বাংলাদেশের পর্যটনে তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে
২৫ আগস্ট ২০১০কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রে সৈকতে প্রতিদিনই ভীড় করেন হাজারো পর্যটক, যারা ছুটে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে৷ বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদেরও অন্যতম আকর্ষণ এই সমুদ্র সৈকত৷ সাগরের নীল পানির টানে ছুটে আসা এসব পর্যটকদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়সই বিশের কোঠায় যারা বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র৷ রয়েছেন সদ্য বিয়ে করা নব দম্পতিরাও৷ কেবল কক্সবাজার নয়, সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল, কুয়াকাটার নারকেল গাছ ঘেরা সৈকত, সিলেটের পাহাড় ঘেরা চা বাগান এইসব জায়গাতেই এখন দেখা যায় তরুণ পর্যটকদের ভীড়৷
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় একটি খাত হচ্ছে এই পর্যটন৷ কিন্তু এর দিকে এখনো তেমন নজর দেওয়া হয়নি৷ তবে দিন দিন যেভাবে তরুণ প্রজন্ম আগ্রহী হচ্ছে তাতে দিন বদলের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে৷ বেশিদিন আগের কথা নয়, বিগত শতকের আশির দশক থেকে এর শুরু৷ দেশ ঘুরে দেখার আগ্রহ বাড়তে থাকে তরুণদের মধ্যে৷ তাদের সে উৎসাহকে আরও বাড়িয়ে তুলতে অন্যতম ভূমিকা রাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিস্ট সোসাইটি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই সংগঠন শিক্ষার্থীদের মধ্যে পর্যটন নিয়ে আগ্রহ তৈরি করতে সক্ষম হয়৷ এই সংগঠনের অনেক সদস্যই পরবর্তীতে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন৷ তাঁদের একজন, ট্যুরিস্ট প্লাস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক মোরতাজা৷ তরুণদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিটি ট্যুরে সর্বনিম্ন ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ জন পর্যন্ত থাকে৷ তাদের মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগই তরুণ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৪ এর মধ্যে৷'
কথা বলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিস্ট সোসাইটির বর্তমান সভাপতি শেফাউল হোসেন মেঘের সঙ্গে, যিনি নিজেও একজন শিক্ষার্থী৷ তিনি জানান, তার সংগঠনে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা পাঁচ শতাধিক৷ দিন দিন এর সংখ্যা বাড়ছে৷ শেফাউল হোসেন জানালেন, ‘পর্যটন নিয়ে এতদিন যে ধারাটা ছিল, সেটি দিন দিন বদলে যাচ্ছে৷ এখন আমার মত যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাদের মধ্যে পর্যটন নিয়ে কাজ করার আগ্রহ বাড়ছে৷'
তরুণদের মধ্যে এই আগ্রহ বাড়ার কারণ কি? জানতে চেয়েছিলাম শেফাউল হোসেন মেঘের কাছে৷ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিগত কয়েক বছরে পর্যটন নিয়ে বেশ কাজ করা হয়েছে৷ সরকারের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ' এই ব্র্যান্ডটাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এর বাইরে নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্সের প্রতিযোগিতার বিষয়টিও রয়েছে৷ সেখানকার তালিকায় প্রথমে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও সুন্দরবন ছিল, এখন সুন্দরবন রয়েছে৷ এটাও পর্যটনে আগ্রহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে কাজ করেছে৷''
কোন কোন জায়গাগুলো পর্যটকদের জন্য মূল আকর্ষণ? জানতে চাইলে শেফাউল হোসেন মেঘ জানান, ‘বেশিরভাগ ট্যুর হয় কক্সবাজার, সেইন্ট মার্টিন এবং সুন্দরবন৷ প্রতি বছরই এখানে যাওয়া হয়৷ এর বাইরে রয়েছে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি বান্দরবান এবং সিলেট৷ এছাড়া উত্তরাঞ্চলের প্রত্বতাত্ত্বিক জায়গাগুলো যেমন, দিনাজপুর, রাজশাহী ও বাগেরহাট রয়েছে৷'
বাংলাদেশের অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে রয়েছে প্রকৃতির অকৃত্রিম ছোঁয়া৷ তবে এই প্রকৃতিকে পর্যটকদের উপযোগী করে তোলাটাও পর্যটন শিল্পের প্রসারের জন্য একটি প্রয়োজনীয় শর্ত৷ অনেক জায়গাই এখন পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলার কাজ চলছে৷ যেমন কক্সবাজার ও সেইন্ট মার্টিনসহ ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে নির্মিত হয়েছে অনেক নতুন হোটেল, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থাও আগের চেয়ে হয়েছে অনেক উন্নত৷ তাই সেসব জায়গাগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়েছে অনেক বেশি৷ তরুণ পর্যটকদের মধ্যে মেয়েদের অংশগ্রহণ কেমন? ট্যুরিস্ট প্লাস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক মোরতাজা বললেন, ‘মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশ ভালো এবং উল্লেখযোগ্য৷ বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ট্যুরিস্ট দলগুলোর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই নারী৷ আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ট্যুরের আয়োজন করা হলে তাতে অর্ধেকেরও বেশি মেয়েদের অংশগ্রহণ থাকে৷ এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম৷'
পর্যটনে তরুণদের এই আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তুলতে ইতিমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যটন বিভাগ খোলা হয়েছে৷ আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন