বাঘ বিধবা
৩ এপ্রিল ২০১২তিন সন্তানের মা পারভীন নেসার স্বামী আদরুজ্জামান কাজ করতেন বন বিভাগে৷ ক'দিন আগে বাঘের কবলে পড়ে মারা গেছেন তিনি৷
একই কাহিনি রাশেদা, জামেনা, জহুরা'রও৷ তাদের স্বামীরাও সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হাতে নিহত হয়েছেন৷ সরকারি হিসেবে, ২০০৯ সালে ১২০ জন বনকর্মী নিহত হয়েছিলেন এভাবে৷ অর্থাৎ প্রতি তিনদিনে একজন৷
তবে মোট নিহতের সংখ্যা অনেক৷ কেননা ঐ পরিসংখ্যানটা শুধুই বনকর্মীর৷ এছাড়াও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সুন্দরবনে যান বিভিন্ন প্রয়োজনে৷ তারাও বাঘের হামলার শিকার হন৷ কিন্তু তাদের নাম সরকারের হিসেবের খাতায় ওঠেনা৷ কেননা তারা সুন্দরবনে যান অবৈধভাবে৷ কারও উদ্দেশ্য কাঠ কাটা, কারও বা মাছ ধরা৷ আবার অনেকে যান মধু সংগ্রহ করতে৷
ফলে সুন্দরবনের আশেপাশের গ্রামগুলোতে স্বামীহারা স্ত্রীর সংখ্যা অনেক৷ বাঘের হামলায় স্বামীদের মৃত্যু হলেও দায়টা কিন্তু গিয়ে পড়ে স্ত্রীদের উপরই৷ গ্রামবাসীরা মনে করেন, স্ত্রীরাই তাদের স্বামীদের দুর্ভাগ্য বয়ে এনেছে৷ ফলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আর তাদের রাখতে চান না৷ গ্রামবাসীরাও চান না সেই সব নারীদের সঙ্গে মিশতে৷ ফলে একরকম একঘরে হয়ে থাকতে হয় স্বামীহারা স্ত্রীদের, মানে বাঘ বিধবাদের৷
শুধু স্ত্রীরাই নন, তাদের সন্তানদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হয়৷ স্কুলে গেলে অন্য শিক্ষার্থীরা বাবাহারা এসব সন্তানদের সঙ্গে মিশতে চায়না৷
তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে৷ গঠিত হয়েছে ‘বাঘ বিধবা এসোসিয়েশন'৷ বেসরকারি একটি সাহায্য সংস্থা এসব নারীদের নিয়ে সংগঠনটি তৈরিতে সহায়তা করেছে৷ শত শত স্বামীহারা নারী এর সদস্য৷ সপ্তাহে তারা একবার মিলিত হন৷ সেখানে, নিজেদের অবস্থার উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব - তা নিয়ে আলোচনা করেন তারা৷ জমি চাষ, সেলাইয়ের কাজ শেখা থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের পরিকল্পনা করেন এসব পতিহারা নারীরা৷ এছাড়া বাবাহারা সন্তানদের জন্যও গড়ে তোলা হয়েছে আলাদা স্কুল৷ দিনে তিন ঘণ্টা সেখানে পড়াশোনা চলে৷ বাকি সময়টা মা'দের কাজে সহায়তা করে এসব ভাগ্যহত সন্তানরা৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক/ডের স্পিগেল
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ