‘বিচার বিভাগকে নোবেল দেয়া উচিত'
৮ নভেম্বর ২০১৭মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে ঐ তিনজন মুক্তি পান৷ এরা হলেন এএইচএম কিবরিয়া, গোলাম মোস্তফা এবং সাইফুল ইসলাম৷ উচ্চ আদালতের আদেশ মঙ্গলবার দুপুরে কারাগারে পৌঁছার পর যাচাইবাছাই শেষে বিকাল সোয়া চারটার দিকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে৷ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ওই তিনজনসহ এ মামলার পাঁচ আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়৷ এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দুই আসামি নাহিদ ও শাকিল এই কারাগারে রয়েছেন৷
বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত আট জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়৷ এদের মধ্যে এএইচএম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফাকে যাবজ্জীবন এবং সাইফুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড হয়৷ পরে হাইকোর্ট এ তিনজনকে খালাস দেয়৷
এই তিন অপরাধীর খালাসকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে৷ তারা অনেকেই ব্যঙ্গ করেছেন আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থাকে৷
শারমিন জান্নাত ভীষণ ক্ষোভে লিখেছেন, ‘‘বিশ্বজিৎ ছেলেটা তো আসলে নাটক করেছে৷ ও বেঁচে থাকতে কেউ ওকে চিনতো না বলে, মরে একটু জনপ্রিয় হতে চেয়েছে! তাই লাইক, কমেন্ট আর শেয়ারের আশায় সে এত নাটক করেছে৷ সোনার টুকরো তিনটি ছেলেকে আসামি ডেকে যে অপবাদ দেয়া হচ্ছে তা তো কোনভাবেই মানি না....সবার মুক্তি চাই অবিলম্বে!''
ছাদেকুর রহমান জাতিসংঘকে আহ্বান জানিয়েছেন ‘ক্ষমা দিবস' চালু করার৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘সেদিন সারা বাংলাদেশের অপরাধীরা ক্ষমা পেয়ে দু'পাটির ৩২ দন্ত কেলিয়ে হাসতে হাসতে কারাগার হতে বেরিয়ে আসবে৷ এই দিবসের রূপকার হিসেবে বাংলাদেশ বিচার বিভাগ কে নোবেল দেয়া যায়!'' তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘বিচার বিভাগের দীনতা না হলে প্রকাশ্য দিবালোকে একজন মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যাকারীরাও ছাড়া পায় কীভাবে?''
সবশেষে লিখেছেন, ‘‘অভাগা বিশ্বজিৎ মরে বেঁচে গেছে৷ আমাদের কপাল খারাপ, কারণ আমরা বেঁচে থেকেও মরে গেছি৷''
অজন্তা দেব রায় ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘‘মাত্র তিনজনকে ছাড়লেন? ছাত্রলীগ বলে কথা!'' ‘‘বাকি আসামিদেরও এক্ষুনি খালাস দিয়ে দিন৷ আমরা মেনে নেবো, নো ওয়ান কিলড বিশ্বজিৎ৷ সে নিজেই নিজের গায়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আত্মহত্যা করেছে৷''
হুমায়ূন কবীর রকির প্রশ্ন, ‘‘বিচার বলতে কি কিছু আছে? জনসম্মুখে সবার সামনে হত্যা করা হলো৷ তারপরও তারা নির্দোষ হয় কীভাবে?''
ইভান মিশুও লিখেছেন, ‘‘নো ওয়ান কিল্ড বিশ্বজিৎ!''৷ তিনি ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘‘ছাড়া পাওয়া আসামিরা এখন মানহানির মামলা করলে কেমন হয় বিশ্বজিতের পরিবারের বিরুদ্ধে! অদ্ভুত উটের পিঠে চলেছে দেশ৷''
সালমান সামিলের বক্তব্যও অনেকটা এরকম৷ ‘‘জ্বি, বিশ্বজিৎ তার নিজের দোকানের শাটারের নীচে চাপা পড়ে মারা গিয়েছিল, ভিডিও টিডিও সব এডিট করা৷ অতএব মামলা খালাস!'
আব্দুল্লাহ আল ইসহাক খান লিখেছেন,‘‘যতদূর মনে পরে মোট ২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছিল, এর ভেতর ১৩ জন পলাতক আর বাকিদের সবার মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিলেন আদালত৷ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই একের পর এক খালাস পাওয়া শুরু করল খুনি কুলাঙ্গারগুলো৷ এর মানে দাঁড়াচ্ছে পলাতক ১৩ জন ছাড়া বাকিরা সবাই নির্দোষ! কি বিচিত্র কি অদ্ভুত! বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিরা কীভাবে পলাতক থাকে এটাও এক সহজ সমাধানযোগ্য কিন্তু ইচ্ছাকৃত অমিমাংসিত রহস্য৷ এইসব ইচ্ছাকৃত অমিমাংসিত রহস্যের বেড়াজাল থেকে আমাদের মুক্তি নেই! কারণ মুক্তিদাতারাই আজ প্রাচীর ভাঙার বদলে প্রাচীর নির্মাণে ব্যস্ত৷''
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্বজিৎ দাসকে ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ