বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য পেনশন বিল পাস
২৫ জানুয়ারি ২০২৩মঙ্গলবার বিলটি জাতীয় সংসদে তোলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল; পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর তা ভোটে দিলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়৷
এই পেনশন-সুবিধা পেতে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর প্রিমিয়াম বা চাঁদা দিতে হবে৷ বয়সের ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে৷
এর আগে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়৷ নিয়ম অনুয়ায়ী বিলটি এখন রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে৷ তার অনুমোদনের পরই তা আইনে পরিণত হবে৷
জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সি সব নাগরিক অংশ নিতে পারবেন৷ বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা এর আওতায় থাকবেন৷
বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা এতে অংশ নিতে পারবেন৷
প্রিমিয়ামের হার কত হবে, তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি৷ আইন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি নির্ধারণ করবে৷ মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ওই টাকা দেওয়া যাবে এবং অগ্রিম ও কিস্তিতেও তা দেওয়ার সুযোগ থাকবে৷ সরকার গেজেট জারি করে বাধ্যতামূলক না করা পর্যন্ত এই পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ ঐচ্ছিক থাকছে৷
পেনশনে থাকাকালীন কোনো ব্যক্তি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন৷ শর্ত মেনে নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেয়া ব্যক্তি কমপক্ষে ১০ বছর টাকা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে৷
পেনশন তহবিলে জমা দেওয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমা দেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন, যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে৷
পেনশনের অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে৷ পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে৷
এছাড়া নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে৷ আইনে সর্বজনীন পেনশন-পদ্ধতিতে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা এর বাইরে থাকবেন৷
এছাড়া আইনে একটি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে৷ এতে একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবেন৷ এদের নিয়োগ করবে সরকার৷
১৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিধানও রাখা হয়েছে বিলে৷ এর চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী৷ এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থবিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, উইমেন চেম্বার্স অব কমার্সের সভাপতি- এর সদস্য হবেন৷ পর্ষদের সদস্যসচিব হবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান৷
বিধি দ্বারা নির্ধারিত এক বা একাধিক তফসিলি ব্যাংক জাতীয় পেনশন তহবিলের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে৷
বর্তমানে দেশে শুধু সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পেলেও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সবাইকে পেনশনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে৷ সরকার গঠনের পর সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা সবার জন্য এ সুবিধা চালু করার কথাও বলেন৷ এরপর এজন্য আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷
যা ছিল আলোচনায়
বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এ বিলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটি চমৎকার উদ্যোগ কিন্তু এই পেনশন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের সাড়া পাওয়া যাবে না৷ এটা অনেকটা ব্যাংকিং প্যাকেজের মতো৷
বিলটি পাসের আগে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, বিলটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে সরকার আবার ফেরত দেবে৷ এ বিল পাস করার কোনোও সুযোগ নেই৷
এদিকে বিলটিকে ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের সঙ্গে তুলনা করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক৷ তিনি বলেন, "বিলের কথাগুলো ভালো কিন্তু এই পেনশন স্কিমে সরকারের অংশগ্রহণ কী? সরকারের কোনো অংশগ্রহণ নেই৷”
জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আপাতদৃষ্টিতে আইনটি ভালো৷ কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেভাবে প্রভিডেন্ট করে এটি তার বাইরে কিছু বলে মনে হয় না৷
জাতীয় পাটির কাজী ফিরোজ রশীদও আলোচনায় অংশ নেন৷
বিরোধীদলের সদস্যদের আলোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, "এ বিলটি আনার আগে অনেক আলোচনা করা হয়েছে৷ যারা লিখিত মতামত দিয়েছিলেন তাদের মতামত আমলে নেওয়া হয়েছে৷ সংসদীয় কমিটিতেও বিলটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ বিলটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে বিবেচনায় এটি সংসদে আনা হয়েছে৷”
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)