স্বাধীন বাংলাদেশ
২৬ মার্চ ২০১২স্যার ফজলে হাসান আবেদ৷ বিশ্বের অন্যতম বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক'এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি৷ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভ করার পর ভারত থেকে শরণার্থীরা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরতে শুরু করেন৷ তাদের সহায়তা করতেই জন্ম হয়েছিল ব্র্যাকের৷ সেই থেকে সংস্থাটি এখন বিশ্বের অন্যতম বড় উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে৷
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে কথা হচ্ছিল ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে৷ তিনি বললেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ছিল আপারভোল্টা, যেটা বর্তমানে বুর্কিনা ফাসো নামে পরিচিত৷ আর তার পরেই ছিল বাংলাদেশ৷ সেই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ এখন অনেক দূর এগিয়ে এসেছে বলে জানান আবেদ৷ তিনি বলেন, যুদ্ধের পরপর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯০ ডলারের নীচে৷ এখন সেটা প্রায় সাতশো ডলারের কাছাকাছি৷ ‘‘বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭৬ ভাগ তখন দারিদ্রসীমার নীচে বাস করতো৷ এখন সেই হার ত্রিশের নীচে৷ এক বছরের কম বয়সি শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ছিল ২০০ জন৷ এখন সেটা ৪৫'এ নেমে এসেছে৷ মাতৃমৃত্যুর হার লাখে ৮০০ জন থেকে ২০০'তে কমে এসেছে৷''
অন্যদিকে, স্বাক্ষরতার হার ২৫ থেকে বেড়ে ৬৫ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা আবেদ৷ তিনি বলেন সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে কৃষিখাতে৷ গবেষণার মাধ্যমে এমন সব ধানের জাত বের বের করা হয়েছে যে কারণে ধান উৎপাদন আগের চেয়ে তিনগুন বেড়ে গেছে৷ ‘‘১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে ৯০ লক্ষ হেক্টর জমিতে দেড় কোটি ধান উৎপন্ন হতো৷ এখন সেটা তিনগুন বেড়ে যাওয়ায় জনসংখ্যা দ্বিগুন হয়ে গেলেও কোনো সমস্যা হচ্ছেনা''৷
এরপর কথা প্রসঙ্গে জানতে চাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি অর্থাৎ ২০২১ সালে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান তিনি৷ বললেন, ‘‘গণতন্ত্র যদি ঠিক থাকে, আর আমাদের সরকারগুলো যদি ঠিকমত দেশ শাসন করে তাহলে প্রতি বছর ৮-৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করা যায়৷ এটা হলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে৷ ফলে তখন মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়াবে ২০০০ ডলারে৷ এছাড়া অন্যান্য সূচকেও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ৷''
ফজলে হাসান আবেদের মতো একজন শ্রদ্ধেয় উন্নয়নকর্মীর কাছ থেকে এবার চলে যাই একজন শিক্ষাবিদের কাছে৷ যিনি দেশের টানে সুদূর অ্যামেরিকা থেকে চলে এসেছেন৷ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হারিয়েছেন বাবাকে৷ তিনি মুহম্মদ জাফর ইকবাল৷ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তিনি৷ স্বাধীনতার এতবছর তাঁর কাছে সবচেয়ে দু:খের ঘটনা হচ্ছে, শিক্ষাখাতে প্রয়োজনমত খরচ করতে না পারা বা করতে না চাওয়া৷ অধ্যাপক জাফর ইকবাল মনে করেন একটা জাতির উন্নতির জন্য শিক্ষাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার৷ ‘‘শিক্ষাকে আমরা এখনো অগ্রাধিকারের তালিকায় আনতে পারিনি৷ এখনো অনেকেই মনে করেন শিক্ষা খাতে খরচ করার চেয়ে একটা রাস্তা তৈরি বা অন্যখাতে ব্যয় করাটা জরুরি৷''
এই মানসিকতার যে পরিবর্তন হবেই ভবিষ্যতে, তেমন প্রত্যাশা থাক৷ যে প্রত্যাশা আলোর দিকে নিয়ে যাবে প্রিয় বাংলাদেশকে৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়