নারীরাও আইএস-এর দিকে ঝুঁকছে!
২ জুন ২০১৫
তিনি বলেন, ‘‘অল্প কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি তরুণের আইএস-এ যোগদানের খবর আমাদের কাছে আছে৷ তাদের মধ্যে কয়েকজন নারীও রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে৷’’ তবে তাদের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানাননি পুলিশের এই কর্মকর্তা৷
তুরস্ক থেকে তরুণী ফেরত
পুলিশ জানায়, বাংলাদেশি এক তরুণী মাইরুনা ফারহিন (১৯) আইএস-এ যোগ দিতে ঢাকা ত্যাগের পর তাকে আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে৷ সে আইএস-এ যোগ দিতে গত মাসে তুরস্কের উদ্দেশ্যে টার্কিশ এয়ারলাইনস যোগে ঢাকা ত্যাগ করেছিল৷ এরপর বাংলাদেশ দূতাবাস অতি জরুরি ভিত্তিতে একটি কূটনৈতিক নোট ভারবালের মাধ্যমে বিষয়টি তুরস্ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়৷ তুরস্কের ন্যাশনাল পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট মাইরুনা ফারহিনকে দ্রুত শনাক্ত করে তাকে তুরস্কে প্রবেশের অনুমতি দানে বিরত থাকে৷ কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দর থেকেই ৫ই মে’র ফিরতি ফ্লাইটে তাকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়৷
দুজনের পর আরও একজন গ্রেপ্তার
চলতি মাসেই পুলিশ আমিনুল ইসলাম বেগ (৩৫) ও সাকিব বিন কামাল (৩০) নামে দু’জন আইএস সদস্যকে আটক করে৷ তাদের মধ্যে আমিনুল বরিশাল ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলেন৷ পরে মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন৷ দেশে কয়েকটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করার পর সর্বশেষ কোকাকোলায় আইটি বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন৷ আর সাকিব ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করে লালমাটিয়ার একটি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন৷
ডিএমপি’র যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমিনুল আইএসের নির্দেশিত খিলাফত প্রতিষ্ঠায় কাজ করছিল৷ এজন্য তিনি বিভিন্নভাবে প্রচার, গোপনে অর্থ ও কর্মী সংগ্রহ, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার পরিকল্পনাসহ বিভিন্নভাবে আইএসের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছিলেন৷’’
তিনি জানান, ‘‘অন্তত ২০ জনের একটি গ্রুপ করে আমিনুল আইএসের আদর্শ প্রচার করছিলেন৷ তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া সাকিব ওই ২০ জনের একজন৷’’ পুলিশের এই কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘ওই দুজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পরে আরো একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারা জানিয়েছে তাদের গ্রুপের ৫/৬ জন আইএস-এ যোগ দিতে বাংলাদেশ ছেড়েছে৷ তাদের মধ্যে নারী সদস্যও রয়েছে বলে তারা স্বীকার করেছে৷ আর যারা জিহাদে যেতে প্রস্তুত তাদের মধ্যেও বাংলাদেশি নারী আছেন৷ তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে৷’’
প্রথম তথ্য
বাংলাদেশে আইএস এর অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রথম জানা যায় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সামিয়ূন নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিককে ঢাকায় গ্রেপ্তারের পর৷ সামিয়ূন আইএস এর জন্য কর্মী সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশে এসেছিল বলে তখন দাবি করেছিল গোয়েন্দা কর্মকর্তারা৷
আর গত মাসে ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র আশেকুর রহমানের সিরিয়ায় আইএস-এ যোগদানের খবর নিয়ে তোলপাড় হয় বাংলাদেশে৷ তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হলেও ফিরিয়ে আনা যায়নি৷
এর আগে গত আগস্টে ইউটিউবে প্রকশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, পাঁচজন ‘বাংলাদেশি’ যুবক ইসলামিক স্টেট (আইএস) প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির কাছে জিহাদের শপথ নিচ্ছেন৷ তারা শপথ নেন বাংলায়৷
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে আইএস-এর জন্য ছোট ছোট গ্রুপে কাজ করছে জঙ্গিরা৷ আর তাদের প্রতিটি গ্রুপেই নারী সদস্য আছে৷
গত আট মাসে এপর্যন্ত কমবেশি ২৫ জনকে আইএস এর সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে৷ তারা সিরিয়া অথবা ইরাকে গিয়ে আইএস-এ যুক্ত হয়ে ‘জিহাদ’এ অংশ নিতে ব্যাকুল ছিলেন৷ আর তাদের কাছ থেকেই বাংলাদেশি তরুণ এবং তরুণীদের আইএস-এ যোগদানের খবর পাওয়া যায়৷
বাংলাদেশে যেসব নারী-পুরুষ আইএস-এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন তাদের প্রায় সবাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত৷ আর যারা ছাত্র তারা নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেন৷ তাদের পরিবারও বিত্তশালী৷
বিশেষজ্ঞ মত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক এবং অপরাধ বিজ্ঞানী অধ্যাপক হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘প্রথমত একটি অংশ হিরোইজম থেকে আইএস-এর দিকে ঝুঁকছে৷ এছাড়া বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিরা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় এখানে সক্রিয়৷ সমাজের সংস্কৃতির মধ্যে একধরণের মৌলবাদের উপাদান আছে, যা এদের বিপথগামী করছে৷ আর উচ্চবিত্তদের সন্তানরা যেহেতু প্রযুক্তি সুবিধা বেশি পায় তাই তারা নানা মাধ্যমে আইএস-এর সঙ্গে সহজে যুক্ত হচ্ছে৷’’
তিনি মনে করেন, ‘‘আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি এখন প্রয়োজন জঙ্গিবিরোধী সামাজিক সচেতনতা এবং আন্দোলন৷’’