বাঙালির ফুটবল এবার মাদ্রিদে?
২১ এপ্রিল ২০১৪গতবারের ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ী দেশ স্পেনের জাতীয় ফুটবল লিগ ‘লা লিগা'-র শীর্ষে থাকা ‘অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ' ক্লাবের নাম যুক্ত হলো কলকাতা শহরের সঙ্গে৷ আইপিএল ক্রিকেটের ধাঁচে সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে ফুটবলের যে আইএসএল টুর্নামেন্ট, অর্থাৎ ইন্ডিয়ান সুপার লিগ চালু হচ্ছে, সেখানে কলকাতার টিমের নাম হবে ‘অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ কলকাতা'! এটা নিঃসন্দেহে গর্ব করে বলার মতো একটা খবর যে ইউরোপের একটা প্রথম সারির ক্লাব ইন্ডিয়ান সুপার লিগের মতো বাণিজ্যিক উদ্যোগ হলেও সরাসরি যুক্ত হবে কলকাতা তথা ভারতের ফুটবল খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত একটা দলের সঙ্গে৷
‘‘এর পরের ধাপটা কিন্তু এখানকার প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের বিদেশে গিয়ে খেলার একটা সুযোগ তৈরি হওয়া৷'' বললেন কলকাতার আইএসএল টিমের সঙ্গে শুরু থেকেই যুক্ত, ক্রীড়া সাংবাদিক অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়৷ যদিও শেষ পর্যন্ত কোনো বাঙালি খেলোয়াড় সেই বিশ্বমানের যোগ্যতা প্রমাণ করে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে বিদেশের মাটিতে খেলতে পারবেন কিনা, সেটা বলার সময় এখনও আসেনি৷ কিন্তু অনিলাভ জানাচ্ছেন, ফুটবলের নবীন প্রতিভা খুঁজে আনতে একটা জোরদার স্কাউটিং তাঁরা অবশ্যই করবেন৷ আইএসএল-এ মাদ্রিদ অ্যাটলেটিকো কলকাতা টিমের হয়ে খেলার সুবাদে সেই নতুন খেলোয়াড়েরা ইওরোপের কোনো বড় ক্লাবের নজরে পড়ে যেতেই পারেন৷
এর আগে কলকাতার টিমের অন্যতম মালিক, ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি বলেছিলেন, ইন্ডিয়ান সুপার লিগে কলকাতার টিমটি কেনার সিদ্ধান্ত স্রেফ বাংলার প্রতি, বাঙালির প্রতি এবং বাঙালির প্রিয় খেলা ফুটবলের প্রতি আবেগের জায়গা থেকে৷ সৌরভ একা নন, কলকাতার ফুটবল দলটির যৌথ মালিকানায় তাঁর সঙ্গে আছেন শহরের তিন বিশিষ্ট শিল্পপতি হর্ষবর্ধন নেওটিয়া, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা আর উৎসব পারেখ৷ ওঁরা তিনজনেই অবাঙালি হলেও জন্মেছেন, বড় হয়েছেন এবং এখন ব্যবসা করছেন কলকাতায় বসে৷ ওঁদের কাছে কলকাতার ফুটবল টিমের জন্য টাকা খরচ করাটা আসলে প্রিয় শহরকে কিছুটা ফিরিয়ে দেওয়া৷
যে কারণে হর্ষ নেওটিয়া যখন সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে প্রথম প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন, শুরুতেই বলেছিলেন, কয়েক কোটি টাকা ধরে নাও নষ্ট হবে৷ রাজি আছ? সৌরভ এক ঘরোয়া আড্ডায় প্রথমে আইডিয়াটা বলেছিলেন তাঁর পুরনো পরিচিত হর্ষ নেওটিয়াকে৷ হর্ষ নিয়ে আসেন সঞ্জীবকে এবং উৎসবও তার পর যোগ দেন৷ অবশ্য শুধু টিম কিনে ফেললেই হয় না, কলকাতায় আইএসএল ম্যাচ খেলানোর উপযুক্ত পরিকাঠামোও এখন তাঁদেরই দায়িত্ব৷ পাশাপাশি টিম তৈরি, তার জার্সির রঙ বাছাই থেকে লোগো বানানো, সবই এখন ওঁদের করতে হবে, জানালেন অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়৷ আগামী ৬ মে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ক্লাবের প্রতিনিধিরা কলকাতায় এসে পৌঁছচ্ছেন৷ তার আগে প্রাথমিক কাজ সব ওঁদের সেরে রাখতে হবে৷
এই মুহূর্তে ভারতের এক নম্বর শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স শিল্পগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত রিলায়েন্স-আইএমজি সংস্থা ফুটবলের এই সুপার লিগের মুখ্য আয়োজক৷ আইপিএল ক্রিকেটেই এতদিন নিবিষ্ট ছিল দেশের সবকটি বড় বাণিজ্যিক গোষ্ঠী৷ এবার তাদের ডাকা হচ্ছে ফুটবলের জন্য আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা দিতে৷ প্রথম বছরেই জড়ো হয়ে গিয়েছে ৬০০ কোটি টাকা৷ সৌরভ গাঙ্গুলি যেমন কলকাতা টিমের অন্যতম মালিক, তেমন কোচি শহরের যে ফুটবল টিম, তার মালিক শচীন টেন্ডুলকার৷ মুম্বইয়ের টিমটির মালিক হলেন হিন্দি ছবির তারকা রণবীর কাপুর৷ সলমন খানের মালিকানায় আছে পুণের টিম এবং গুয়াহাটির টিমের মালিক আরেক চিত্রতারকা জন অ্যাব্রাহাম৷ বলা বাহুল্য যে এঁদের প্রত্যেকের পিছনেই আছে কোনো না কোনো শিল্পগোষ্ঠীর আর্থিক মদত৷
তবে আলাদাভাবে অবশ্যই নজর কাড়ছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ-কলকাতা৷ ফুটবল প্রিয় বাঙালি বহুদিনই স্থানীয় ফুটবল ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, বায়ার্ন মিউনিখ আর এফসি বার্সেলোনার খেলায় মজেছে৷ কলকাতার মাঠে সমমর্যাদার একটি ক্লাবের নাম নিঃসন্দেহে সেই ফুটবল উন্মাদনায় বাড়তি মাত্রা যোগ করবে৷ আর সত্যিই তো, কে বলতে পারে, এই ইন্ডিয়ান সুপার লিগে খেলার সুবাদেই একদিন বসিরহাটের বাবলু খেলতে যাবে মাদ্রিদ অথবা মিউনিখে!