বার্লিন থেকে মিউনিখ যান দ্রুতগতির ট্রেনে
বার্লিন থেকে মিউনিখে যাতায়াতের সময় এখন কমে গেছে অনেকখানি৷ ‘জার্মানি ইউনিটি ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট’-এর আওতায় দ্রুতগতির ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে এ পথে৷ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ২৫ বছর৷ খরচ হয়েছে কয়েক বিলিয়ন ইউরো৷
বৃহৎ প্রকল্প
২৫ বছর আগে যখন এ প্রকল্পের শুরু, তখন সমালোচনা হয়েছিল প্রচুর৷ করদাতাদের কোটি কোটি টাকা নষ্ট করে এ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন৷ সব সমালোচনার জবাবে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ চালু হয়েছে দ্রুতগতির এ ট্রেন৷ যার ফলে জার্মানির গুরুত্বপূর্ণ এ দু’টি শহরের মধ্যে যাতায়াতের সময় কমেছে প্রায় দু’ঘণ্টা৷
ব্রিজ ও টানেল
এ প্রকল্পের অধীনে তিনশ’রও বেশি রেল ব্রিজ ও ১৭০টি সড়ক সংযোগকারী ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে৷ তবে দ্রুতগতির এ ট্রেন প্রায় অর্ধেক পথ পাড়ি দেবে মাটির নীচ কিংবা উপত্যকার মধ্যে দিয়ে৷ ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার গতিতে চলা এ ট্রেনে বাতাসের ধাক্কা সামলাতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘হুড স্ট্রাকচার’ তৈরি করা হয়েছে, যাতে কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই ট্রেনটি চলাচল করতে পারে৷
আরো যা জানার আছে
বার্লিন ও মিউনিখ থেকে দিনে তিনবার এই ‘আইসিই স্প্রিন্টার’ চলবে৷ এ ট্রেনে চড়ে মাত্র চার ঘণ্টা সময় লাগবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে৷ অথচ জার্মানির সাধারণ দ্রুতগতি সম্পন্ন দূরপাল্লার ট্রেন আইসিই-তে চড়লে সময় লাগে সাড়ে চার ঘণ্টা৷ ‘আইসিই স্প্রিন্টার’ চলাচল শুরু করায় এ অঞ্চলের প্রায় সব গন্তব্যের ট্রেনের সময়সূচিতে এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন৷
মাটির নীচ দিয়ে চলবে মালবাহী ট্রেন
জার্মানিতে নুরেমব্যার্গ থেকে ফ্যুর্ট হলো মালবাহী ট্রেনের অন্যতম রুট৷ এ প্রকল্পের আওতায় ১৩ কিলোমিটার লম্বা এ যাত্রাপথে নির্মিত হয়েছে এক সুরঙ্গপথ৷ অবশ্য ভবিষ্যতের জন্য এ টানেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কারণ ২০২৫ সালের মধ্যে জার্মানিতে ট্রেনের মাধ্যমেই প্রায় ৬০ শতাংশ মালামাল পরিবহণ করা হবে৷
টিকেটের দাম
গতির সাথে সাথে বার্লিন-মিউনিখের যাত্রা খরচও বাড়ছে৷ ১৫০ ইউরো পর্যন্ত লাগতে পারে দ্রুতগতির এ ট্রেনে চড়তে৷ যার অর্থ, যাত্রীদের এ পথে যাতায়াত খরচ বেড়েছে ১৩ ভাগেরও বেশি৷
পরিবেশ রক্ষায় বিনিয়োগ
শুরু থেকেই দ্রুতগতির এ ট্রেন চালুর সমালোচনা হয়েছে৷ বিশেষ করে পরিবেশের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সমালোচনা করে এসেছে জার্মানির পরিবেশবাদী সংস্থা বিইউএনডি৷ তবে রেলকর্তৃপক্ষের দাবি, এর ফলে চার হাজার হেক্টর আবাদী জমি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, রোপণ করা হয়েছে প্রায় ছয় লাখ গাছ৷
প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
এ প্রকল্প চলাকালিন খুঁজে পাওয়া গেছে হাজার হাজার বছর আগে বাণিজ্যের কাজে ব্যবহৃত পথের সন্ধান৷ এছাড়াও সাত হাজার বছর আগেকার এক স্থাপনা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার নিদর্শন৷ ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন বছরের পুরোনো ফসিলও উদ্ধার হয়েছে সুরঙ্গপথ নির্মাণের সময়৷