ঘরে গরুর মাংস রাখার কারণে মৃত্যু
১ অক্টোবর ২০১৫৫০-বছর-বয়সি অখলাক পেশায় কামার৷ তাঁকে ও তাঁর ২২ বছর বয়সের ছেলে দানিশ-কে বাড়ি থেকে টেনে বার করে মারধোর শুরু করে ক্ষিপ্ত জনতা৷ সেই গণপিটুনিতে অখলাক প্রাণ হারান তাঁর কন্যা সাজিদা-র চোখের সামনে; দানিশকে গুরুতরভাবে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷
ইতিপূর্বে নাকি স্থানীয় একটি মন্দির থেকে গুজব ছড়িয়েছিল যে, গাঁয়ে গোহত্যা করা হয়েছে এবং অখলাক-দের বাড়ির ফ্রিজে গোমাংস রাখা আছে৷ অখলাকের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন যে, ফ্রিজে মাংস রাখা ছিল বটে, কিন্তু তা পাঁঠার মাংস৷ পুলিশ নাকি পরে সেই মাংস ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেখেছে যে, তা সত্যিই পাঁঠার মাংস৷
সরকারি প্রতিক্রিয়া
ভারতের পিটিআই সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী দশজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অখলাক-এর পরিবারের উপর হামলা চালানোর অভিযোগে এফআইআর দাখিল করা হয়েছে৷ ছ'জনকে গ্রেপ্তারের খবরও পাওয়া গিয়েছে৷ উত্তর প্রদেশ সরকারের তরফ থেকে ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব নিহতের পরিবারের জন্য দশ লাখ ভারতীয় রুপি এক্স-গ্রাশিয়া পেমেন্ট ঘোষণা করেছেন৷ তিনি নয়ডা-র ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট-কে নিহতের পরিবারের পূর্ণ সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে বলেছেন৷ নয়ডা-র চিফ মেডিক্যাল অফিসার-কে ব্যক্তিগতভাবে আহত দানিশ-এর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে৷
উত্তর প্রদেশে গোহত্যা নিষিদ্ধ কিন্তু গোমাংস ভক্ষণ নয়৷ অখলাক যে গ্রামের বাসিন্দা, তার প্রায় ৪০ শতাংশ বাসিন্দা মুসলিম৷ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধতে পারে, এই আশঙ্কায় গাজিয়াবাদ, বুলন্দশহর ও হাপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে৷
পটভূমি
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম বিফ রপ্তানিকারক দেশ এবং পঞ্চম বৃহত্তম গ্রাহক৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-র সরকার সারা দেশে বিফ ব্যান চালু করতে চান - অর্থাৎ গোহত্যা এবং গরুর মাংস বেচা কিংবা খাওয়া নিষিদ্ধ করতে চান৷ বাংলাদেশে গরু পাচারের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ যে দু'টি রাজ্যে মোদী-র ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায় আছে, সেখানে গরুদের সুরক্ষার জন্য আইন আরো কড়া করা হয়েছে৷
নিহত অখলাক-এর কন্যা সাজিদা সাইফি প্রশ্ন তুলেছেন: ‘‘আমি আমার বাবা-কে মরতে দেখেছি - তাঁকে বাঁচানোর জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি৷ মাংস বা বিফ খাওয়া কি এতো বড় অপরাধ হতে পারে?''
সোশ্যাল মিডিয়ায়
বুধবার ভারত থেকে আনওয়ার তারিখ টুইট করেন, ‘এটা অনেক পুরনো রোগ৷ এই গুণ্ডারা রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রশ্রয় পাচ্ছে৷'
রামকৃষ্ণ টুইট করেন, ‘যারা আমাদের শিখিয়েছে যে গরু দেবতা, তারাই আবার অস্পৃশ্যতায় বিশ্বাস করে৷ এই সব অন্ধ বিশ্বাস বাতিল করার সময় এসেছে৷' রাহুল ঈশ্বর যা রি-টুইট করার সময় লিখেছেন, ‘গরু আমাদের কাছে ভগবান হতে পারে৷ কিন্তু মনে রাখবেন, ঈশ্বর সবচেয়ে বেশি বার মানুষের অবতার নিয়েই পৃথিবীতে এসেছেন৷'
পার্থ এমএন টুইট করেছেন, ‘মাংস নয়, যে ক্ষিপ্ত জনতা অখলাক-কে মেরেছে, তাদেরই ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো উচিত এটা দেখার জন্য যে, তারা সত্যিই মানুষ কিনা৷'
এসি/এসবি (রয়টার্স, এপি, পিটিআই)