জামাল নজরুল ইসলাম
২২ মার্চ ২০১৩জামাল নজরুল আইনস্টাইনের তত্ত্ব নিয়ে কাজ করতেন বিখ্যাত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখানেই হকিং এর সঙ্গে পরিচয়৷
১৯৩৯ সালে ঝিনাইদহে জন্মগ্রহণ করেন জামাল নজরুল ইসলাম৷ চট্টগ্রাম, কলকাতায় লেখাপড়া শেষে পাড়ি জমান ব্রিটেনে৷ সেখানে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেন৷ এরপর যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার পর ১৯৮৪ সালে দেশে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন৷ সেখানে ‘রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথামেটিকাল অ্যান্ড ফিজিকাল সায়েন্সেস' নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলেন৷
১৯৭৫ সাল থেকে জামাল নজরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন বাংলাদেশ আরেক প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. এম শমসের আলী৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি অধ্যাপক ইসলামকে উঁচুমানের একজন বিজ্ঞানীর পাশাপাশি দেশপ্রেমিক, রসিক এক সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷
আন্তর্জাতিক খ্যাতি
ড. শমসের আলী বলেন অধ্যাপক ইসলামের সঙ্গে পরিচয় ছিল বিখ্যাত মার্কিন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ফ্রিম্যান ডাইসনের, যার সঙ্গে অনেক নোবেলজয়ী কথা বলার জন্য উদগ্রীব থাকতেন৷ এমনকি নিজের একটি বইয়ে অধ্যাপক ইসলামের নামও উল্লেখ করেছেন ডাইসন৷
আরেক মার্কিন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান, যাঁকে ড. শমসের আলী বিশ্বের অন্যতম সেরা পদার্থবিদ বলে আখ্যায়িত করেছেন, তাঁর সঙ্গেও সখ্যতা ছিল জামাল নজরুল ইসলামের৷
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যে গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন সেখানে মাঝেমধ্যেই কেমব্রিজ থেকে বিখ্যাত লোকজনদের এনে সেমিনার করতেন৷ এভাবে একবার এসেছিলেন ব্রিটিশ গাণিতিক পদার্থবিদ স্যার রজার পেনরোজ, যিনি স্টিফেন হকিং এর সঙ্গে কাজ করেন৷ এসেছেন পাকিস্তানি নোবেলজয়ী পদার্থবিদ আব্দুস সালামও৷
উপমহাদেশের আরেক নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের সঙ্গেও অধ্যাপক ইসলামের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল৷ সেই সুবাদে অমর্ত্য সেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও গিয়েছিলেন৷
ড. শমসের আলী বলেন, ‘‘জামাল নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিশ্বের অনেক গুনি লোকের পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছিলেন৷''
লেখা বই
১৯৮৩ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে অধ্যাপক ইসলামের লেখা ‘দি আলটিমেট ফেট অফ দি ইউনিভার্স' বইটি বের হয়৷ যা এখন পড়ানো হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে৷ জাপানি, ফরাসি, পর্তুগিজ, জার্মানসহ কয়েকটি ভাষায়ও বইটি অনূদিত হয়েছে৷ এছাড়া ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি, রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি, অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি, স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য৷
দেশপ্রেমিক
ড. শমসের আলী বলেন, অধ্যাপক ইসলাম বাংলাদেশে বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে খুব ভাবতেন৷ ‘‘মাঝেমধ্যেই তিনি বলতেন, আমরা একজন সংগীতজ্ঞকে নিয়ে কত ভাবি, ক্রিকেটাররা ভাল কিছু করলে তাদের কত আর্থিক সুবিধা দেই, কিন্তু বিজ্ঞানীদের জন্য তেমন কিছু করা হয় না৷''
অধ্যাপক ইসলাম মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার উপর খুব গুরুত্ব দিতেন৷ এ লক্ষ্যে তিনি অনেক কাজও করেছেন৷ বিজ্ঞানের উপর বাংলা ভাষায় লেখা তাঁর কয়েকটি বইও রয়েছে৷ এসব কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০১ সালে তাঁকে একুশে পদকও দেয়া হয়৷ তাঁর উল্লেখযোগ্য বাংলা বই হচ্ছে ‘কৃষ্ণ বিবর', ‘মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ', ‘শিল্প সাহিত্য ও সমাজ'৷
সংগীতপ্রেমী
বিজ্ঞান ছাড়াও সংগীত বিশেষ করে গজলের প্রতি অধ্যাপক ইসলামের বেশ আগ্রহ ছিল বলে জানান ড. শমসের আলী৷ ‘‘জামাল নজরুল খুব রসিক মানুষ ছিলেন৷ মাঝেমধ্যেই বাসায় গজলের আসর বসাতেন৷ এছাড়া রবীন্দ্র ও নজরুল সংগীতের প্রতিও তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল৷''