বাংলাদেশের অস্ত্রবাহী বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে গ্রিস
১৮ জুলাই ২০২২গ্রিসের উত্তরাঞ্চলে বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষে বিপজ্জনক পদার্থ থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন গ্রিক বিশেষজ্ঞরা৷ তবে বিমানটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে তার আশেপাশে প্রচুর গোলা বারুদ পাওয়া গেছে৷ ফ্লাইটটিতে থাকা আট ক্রু সদস্যের সবাই মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছে সার্বিয়ায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়৷
এন-১২ কার্গো উড়োজাহাজটি সার্বিয়া থেকে যাত্রা করে শনিবার স্থানীয় সময় রাত এগারোটার কিছু আগে গ্রিসের কাভালা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে বিধ্বস্ত হয়৷ এর কিছুক্ষণ আগে পাইলট উড়োজাহাজটির একটি ইঞ্চিনে সমস্যার কথা জানিয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কাছে জরুরি অবতরণের অনুমতি চান৷ তাকে কাভালা বিমানবন্দরের দিকে যেতে বলা হলেও উড়োজাহাজটি সেদিকে এগোয়নি বলে জানিয়েছেন গ্রিসের কর্মকর্তারা৷
বিধ্বস্ত হওয়ার পর সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেবোয়শা স্টেফানোভিচ সাংবাদিকদের জানান, উড়োজাহাজটিতে সার্বিয়ার তৈরি বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কেনা ১১.৫ টন মর্টার গোলাবারুদ ছিল৷ সার্বিয়ার নিস শহর থেকে এটি যাত্রা করে এবং ঢাকার পথে জর্ডানের আম্মানে বিরতি দেয়ার কথা ছিল৷ স্টেফানোভিচ জানান, উড়োজাহাজে থাকা গোলাবারুদের মধ্যে মর্টার মাইন ও প্রশিক্ষণ মাইন ছিল৷ আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, ফ্লাইটটির জন্য প্রয়োজনীয় সব অনুমতি নেয়া ছিল বলেও জানান তিনি৷
উড়োজাহাজটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউক্রেনের একটি প্রতিষ্ঠান৷ আট ক্রু সদস্যের সবাইও ইউক্রেনেরই নাগরিক৷
গ্রিসের প্রতিবাদ
এদিকে গ্রিক কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে সামরিক সরঞ্জাম বহনকারী উড়োজাহাজটির বিষয়ে সার্বিয়া গ্রিসকে সময়মত অবহিত করেনি৷ এ নিয়ে নাখোশ দেশটি৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক কূটনীতিক সূত্র জানিয়েছে, ‘কার্গোর প্রকৃতি সম্পর্কে' না জানানোয় বেলগ্রেডের গ্রিক রাষ্ট্রদূত শিগগিরই তাদের অসন্তোষের কথা সার্বিয়ার কাছে তুলে ধরবে৷
এদিকে গ্রিসের বিরোধীদল এই ঘটনায় দেশটির সরকারের দায় দেখছে৷ সরকারের পক্ষ থেকে কার্গোটি সম্পর্কে যথাযথ তথ্য না দেয়ার অভিযোগ করেছে তারা৷ এই ঘটনার আরো বিস্তারিত তদন্তের দাবি তাদের৷
গ্রিসের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, একজন প্রসেকিউটর এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন৷ এর অংশ হিসেবে দুর্ঘটনার শিকারদের মরদেহ পরীক্ষা করা হবে৷
গোলাবারুদের বীমা ছিল: বাংলাদেশ
গ্রিসে বিধ্বস্ত কার্গো উড়োজাহাজে করে যে সামরিক রসদ বাংলাদেশে আসছিল, তা বীমার আওতায় থাকায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ৷ রোববার বিকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এই তথ্য জানিয়েছে বলে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে৷ তিনি বলেন, "এ ধরনের মালামালের বীমা করা থাকে৷ ওইদিক থেকে আমরা সেইফ আছি৷”
তবে কার্গোতে কত টাকার অস্ত্র ছিল সে বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘‘দাম, সেটা আমরা জানব আমাদের যারা এনেছেন তাদের কাছ থেকে৷ তবে, যেহেতু এটা ইন্সুরেন্স করা আছে, সুতরাং উই আর কভার্ড৷''
এদিকে বাংলাদেশের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর রোববার জানায়, ডিজিডিপি (ডাইরেক্টরেট জেনারেল অফ ডিফেন্স পারচেজ) ক্রয় চুক্তির আওতায় কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উড়োজাহাজটিতে সামরিক রসদ আনা হচ্ছিল৷
সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর জন্য কেনা ‘প্রশিক্ষণ মর্টার শেল' ছিল৷ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "ওই চালানে কোনো অস্ত্র ছিল না এবং চালানটি বীমার আওতাভুক্ত৷”
এফএস/কেএম (এপি, রয়টার্স, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)