বাংলাদেশে ৯০ দিনে নির্বাচন নিশ্চিত করবে ভারত, আশা জয়ের
১৪ আগস্ট ২০২৪একটি ভিডিও সাক্ষাত্কারে জয় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, সরকারের প্রথম থেকেই কোটার বিরুদ্ধে কথা বলা উচিত ছিল৷
বুধবার প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সরকারের উচিত ছিল কোটার বিরুদ্ধে কথা বলা এবং বিষয়টি আদালতের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে শুরু থেকেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলা৷ আমাদের সরকার কোটা কমানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে৷ আদালত ভুল করেছে এবং আমরা কোটা চাই না বলে সবাইকে আশ্বস্ত করার সুপারিশ করেছিলাম৷ কিন্তু আমাদের সরকার সেটা শোনেনি এবং বিচার ব্যবস্থার ওপরই বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছে৷
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠার পেছনে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হাত ছিল বলে দাবি করেছেন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা জয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা এর পেছনে জড়িত ছিল৷ কারণ, ১৫ জুলাই থেকে অনেক আন্দোলনকারীর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল৷ গত ১৫ বছরে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আমাদের সফলতার কারণে বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া খুবই কঠিন৷ একমাত্র কোনো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাই বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার ও আন্দোলনকারীদের কাছে সরবরাহ করতে পারে৷''
৫ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে তার মায়ের চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার ঘটনা বর্ণনা করে জয় বলেন, একদিন আগেও তিনি বা শেখ হাসিনা কেউই ভাবেননি যে পরিস্থিতি এত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে৷ জয় বলেন, ‘‘মায়ের দেশ ছাড়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না৷ তিনি পদত্যাগ করতে যাচ্ছিলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন এবং জনগণের উদ্দেশে একটি ভিডিও বার্তায় এই ঘোষণা দেবেন৷ তিনি বিবৃতির খসড়া তৈরি করেছিলেন এবং সেটি রেকর্ড করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন৷ সবকিছু পরিকল্পিত ছিল৷ তিনি যখন রেকর্ডিং শুরু করতে যান, তখন বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বলেন, ‘‘ম্যাম, সময় নেই৷ আমাদের এখন যেতে হবে৷''
হাসিনা দেশ না ছাড়ার ব্যাপারে অনড় ছিলেন এবং তিনি তাকে রাজি করিয়েছেন দাবি করে জয় বলেন, ‘‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী তাকে সামরিক বিমানঘাঁটির মধ্যে একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়৷ সেখানে একটি হেলিকপ্টার প্রস্তুত ছিল৷ কিন্তু তিনি যেতে চাননি৷ তখনই আমার খালা (শেখ রেহানা) আমাকে ফোন করলেন৷ আমি মাকে বোঝালাম যে তোমার নিরাপত্তার জন্য তোমাকে চলে যেতে হবে৷ যদি এই জনতা তোমাকে খুঁজে পায়, কোথাও ধরে ফেলে এবং সেখানে গুলি চলে, তাহলে অনেক মানুষ মারা যাবে৷ হয় তোমাকে এই হত্যার জন্য দায় দেবে কিংবা যদি তোমাকে ধরে ফেলে তাহলে মেরে ফেলবে৷ তাই সবচেয়ে ভালো হবে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া এবং আমিই তাকে চলে যেতে রাজি করিয়েছি৷''
ভারতের প্রতি তার বার্তা কী হবে জানতে চাইলে জয় নয়াদিল্লিকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি আশা করব, ভারত নিশ্চিত করবে যে ৯০ দিনের সাংবিধানিক সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অরাজকতা বন্ধ হবে এবং আওয়ামী লীগকে প্রচারণা ও পুনর্গঠনের অনুমতি দেওয়া হবে৷ যদি সেটা নিশ্চিত করা হয়, আমি এখনও নিশ্চিত যে আমরা নির্বাচনে জয়ী হবো৷ আমরা এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় দল৷''
এদিকে, দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের সহায়তায় শান্ত অবস্থা ফেরানো ও নির্বাচন আয়োজনের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস৷ মঙ্গলবার একটি বিবৃতিতে বিশ্ব সংস্থার মহাসচিবের মুখপাত্রের কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে৷
অন্যদিকে, বাংলাদেশে গণবিক্ষোভের নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এমন দাবিকে ‘হাস্যকর' বলে নাকচ করেছে ওয়াশিংটন৷ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল গণমাধ্যমকে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এটা হাস্যকর৷ যুক্তরাষ্ট্র কোনো ভাবেই শেখ হাসিনার পদত্যাগের সঙ্গে জড়িত নয়, এটি মিথ্যে অভিযোগ৷''
আন্দোলনে গণহত্যা ও গুলিবর্ষণের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে: আসিফ নজরুল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় বিচারের জন্য ইতোমধ্যে কিছু মামলা হয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব ঘটনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল৷ বুধবার সকালে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি৷
তিনি বলেন, ‘‘১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন আছে, সেটা পরে ২০০৯ ও ২০১৩ সালে সংশোধনী হয়েছে৷ সেই আইনে আমরা জুলাই গণহত্যা; আগস্টের প্রথম পাঁচদিনের গণহত্যাও বোঝাচ্ছি৷ এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য ইতোমধ্যে ছোটখাটো গবেষণা করেছি৷ আমরা দেখেছি, এই আইনের অধীনে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি ও যারা আদেশ দিয়েছেন এবং যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি ইনভেস্টিগেশন টিম আছে, প্রসিকিউশন টিম আছে৷ এগুলোকে আমরা রিঅর্গানাইজড করার চেষ্টা করছি, আদালতটা একটু পরে করব৷ ইনভেস্টিগেশন আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করার চেষ্টা করছি৷ জাতিসংঘ থেকে বারবার আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে৷ বিচারের সত্যিকারের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের সর্বাত্মক তত্ত্বাবধানে আমাদের ইনভেস্টিগেশন টিম কাজ করবে৷ সেটার লক্ষ্যে সব উদ্যোগ গ্রহণ করব৷ ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে মিটিং করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তারিখ চূড়ান্ত হয়নি, সহযোগিতা চাইবো৷ এ ছাড়া, আমাদের আরও উচ্চ পর্যায় থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সংস্থা আছে, উনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে৷''
গণআন্দোলনে অংশ নেওয়ার ঘটনায় দায়ের মামলা প্রত্যাহার করা হবে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের পাসপোর্ট ইতোমধ্যে ফেরত দেওয়া হয়েছে৷ রোজিনা ইসলাম ও মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে দায়ের মামলা আগামীকালই প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ এই দুটি আলোচিত মিথ্যা মামলা ছিল জন্য উল্লেখ করলাম, আরও অনেক মামলাই প্রত্যাহার করা হবে৷'' সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে বলেও এ সময় আশ্বাস দেন তিনি৷ এছাড়া আরও কিছু পরিকল্পনার কথা জানান:
* আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশে-বিদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব জমার নির্দেশ৷
* ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন সংক্রান্ত মামলা ঢাকায় বৃহস্পতিবারের মধ্যে এবং সারা দেশে ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রত্যাহার৷
* আয়নাঘরে গুমের শিকার ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের আইসিটিতে আসার সুযোগ রয়েছে, সরকার সহযোগিতা করবে৷
* বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বিশেষ আইন দ্রুত বাতিল করা হবে৷
* নিবর্তনমূলক সব আইনের ধারা বাতিল বা সংশোধন করা হবে৷
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত বুধবার
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার বিষয়ে বুধবারই আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম৷ আজ বুধবার সকাল সোয়া ১০টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন৷
এপিবি/এসিবি (ডেইলি স্টার বাংলা)