বাদুড় থেকে প্যাংগোলিন থেকে মানুষ
বাদুড় সম্ভবত নভেল করোনা ভাইরাসের উৎস হলেও প্যাংগোলিন যে সেই ভাইরাস বহন করে, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ এই ভাইরাসের বিস্তার সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য জানতে পারছেন বিজ্ঞানীরা৷
করোনার যোগসূত্র প্যাংগোলিন
‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণার ফল অনুযায়ী, প্যাংগোলিনই সম্ভবত করোনা ভাইরাস, বাদুড় ও মানুষের মধ্যে যোগসূত্র৷ এই প্রাণী ও মানুষের শরীরে কোভিড-১৯-এর জিনগত গঠনের মধ্যে প্রায় ৮৫ থেকে ৯২ শতাংশ মিল পাওয়া গেছে৷ উল্লেখ্য, লুপ্তপ্রায় প্রাণী হিসেবে প্যাংগোলিনই সবচেয়ে বেশি চোরাকারবার হয়ে থাকে৷
বাদুড়ের কেন্দ্রীয় ভূমিকা
এর আগেও বাদুড়বাহিত ভাইরাস বিশ্বে মহামারি ঘটিয়েছে৷ এবোলা এবং সার্স ও মার্সের মতো করোনা ভাইরাসের উৎসও যে বাদুড়, তা ধরে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷ বিশ্বের সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশই বাদুড় হওয়ায় তাই বিস্ময়ের কিছু নেই৷ গোটা বিশ্বে প্রায় ১,৩০০ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে এবং কয়েকটি প্রজাতির আয়ু ৪০ বছর পর্যন্ত ছুঁতে পারে৷ তাছাড়া বাদুড়ই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেটি পাখির মতো উড়তে পারে৷
বাদুড় থেকে সরাসরি মানুষের শরীরে নয়
গোটা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে ব্যস্ত, তখন অভিযোগের তির বাদুড়ের দিকেই যাচ্ছে৷ তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর জন্য সরসরি বাদুড়কে দায়ী করা যায় না৷ টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফেসর ইয়ান শিয়াং ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, অন্য কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাধ্যমেই এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে৷ অতীতে সিভেট বা গন্ধ গোকুল এবং উট এমন ‘মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে কাজ করেছে৷
প্যাংগোলিনের ভূমিকা আবিষ্কার
ফেব্রুয়ারির শুরুতে দক্ষিণ চীন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রথম প্যাংগোলিনের সম্ভাব্য ভূমিকার কথা উঠে আসে৷ প্রায় এক হাজার বন্যপ্রাণীর নমুনা পরীক্ষা করে গবেষকদের সন্দেহ আরো জোরালো হয়ে৷ ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে মালয়েশিয়া থেকে চীনে অসুস্থ প্যাংগোলিনের চোরাচালানের সময় করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে৷ তবে প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে আরো গবেষণা প্রয়োজন৷
এমন মহামারি বিরল
লন্ডনের কিংস কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান স্টুয়ার্ট নিল ডিডাব্লিউ-কে বলেছেন, এমন মহামারি সম্পর্কে আগাম পূর্বাভাষ দেওয়া সত্যি কঠিন৷ তবে তাঁর মতে, এত বড় বিপর্যয় ঘনঘন হবার আশঙ্কা কম৷ প্রাণীর তুলনায় অন্য সূত্র থেকেই মানুষ অনেক বেশি নতুন ভাইরাস গ্রহণ করে৷ কোনো প্রাণীর শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা কাঠামোর উপর কোনো ভাইরাসের প্রভাব নির্ভর করে৷ সব প্রাণী সব ভাইরাসে মোটেই কাবু হয় না, বলেন নিল৷
মানুষ প্রাণীর ভিটেমাটি কেড়ে নিচ্ছে
মানুষ যত বেশি বণ্যপ্রাণীর নিজস্ব চারণভূমি দখল করে নিচ্ছে, এমন মহামারির আশঙ্কা ততই বাড়ছে৷ এতকাল বেশিরভাগ প্রাণী এবং সেগুলির শরীরে জমা ভাইরাস বনেজঙ্গলেই সীমিত থাকতো৷ মানুষ এই সব প্রাণীর সংস্পর্শে তেমন আসতো না৷ কিন্তু বেড়ে চলা জনসংখ্যা ও জঙ্গল সাফ করে মানুষের বসতি, কলকারখানা ও কৃষিকাজের ফলে সেই পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে৷ ফলে মারাত্মক ভাইরাস মানুষের শরীরেও প্রবেশ করছে৷