টেন্ট পার্সন)৷ আর ব্যবসা-বাণিজ্যে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তাঁদের বলা হয় ‘কমার্সিয়ালি ইম্পর্টেন্ট পার্সন' (সিআইপি)৷

প্রথম দুই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় নির্ধারিত হন৷ আর সিআইপি ঠিক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)৷

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, যেসব ব্যক্তি অবস্থান, দায়িত্ব ও মর্যাদার দিক দিয়ে বিশেষ গুরুত্ব বহন করেন এবং যাঁদের নিরাপত্তাহানি হলে দেশ ও জাতি গভীর সংকটে পতিত হয় তাঁদের ভিভিআইপি এবং ভিআইপি বলা হয়৷ বাংলাদেশের আইন অনুসারে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান ভিভিআইপি মর্যাদা ও নিরাপত্তা ভোগ করেন৷ তাছাড়া জাতির জনকের পরিবারের সদস্যদের বিশেষ নিরাপত্তা বিধানের আইন আছে৷

কাঁরা বিমানবন্দরে ভিভিআইপি ও ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে পারবেন৷ কাঁরা কোন ধরনের নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা পাবেন রাষ্ট্রীয়ভাবে তা সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট করা আছে৷

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ভিভিআইপি৷ আর ভিআইপি হলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, সিনিয়র সচিব, সচিব, তিনবাহিনী প্রধান, পুলিশের প্রধান৷ তবে সরকার প্রয়োজন অনুয়ায়ী অন্য কাউকে ভিআইপি মর্যাদা দিতে পারেন৷

পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত এসপি সুদিপ্ত সরকার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বিধি অনুযায়ী তাঁরা প্রটোকল, নিরাপত্তা, গার্ড, গানম্যান পেয়ে থাকেন৷'' তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রী বলতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী সবাইকে বোঝায়৷ বিচারপতি বলতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট দুই বিভাগের বিচারপতিরাই ভিআইপি৷ আর সচিব বলতে সচিব পদমর্যাদার সবাইকে বোঝায়৷''

‘মন্ত্রী বলতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী সবাইকে বোঝায়’

বাংলাদেশে পুলিশের দুই বিভাগ থেকে ভিআইপিদের নিরাপত্তা দেয়া হয়৷ একটি হলো পুলিশের প্রটেকশন টিম৷ আরেকটি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ৷ এছাড়া বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তায় আছে চ্যান্সারি পুলিশ৷

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গার্ড রেজিমেন্ট আছে৷ রাষ্ট্রপতির জন্য আছে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট৷ আর প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় আছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)৷ এরসঙ্গে পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার টিমও কাজ করে৷ পুলিশের সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নও এই নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত৷

সড়কে ভিভিআইপি এবং ভিআইপি

বাংলাদেশের কোনো সড়কেই কোনো ভিআইপি'র জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থাপনা থাকার কথা নয়৷ বিধি অনুযায়ী তাঁদের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল থাকবে৷ কিন্তু তাঁদের চলাচলের জন্য কোনো সড়ক বন্ধ বা অন্য কোনো যানবাহনের চলাচল বাধাগ্রস্ত করা যাবেনা৷ তাঁরা কোনো অগ্রাধিকারও পাবেন না৷ উলটো পথে চলা বা অন্য গাড়ি সরিয়ে চলাচলের কোনো সুযোগ নেই কোনো ভিআইপির৷

শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় সড়কের একপাশ খালি করে চলাচলের বিধান আছে৷ ভিভিআইপিদের যাতায়াতের নির্দিষ্ট সড়কটির এক পাশ ফাঁকা করে দেয়া হয়৷ সেখানে সাধারণ যান চলাচল বন্ধ করা হয়৷ তাঁদের মুভমেন্টের ১৫ মিনিট আগে এ সম্পর্কিত তথ্য এসএসএফকে জানায় ট্রাফিক বিভাগ৷ আর এসএসএফও আগে বিষয়টি জানায় ট্রাফিক বিভাগকে৷

‘রেডবুক অনুযায়ী ব্যবস্থা নিই’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিরাপত্তা প্রটোকলের রেডবুক আছে৷ আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিই৷ বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া চলাচলের সময় রাস্তার একপাশ ফাঁকা করে নিরাপত্তা দেয়ার বিধান আর কারুর ক্ষেত্রে নেই৷ আর বিদেশি রাষ্ট্রীয় মেহমানদের বেলায় সরকার কেস টু কেস সিদ্ধান্ত নেয়৷ আমরা তা অনুসরণ করি৷ কোনো বাংলাদেশি ভিআইপি এই সুবিধা পাবেন না৷ তাঁরা সাধারণ নিয়মেই চলাচল করবেন৷''

জানা গেছে, সাইরেন বাজিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে কোনো ভিআইপির সড়কে চলাচল অনুমোদিত নয়৷ মন্ত্রী পদমর্যাদার কেউ সড়কে চলাচলের সময় শুধু পুলিশি নিরাপত্তা পান, এর বেশি কিছু নয়

গতবছর ভিআইপিদের চলাচলের জন্য ঢাকা সড়কে আলাদা সার্ভিস লেন করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল মন্ত্রিসভায়৷ এই সার্ভিস লেন দিয়ে ভিআইপি ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের কথা বলা হয়েছিল৷ কিন্তু ব্যাপক সমালোচনার মুখে তা বাস্তবায়িত হয়নি৷

গানম্যান-বডিগার্ড

ভিআইপিরা তাঁদের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান ও বডিগার্ড পেয়ে থাকেন৷ তবে থ্রেট বিবেচনা করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এর বাইরেও কোনো ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য গানম্যান বা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে৷ আবার অনুমোদন পেলে কেউ নিজস্ব খরচে গানম্যান বা বডিগার্ডের বিকল্প উপায়ের ব্যবস্থা করতে পারেন৷ তবে এক্ষেত্রে থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন লাগে৷ একই বিবেচনায় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সও দেয়া হয়৷

যেমন নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে অধ্যাপক জাফর ইকবালের নিরাপত্তার দায়িত্বে মোট ৩৬ জন পুলিশ রয়েছেন৷ তাঁরা পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন৷ তাঁর বাসা, কর্মস্থল সবখানেই নিরাপত্তা দেয়া হয়৷ তিনি বাইরে গেলেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে৷ ওই টিমে একজন গানম্যানও আছেন৷

পুলিশ কর্মকর্তরা জানান, কেউ গানম্যান চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে ‘থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট' করা হয়৷ আর এই থ্রেট অ্যাসেসমেন্টের দায়িত্ব পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি)৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা জাফর ইকবালের ওপর সিলেটে হামলার পর ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছিলেন, ‘‘আমরা থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান, তাঁর ঝুঁকি কতটুকু, তাঁর ব্যক্তিগত ট্র্যাক রেকর্ড এসব খতিয়ে দেখি৷ আমাদের তদন্তে যদি মনে হয় তাঁর বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে, তাহলে আমরা গানম্যান বা পুলিশি নিরাপত্তা দেয়ার সুপারিশ করি৷ এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ সদরদপ্তরের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়৷ এই নিরাপত্তার খরচ পুরোটাই সরকার বহন করে৷ আর প্রয়োজন অনুযায়ী, গানম্যান ছাড়াও ওই ব্যক্তি যখন চলাফেরা করেন, তখনো আলাদা নিরাপত্তা দেয়া হয়৷''

‘নিরাপত্তায় পুলিশ ছাড়াও আরো সংস্থা কাজ করে’

প্রাইভেট গানম্যানের বিধান নেই

ওই কর্মকর্তা তখন আরো জানান, ‘‘প্রাইভেটভাবে গানম্যান রাখার বিধান নেই৷ তবে কেউ যদি সন্তুষ্ট করতে পারেন, তাকে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়৷ আর ওই আগ্নেয়াস্ত্র পরিচালনা বা বহন করা ব্যক্তিদেরও অনুমোদন দেয়া হয়৷ তখন যাঁরা ধনী ব্যক্তি, তাঁরা নিজের খরচে নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেন৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তার জন্য গানম্যান সাদা পোশাকে দেয়া হয়, আবার প্রটেকশন ফোর্স থেকে পুলিশও দেয়া হয়৷ আর এই কাজে যাদের দেয়া হয়, তারা কনস্টেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) পর্যন্ত হতে পারেন৷ তাদের আগ্নেয়াস্ত্র পুলিশ বাহিনী থেকেই সরবরাহ করা হয়৷ গানম্যানদের ৩০ দিনের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে৷ আবেদন করলেই গানম্যান পাওয়া যাবেনা৷ সরকার যদি মনে করে কারুর নিরাপত্তা বিধান করা জরুরি, তখন নিজ উদ্যোগেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়৷''

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ছাড়াও আরো কয়েকটি সংস্থা কাজ করে৷ আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখি৷ আর বডিগার্ড ও গানম্যানের কারুর প্রয়োজন হলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিই৷ কারুর নিরাপত্তার প্রয়োজন হলেও আমরা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিই৷ এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়৷ এ নিয়ে বেশি কোনো তথ্য দেয়ার সুযোগ নেই৷''

ভিআইপি নিরাপত্তায় কত পুলিশ

বাংলাদেশে ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর একটি অংশকে নিয়োজিত থাকতে হয়৷ ভিভিআইপি এবং ভিআইপিদের চলাচলের সময়ও তাঁদের নিরাপত্তা দেখতে হয়৷ তাঁরা ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে গেলে তাঁদের সঙ্গে বিধি অনুযায়ী নিরাপত্তা টিম থাকে৷

পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দুই হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য ভিআইপিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন৷ আর ২২ হাজারের মতো পুলিশ সদস্য রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন৷

ভিআইপিদের ঢাকার বাইরে মুভমেন্টের কারণে গড়ে প্রতিদিন ১৫টি গাড়ি এবং ৯০ জন ফোর্সকে কাজ করতে হয়৷ পুলিশের সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নে ১৪শ'র মতো সদস্য আছেন৷

২০১৭ সালে ভিআইপিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশে ‘গার্ড অ্যান্ড প্রটেকশন পুলিশ' নামে বিশেষ ইউনিট করার প্রস্তাব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে৷ ওই প্রস্তাবে তখন তিন হাজারেরও বেশি সদস্য নিয়ে ইউনিটটি গঠন করার কথা বলা হয়৷ পুলিশ সদরদপ্তর ওই ইউনিট গঠন নিয়ে এখন কাজ করছে৷

বাংলাদেশে ভিআইপি সংস্কৃতি নিয়ে আপনার কিছু বলার আছে কি? লিখুন নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান