1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বার্লিনকে নতুন রূপ দিয়েছেন যে স্থপতি

১০ আগস্ট ২০২৩

জার্মানির রাজধানী বার্লিনকে নতুন করে গড়ে তুলতে যে স্থপতি ভূমিকা রেখেছেন, তার নাম অনেকেই জানেন না৷ নিঃশব্দে কাজ করে যাওয়া এই স্থপতি অবশ্য নিজের জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয়দের মধ্যে একজন৷

https://p.dw.com/p/4Uyny
বার্লিনের পস্টডামার প্লাৎস স্টেশন (ফাইল ফটো)
বার্লিনের পস্টডামার প্লাৎস স্টেশন (ফাইল ফটো)ছবি: Wolfram Kastl/picture alliance

নিজের দেশ যুক্তরাজ্যে তেমন একটা কাজ না করলেও বিশ্বজুড়ে তার রয়েছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান৷

ডেভিড চিপারফিল্ড নিঃসন্দেহে একজন সেলিব্রিটি স্থপতি৷ তরুণ খামারি থেকে তিনি পরিণত হয়েছেল শীর্ষ স্থপতিতে৷ এখন তিনি সারা বিশ্ব থেকে নানা কাজের প্রস্তাব পান, জিতেছেন অনেক পুরস্কারও৷ বিশ্বব্যাপী পাঁচটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি৷

কিন্তু ৬৯ বছর বয়সি এই স্থপতির সাফল্যের রাস্তাটি ছিল খানাখন্দে ভরা৷চিপারফিল্ড পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে৷ মার্গারেট থ্যাচারের শাসনামলের সময়টি ছিল রাজনৈতিক এবং সামাজিক অস্থিরতায় পূর্ণ৷ তার আদর্শ ছিল, স্থাপত্যবিদ্যাকেও হতে হবে দায়ীত্বশীল৷

চিপারফিল্ড বলেন, ''স্থাপত্য অনেক কিছু নেয়৷ জমি নেয়, সম্পদ নেয়, শক্তি নেয়৷ তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কী দেয়? আপনি দেয়ার ভর্তি রক্তের দাগ রেখে একটা ভবন তৈরি করতে পারেন না৷ এবং তারপর সেই রক্ত মুছে বলতে পারেন না যে, এই রক্তের প্রয়োজন ছিল৷''

বার্লিনের বিখ্যাত জাদুঘর দ্বীপে ২০০৯ সালে চিপারফিল্ড নয়েস মিউজিয়ামের যুগান্তকারী নতুন মডেল তৈরি করেন। সাহসিকতা এবং বিনয়, এই দুই কাজে লাগিয়ে বার্লিন দেয়ালের পতনের পর থেকে তিনি বার্লিনের চেহারাই বদলে চলেছেন।

তার সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল নয়েস মিউজিয়ামের রহস্যাবৃত চরিত্র বজায় রেখে নতুন চেহারা দেয়া। বার্লিনের বাইরের বাসিন্দা হিসাবে, তাকে শহর এবং এর ইতিহাস বোঝার চেষ্টা করতে হয়েছিল।

ডেভিড চিপারফিল্ড
৬৯ বছর বয়সি এই স্থপতির সাফল্যের রাস্তাটি ছিল খানাখন্দে ভরা ছবি: Lisa Ducret/dpa/picture alliance

তিনি বলেন, ''বার্লিন সমসময়ই নিজেকে নতুন করে উদ্ভাবন করছে। আমি ইতিহাসের মৌলিক পরিবর্তনের সময়ের অংশ হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। শহরটি এই সময়ে নিজেকে খুঁজে পেয়েছে।''

২০১৯ সালে তার কাজ আবার সবার নজর কাড়ে। জেমস-সিমোন-গ্যালারি জাদুঘর দ্বীপের পোর্টাল এবং একীভূত করার উপাদান। শুরুতে মিনিমালিস্টিক এই স্থাপত্য বিতর্ক তৈরি করলেও, পরে প্রশংসা কুড়িয়েছে। চিপারফিল্ড এবং বার্লিন এখন একটি সাফল্যের গল্প। চিপারফিল্ডের মতে, ''আমার মনে হয়, আমরা একটা সংলাপ তৈরি করতে পেরেছি।''

২০২১ সালে তিনি বার্লিনে আরেকটি মাইলফলক তৈরি করেছেন। নিজের সৃজনশীলতার মেন্টর মিয়েস ফান ডের রোয়ের তৈরি নয়ে ন্যাশনাল গ্যালারি সংস্কারের দায়িত্ব পান চিপারফিল্ড। কিন্তু সংস্কার কাজ শুরুর পর ১৯৬০ এর দশকের এই স্থাপনায় কিছু বড় ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ঘটনা তার মনোভাবেও পরিবর্তন এনেছে বলে জানান চিপারফিল্ড। তিনি বলেন, ''নিজের পছন্দের নায়ককে অন্তর্বাস পরা অবস্থায় দেখলে তার প্রতি আপনার মনোভাব পালটে যেতে পারে। আমরা ন্যাশনাল গ্যালারিকে অন্তর্বাসে দেখেছি। এটা কোনো সুন্দর ব্যাপার নয়।''

চিপারফিল্ড বিশ্বব্যাপী সাফল্য অর্জন করেছেন, কিন্তু নিজের দেশ যুক্তরাজ্যে তিনি বছরের পর বছর ধরে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছেন। অবশেষে রয়্যাল একাডেমি অফ আর্টস এর বর্ধিতাংশ ডিজাইন করার পর তাকে নাইটহুড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও তার প্রতি সেখানে রয়েছে শীতল মনোভাব।

অবশ্য এ নিয়ে খুব একটা ভাবেন না এই স্থপতি। তিনি বলেন, ''সত্যি বলতে, আমি ইংল্যান্ডে তেমন কিছু করিনি। আমি নিজেকে পূর্ণ মনে করি এবং ব্রেক্সিটের মাধ্যমে সব কিছু বিচ্ছিন্ন করার পক্ষে না। এটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। আমি আমার ভালোবাসা কিছুটা হলেও হারিয়ে ফেলেছি।''

চিপারফিল্ড জানেন তিনি কী চান। তার নিজস্ব নির্মাণ শৈলি তাকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় স্থপতিতে পরিণত করেছে। ভবন নির্মাণ ও স্থাপত্যের ভবিষ্যত এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তিনি চিন্তিত।

চিপারফিল্ড বলেন, ''স্থাপত্যে স্থায়িত্ব কীভাবে আনা যায় সে সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। আমরা শুধু একটি বিষয়ই জানি, কোনো ভবনকে ভেঙে না ফেললে অনেক শক্তি সাশ্রয় করা সম্ভব।''

তিনি আশা করেন, স্থাপত্য হয়ে উঠবে পরিবেশ বান্ধব। ডেভিড চিপারফিল্ড নিজের পানশালা চালান। গ্যালিসিয়ার তার প্রকল্পটি নিজের শিকড়ের কাছে ফিরে আসার মতো। মাটির একজন সন্তান হিসাবে যিনি স্থাপত্যকে নিঃশব্দে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়।

আন্দ্রেয়া হোরাখ/এডিকে