বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম চাপের মুখে আছে: অ্যামনেস্টি
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬এছাড়া তাদের প্রতিবেদনে ব্লগার হত্যা, প্রকাশকের ওপর হামলা, মৃত্যুদণ্ড, গুম, নারীর প্রতি সহিংসতা, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গ এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে৷
বুধবার প্রকাশিত অ্যামনেস্টির ২০১৫/১৬ সালের প্রতিবেদনে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে বিজ্ঞাপন বন্ধে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের তরফ থেকে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ তোলা হয়েছে৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘সরকারের সমালোচনা করা স্বাধীন গণমাধ্যমগুলো মারাত্মক চাপের মুখে রয়েছে৷ গত অক্টোবর মাসে সরকার কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তারা যেন দেশের শীর্ষ দুটি দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার-এ বিজ্ঞাপন না দেয়৷ বিজ্ঞাপন দিলে তারা শাস্তির মুখোমুখি হবে৷''
অ্যামনেস্টির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক পরিচালক চামপা প্যাটেল বলেন, ‘‘সম্পাদক মাহফুজ আনামের প্রতি যা হচ্ছে, তা বাংলাদেশে সামগ্রিক মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য ভীতিকর৷ মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো অগ্রগতি না হওয়ার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব অনেকাংশে দায়ী৷''
সংসদীয় কমিটিতে বাংলাদেশে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের নিবন্ধন বাতিল করার দাবি, সুশীল সমাজের ৪৯ প্রতিনিধির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলা, নভেম্বরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রাখা, ইসলামি জঙ্গিদের হাতে ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, নিলয় নীল ও অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা এবং অক্টোবরে লেখক-প্রকাশকদের ওপর হামলার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে অ্যামনেস্টির এই প্রতিবেদনে৷
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘...এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও ব্লগার-লেখকদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনেছেন৷ এর মধ্য দিয়ে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ওপর আঘাত এসেছে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়েছে৷''
প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া
অ্যামনেস্টির এই প্রতিবেদন বিষয়ে চেষ্টা করেও সরকার পক্ষের কোনো বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ভুঁইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র সেই মাত্রায় এখনো পৌঁছতে পারেনি যে, সংবাদমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে৷ বাক স্বাধীনতা অথবা মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখানে সার্বিকভাবে আছে৷ তবে এটাও ঠিক যে কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম পেশাদার না হয়ে রাজনৈতিক হওয়ায় তারা নিজেরাই নিজেদের হুমকির মুখে ফেলেছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘দায়িত্বশীল আচরণ সংবাদমাধ্যমকে অধিক স্বাধীনতা দেয়৷''
প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন বন্ধের নির্দেশ সংক্রান্ত অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অ্যামনেস্টির কাছে যদি এসংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ থাকে তাহলে বিষয়টি নিন্দনীয়৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো তথ্যপ্রমাণ আমার নজরে আসেনি৷''
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মামলা প্রসঙ্গে ড. আলম বলেন, ‘‘আইনি প্রতিকার পাওয়ার প্রশ্নে এখানে একটি মামলাই যথেষ্ট ছিল৷ অনেক মামলার কারণেই হয়রানির প্রশ্ন উঠছে৷ তবে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষেরতো মামলা করার অধিকার আছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মামলা না করলেও যারা করছেন তারাতো দলীয় নেতা-কর্মী৷ দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষতিকে নেতা-কর্মীরা নিজেদের ক্ষতি মনে করতেই পারে৷''