জয়ের দিনে মন্দিরে হামলা
৩১ অক্টোবর ২০১৬গণমাধ্যমের বড় একটা অংশই যেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাটি এড়িয়ে গেছে৷ তাই ইংল্যান্ডকে হারানোর খবর খুব গুরুত্ব পেলেও, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মাধবপুরে শতাধিক হিন্দু বাড়িতে হামলা, মন্দির ভাংচুর এবং ব্যাপক লুটপাটের খবর সেভাবে চোখে পড়েনি৷
বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের মধ্যকার এবারের সিরিজে প্রথম টেস্টে জেতার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেও হেরেছিল বাংলাদেশ৷ তবে রবি বার অভাবনীয় এক জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ৷ এ জয়ে কেবল যে বাংলাদেশিরাই গর্ববোধ করছেন তা-ই নয়, পুরো ক্রিকেট বিশ্ব স্যালুট জানাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলকে৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ভাইরাল স্টোকসকে আউট করার পর সাকিবের স্যালুটটি৷
ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার (বেন স্টোকস) সেই স্যালুটের জবাবে টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমাদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ বাংলাদেশ৷ টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ ছিল অসাধারণ৷ এদেশের মানুষ, নিরাপত্তকর্মী ও অতি অবশ্যই সাকিব আল হাসানকে স্যালুট!''
গতকাল থেকে টুইটার ও ফেসবুক জুড়ে লাগাতার চলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা জানানোর জোয়ার ৷ বিশেষ প্রশংসা পাচ্ছেন মিরাজ এবং সাকিব৷
ভারতীয় ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের জন্য বিশাল এক মুহূর্ত৷ গত বছরই বলেছিলাম, এই দলটির প্রত্যেকটি খেলোয়াড় অসাধারণ৷ তাদের এই আত্মবিশ্বাস অভিষ্যতে আরো বিস্ময়ের জন্ম দেবে৷''
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ভি ভি এক্স লক্ষণ৷
বিশ্বের সব বাংলাদেশি যখন এই খবরে আনন্দে মাতোয়ারা তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে রবি বার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ১৫টি মন্দিরসহ হিন্দুদের শতাধিক বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়৷ অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত পোস্ট যদি সত্যিও থাকে, তবু তাকে কেন্দ্র করে একটি সম্প্রদায়ের উপর এমন হামলা কেন?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রশান্ত ত্রিপুরা লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশে বাজার চালিত এবং রাষ্ট্র ও সমাজ অনুমোদিত একটি নেশা আছে যার ব্র্যান্ড নাম ক্রিকেট, আর একটি উপাদান হচ্ছে জাতীয়তাবাদ৷ খেলার ফলাফলে মন এতটাই উল্লসিত ছিল যে, চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফত যখন চিৎকার করে বলে চলছিলেন, ‘এই জয় ষোল কোটি বাঙালির জয়', ‘মুক্তিযুদ্ধে যে তিরিশ লক্ষ বাঙালি জীবন দিয়েছিল, এই বিজয় তাদের আত্মদানের ফসল' ইত্যাদি, এসব কথা আমার তাৎক্ষণিক আনন্দানুভূতিকে হালকা করার বদলে তাতে একটু বাড়তি মশলাই যোগ করেছিল৷ কিন্তু রাতে ফেসবুক খুলে যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দুদের উপর হামলার খবর পড়লাম, সন্ধ্যার সেই অনুভূতির রেশ মিলিয়ে যেতে আর সময় লাগেনি৷ অবশ্য বাসায় আমি এখন যে কাগজ রাখি (বণিকবার্তা), সেটিকে নমুনা হিসেবে ধরলে মনে হয় দেশের ‘মূলধারা'র সংবাদমাধ্যম আজ প্রধানত আলোচ্য ‘নেশার' আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে৷''
তাওহীদ রেজা নূর লিখেছেন, ‘‘ক্রিকেট টেস্টে ইংল্যান্ড দলকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করার গৌরব অর্জন করেছে বাংলাদেশের তরুণেরা৷ এ কারণে দেশব্যাপী আমরা সকলে যখন বিজয়োল্লাস করছি তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিমা-মন্দির-ঘরবাড়ী ভাঙচুর ও লুটপাটের লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে৷ এই ঔদ্ধত্য এদেশের মূল চেতনাকে আঘাত হানছে, যা কোনো যুক্তিতেই মেনে নেয়ার প্রশ্ন নেই৷ এ ধরণের হামলা আমাদের পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের বর্বরতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়৷ ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে যেভাবে বৌদ্ধ বসতিতে হামলা হয়েছিল, একই রকম হামলা গত রবিবারে হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে৷ যথাযথ প্রশাসনিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক উদ্যোগ না থাকায় এহেন ন্যাক্করজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে৷ বাংলাদেশের মানুষ আমরা সবাই নিশ্চয় এ ধরণের কাজ প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসব৷ ‘জাগো বাহে কোনঠে সবায়!’’
টুইটারেও অনেকেই এ বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন৷
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী