বাংলাদেশের জন্য অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জগুলো
জ্বালানি ঘাটতি, মূল্যস্ফীতি, অর্থনীতির নিম্নগতি, বৈষম্য, সরকারি ঋণ আর বেকারত্ব চলতি বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার শীর্ষ ঝুঁকি৷ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদন ২০২৪-এ এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে৷
জ্বালানির ঘাটতি
ডলার সংকটের কারণে গত বছর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও কয়লা আমদানিতে রাশ টেনেছিল বাংলাদেশ৷ এতে বিপাকে পড়ে শিল্প কারখানাগুলো৷ বস্ত্র, ইস্পাত, সিরামিকের মতো শিল্পগুলো এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ডলারের হিসাবে জ্বালানি আমদানির পরিমাণ পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ কমেছে৷ জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস মিলবে ২০২৬ সাল থেকে৷
মূল্যস্ফীতি
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নেয়ার সময় মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে পাঁচ শতাংশের কিছু বেশি৷ অন্যদিকে চলতি জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে সাড়ে আট শতাংশের উপরে৷ গত বছরের মে মাসে মূল্যস্ফীতি এক যুগের রেকর্ড ১০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছায়৷ জুনে ঘোষিত বাজেটে অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশ হবে বলে ধরে নিয়েছিল সরকার৷ পরিস্থিতি বিবেচনায় তা এখন সাড়ে সাত শতাংশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷
অর্থনীতির ধীরগতি
২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ছয় শতাংশ৷ চলতি অর্থবছরে তা সাড়ে সাত শতাংশ হবে বলে আশা ছিল সরকারের৷ কিন্তু গত অক্টোবরে আইএমএফ জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ছয় শতাংশ৷ অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের হিসাবে তা পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশে নেমে আসতে পারে৷ পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও অর্থবছরের শেষ ছয়মাসের মুদ্রানীতিতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে সাড়ে ছয় শতাংশ করেছে৷
আয় ও সম্পদের বৈষম্য
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত সবশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপের ফলাফলে আয় বৈষম্য বৃদ্ধির উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে৷ বৈষম্য মাপার সূচক গিনি সহগে বাংলাদেশের অবস্থান দশমিক ৪৯৯, যা দশমিক ৫ হলেই উচ্চমাত্রার বৈষম্যে ভোগা দেশ বলে ধরে নেয়া হয়৷ জরিপ অনুযায়ী, দেশের পাঁচ শতাংশ ধনীর হাতে যেখানে মোট আয়ের ৩০ শতাংশ, সেখানে নিম্ন আয়ের ৫০ শতাংশের কাছে আছে মাত্র ১৮ শতাংশ৷
বেকারত্ব
পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশে বেকারত্বের হার চার শতাংশেরও কম৷ তবে সংজ্ঞাগত কারণে সরকারি হিসাবের চেয়ে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি বলেই ধরে নেয়া হয়৷ বিশেষ করে যুবক ও শিক্ষিত বেকারত্বের সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে৷ নির্বাচনি ইশতেহারে যুবকদের বেকারত্বের হার সাড়ে ১০ শতাংশ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে তিন শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার৷