ক্রিকেটে স্বপ্ন, সম্ভাবনার ৩০ বছর
১১ এপ্রিল ২০১৬বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোনো ভালো খবর পুরো জাতিকে যেমন উদ্বেলিত করে, তেমনি কোনো খারাপ খবরে মুষড়ে পড়েন দেশের মানুষ৷ দেশের প্রতিটি শিশুই আজ বড় হয়ে একজন ক্রিকেটার হতে চায়, হতে চায় সাকিব অথবা তামিম৷ এই আবেগ, ভালোবাসা, ভালোলাগা – যা ক্রিকেটের জন্য, তা নিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্ল কী? স্বপ্নটা অনেক বড়৷ স্বপ্নটা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতা৷ এটা কি এখনই সম্ভব? ক্রীড়া লেখক এবং সাংবাদিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমাদের আরো বাস্তবভিত্তিক হতে হবে৷ বুঝতে হবে আমাদের শক্তি সম্পর্কে৷ আর ভাবতে হবে বিশ্বকাপ জয়ে আমাদের আরও কী করা প্রয়োজন, তা নিয়ে৷''
বাংলাদেশ ক্রিকেটের যাত্রাটা ৩০ বছরের৷ আমাদের স্বাধীনতার চেয়েও অনেক কম বয়সি আমাদের ক্রিকেট৷ ১৯৮৬ সালের ৩১শে মার্চ পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ৷ এরপর ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের অভিষেক হয়৷ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জয়ের পরিসংখ্যান হলো শতকরা ৭.৫২ ভাগ৷ এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৯৩টি খেলায় জয় পেয়েছে মাত্র সাতটি, ড্র করেছে ১৫টিতে আর পরাজিত হয়েছে ৮১টি ম্যাচে৷
তবে ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশে টেস্টের চেয়ে অনেক বেশি সফল৷ ২০১৫ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সফলতা ছিল গর্ব করার মতো৷ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা, ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে ‘হোয়াইটওয়াশ' করা এবং ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল ‘টাইগাররা'৷
১৮টি ওয়ানডে খেলে তার মধ্যে ১৩টি ম্যাচেই জিতেছে মাশরাফি-সাকিবরা৷ তাই আইসিসি-র ওয়ানডে র্যাংকিংয়েও বাংলাদেশের অনেকখানি উন্নতি হয়েছে৷ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে সাত নম্বরে উঠে এসেছে তারা৷ অথচ টেস্টের র্যাংকিংয়ে নবম এবং টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে দশম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ দল৷ চারটি সিরিজের সব ক'টির ট্রফি ঘরে রাখার সৌভাগ্যে হয়েছে তাদের৷ তারপরও পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে না বাংলাদেশ৷ আইসিসি-র পূর্ণ সদস্য ১০টি দেশের মধ্যে সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে কম ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেছে তারা৷
২০১৬ সালে বাংলাদেশ এশিয়া কাপের ফাইনালিস্ট বা রানার্স আপ৷ ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে হারানো বাংলাদেশের আরেকটি বড় সফলতা৷ এছাড়া এ বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাসকিনকে ছাড়া ভারতের বিপক্ষে অসাধারণ খেলেছে বাংলাদেশ৷ অবশ্য জিততে পারেনি তারা৷ ফাইনালেও যেতে পারেনি৷ এখানে দেখা গেছে অভিজ্ঞতার ঘাটতি৷
২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে আর্ন্তজাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকের পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৫০টি আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ৷ দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সফলতা পেয়েছি, ঠিকই৷ কিন্তু এইসব সফলতা টোটাল টিম নির্ভর নয়, অনেকটা খেলোয়াড় বা ব্যক্তি নির্ভর৷ ফলে এই সফললতা দীর্ঘ মেয়াদে ধরে রাখা সম্ভব হয় না৷ বাংলাদেশে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটারের জন্ম হয়েছে৷ তাঁদের ব্যক্তিগত পারফরমেন্স অনেক উঁচুতে৷ কিন্তু তাঁদের সঙ্গে দলীয় পারফর্ম্যান্স সেই উচ্চতায় যায়নি৷ আমাদের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নকে হাতের কাছে আনতে হলে দল হিসেবে আরো এগিয়ে যেতে হবে৷''
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাসকিনের বোলিং অবৈধ হওয়া নিয়ে বাংলাদেশের ক্ষোভ আছে, আছে ষড়যন্ত্রের কথা৷ দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ও মনে করেন, ‘‘তাসকিন ষড়যন্ত্রের শিকার৷ বাংলাদেশে ক্রিকেটকে নিয়ে একটি ষড়যন্ত্র আছে৷ আর সেটা হলো ক্রিকেট অর্থনীতির ষড়যন্ত্র৷''
প্রশ্ন হলো, সেই ষড়যন্ত্র বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কি আটকে দিচ্ছে? এর জবাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কোচ এবং জাতীয় দলের সাবেক অলরান্ডার দিপু রায় চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ষড়যন্ত্র তো হচ্ছেই৷ তা না হলে তাসকিনকে ঐ সময়ে কেন আটকে দেয়া হবে? এটা অন্য সময়য়েও তো করা যেত৷ আমরা তো আর নতুন করে আরেকজন তাসকিনকে ‘রিপ্লেস' করতে পারিনি৷ তবে এ সব সামনে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরো শক্তি অর্জন করতে হলে অবকঠামো ও প্রশিক্ষণ সুবিধা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি ঘরোয়া ক্রিকেটের ওপর জোর দিতে হবে৷ আমাদের ক্রিকেটাররা ঘরোয়া ক্রিকেটে সময় দিচ্ছে কই? তবে সুযোগও তো নেই৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের গ্রাফটা এগোচ্ছে৷ আমরা আশাবাদী৷ কিন্তু বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয় করতে হলে আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে৷
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিয়ে অনেক উচ্ছ্বাস আছে, আছে প্রশংসাবাক্য৷ এই উচ্ছ্বাস এবং প্রশংসাবাক্য সাবেক ও বর্তমান বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটারদের৷ বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই বিস্ময় তামিম ইকবাল এবং সাকিব আল হাসান৷ আইপিএল-এ এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অপরিহার্য৷ তাই একদিন বিশ্বকাপের স্বপ্ন তো বাংলাদেশ দেখতেই পারে৷
বিশ্বকাপ জয় করতে হলে বাংলাদেশকে আরো কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? জানান নীচের ঘরে৷