1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বার্লিন প্রাচীর পতনের ২২ বছর পূর্তি

৯ নভেম্বর ২০১১

আজ থেকে ঠিক ২২ বছর আগে রক্তহীন এক বিপ্লবের মাধ্যমে ভেঙে পড়েছিল বার্লিন প্রাচীর৷ সেই ঐতিহাসিক ঘটনা শুধু একটি শহরের বিভাজনের মধ্য দিয়েই শেষ হয় নি – পতন ঘটিয়েছিল লৌহ যবনিকারও৷

https://p.dw.com/p/13739
বার্লিন প্রাচীর আটের দশকে (ফাইল ছবি)ছবি: picture alliance/dpa

১৯৮৯ সালের ৯ই নভেম্বর৷ তৎকালীন পূর্ব জার্মানির অস্থির পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে লক্ষ লক্ষ মানুষের চোখ আটকে ছিল টেলিভিশনের পর্দায়৷ সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ পূর্ব জার্মান সরকারের মুখপাত্র গ্যুন্টার শাবভস্কি এক সাংবাদিক সম্মেলনে নানা কথার ফাঁকে হঠাৎ বলে বসলেন, ‘‘এক সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্ব জার্মানির যে কোন নাগরিক সীমান্ত পেরিয়ে দেশের বাইরে যেতে পারেন৷'' এক সাংবাদিকের পাল্টা প্রশ্নের উত্তরে তিনি না জেনেই বলে বসলেন, এই আইন অবিলম্বে কার্যকর হচ্ছে৷ উল্কার বেগে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই মানুষ দলে দলে বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণের দিকে এগিয়ে যায় এবং সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমে যাবার জন্য ভিড় করে৷ সীমান্ত রক্ষীদের কাছে নতুন কোন নির্দেশ না থাকলেও পরিস্থিতির চাপে পড়ে তারা হাল ছেড়ে দেয়৷ সীমান্তের দুই প্রান্তের মানুষ পরস্পরের সঙ্গে মিশে যায়৷ সীমান্ত অগ্রাহ্য করে মুহূর্তের মধ্যে আনন্দ, আবেগ ও উৎসবের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে ৷

তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির সরকারও এই স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনাপ্রবাহের ফলে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়ে৷ এই প্রক্রিয়া থামানো বা নিয়ন্ত্রণের মত ক্ষমতা কারো হাতেই ছিল না৷ প্রায় ৪ দশক ধরে বিভক্ত জাতির মানুষের কণ্ঠেই পুনরেকত্রীকরণের রব উঠতে থাকে৷ প্রাক্তন জার্মান চ্যান্সেলর ও এসপিডি দলের নেতা নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ভিলি ব্রান্ট বলেছিলেন, ‘‘যা একই সূত্রে বাঁধা, তার বিকাশও ঘটে একই সঙ্গে ৷''

Occupy-Bewegung in Berlin Flash-Galerie
ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের সামনে বিক্ষোভছবি: dapd

৯ই নভেম্বর বার্লিনের দুই অংশের জনতার চাপে ভেঙে পড়ল বিভাজনের প্রতীক বার্লিন প্রাচীর৷ মানুষ সেখানেই থেমে থাকে নি৷ এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ ঘটে৷ ১৯৯০ সালের ৩রা অক্টোবর এই প্রক্রিয়া পূর্ণ হয়৷ একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মত মিত্রশক্তির ৩ দেশ – অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নও এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল৷ তার পরের ঘটনাপ্রবাহ তুলনাহীন৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোতে যোগদান – এই আমূল পরিবর্তনের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে৷

বার্লিনে রাইশসটাগ ভবনের উপরের রাতের আকাশে যখন আতশবাজির ফোয়ারা ছড়িয়ে পড়ল, তখন উপস্থিত প্রায় সবারই চোখে আবেগাশ্রু৷ তাঁরা এমন এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ পেলেন, যা শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশের মানুষও কখনো সম্ভব বলে মনে করেন নি৷ এক শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মাধ্যমে সাবেক পূর্ব জার্মানির জনগণ সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে শাসকদের ক্ষমতা থেকে তাড়িয়ে দেয়৷ একটিও গুলি খরচ হয় নি, কোনোরকম হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে নি, কারো কোনো ক্ষতি হয় নি৷ ১৯৯০ সালের ৩রা অক্টোবর জিডিআর বা জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্রের অংশ হয়ে যায়৷ জার্মানি আবার একটি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷

তৎকালীন জার্মান প্রেসিডেন্ট রিশার্ড ফন ভাইৎসেকার সেদিন রাতে জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের সঙ্গে ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়ার যোগসূত্র তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, ‘‘জার্মান হিসেবে আমরা আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন৷ এক ঐক্যবদ্ধ ইউরোপের কাঠামোর মধ্যে থেকে আমরা বিশ্বশান্তির জন্য কাজ করতে চাই৷''

আজ ২২ বছর পর ইউরোপের চালিকা শক্তি হিসেবে জার্মানির ভূমিকা সম্পর্কে আর কোনো সন্দেহই নেই৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ