বাসভবন ছেড়ে পালালেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট
৯ জুলাই ২০২২প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চেয়ে হাজারে হাজারে বিক্ষোভকারী তার বাসভবন ঘিরে ফেলে, পরে ঢুকেও পড়েন তার ভবনে৷ শ্রীলঙ্কার রাজধানীসহ গোটা দেশজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত৷ অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের জন্য সরকার সম্পূর্ণরূপে দায়ী, এমনটাই দাবি করেছেন তারা৷
বিক্ষোভকারীরা শনিবার প্রেসিডেন্টের ভবনের মূল প্রবেশদ্বার বেয়ে উঠে পড়েন৷ প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকেনিরাপদে সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত চত্বরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনারা বিক্ষোভ সামলাতে শূন্যে গুলি ছুড়তে বাধ্য হন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ প্রতিরক্ষা সূত্র সংবাদসংস্থা এএফপিকে এমনটাই জানিয়েছে৷
প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, ‘‘প্রেসিডেন্টকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ তিনি এখনও রাষ্ট্রপতি, তাকে একটি সামরিক ইউনিট দ্বারা সুরক্ষিত করা হচ্ছে৷''
রাজাপাকসে পদত্যাগ করলে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে পারেন৷ বিক্রমাসিংহের কার্যালয় জানিয়েছে, রাজনৈতিক সংকটের ‘দ্রুত সমাধান' নিয়ে আলোচনার জন্য মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে৷
বিক্ষোভকারীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ ফুটেজ সম্প্রচার করে যাতে দেখা যাচ্ছে শত শত লোক প্রেসিডেন্টের ভবন দিয়ে হেঁটে চলেছেন৷ রাষ্ট্রীয় এই ভবনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে৷ শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অন্যতম প্রধান প্রতীক এটি৷ কর্মকর্তারা বলেছেন যে রাজাপাকসের প্রস্থান প্রশ্ন তুলেছে যে তিনি পদে থাকতে চান কি না৷
একজন শীর্ষপদস্থ বেসামরিক কর্মী এএফপিকে বলেছেন, ‘‘আমরা নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি৷ আমরা এখনও জানি না প্রেসিডেন্ট কোথায় আছেন, তবে আমরা জানি তিনি শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন এবং নিরাপদে রয়েছেন৷
সংবাদসংস্থা এপিকে, সরকারের একজন মুখপাত্র মোহনা সমরানায়েক বলেছেন, তার কাছে রাজাপাকসের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই৷ এপি জানিয়েছে, রাজাপাকসে তার বাসভবনের ভিতরে রয়েছেন কি না তা স্পষ্ট নয় তবে ফুটেজে প্রেসিডেন্টের ভবনের ভিতরে শত শত মানুষের জমায়েত দেখা গিয়েছে৷ কেউ রয়েছেন বাইরের মাঠে, কেউ বাগানের পুলে ডুব দিচ্ছেন এবং অনেকেই আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভবন চত্বরে, এমন একাধিক ফুটেজ সামনে এসেছে৷
সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গিয়েছে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে, ''গোটা বাড়ি যাও'' বলে স্লোগান দিচ্ছেন৷ ভবনের বাইরে ব্যারিকেড উল্টে দিয়ে একটি খুঁটিতে কালো পতাকা উত্তোলন করতে দেখা গিয়েছে৷বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে হাতাহাতির ফলে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ৩৪ জন আহত হয়েছেন৷বিক্ষোভকারীরা বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়৷ কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতালের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুই জন আহত ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক৷
সংবাদসংস্থা এএফপিকে কলম্বোর প্রধান হাসপাতাল জানিয়েছে, কাঁদানে গ্যাসের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ১৪ জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে৷ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রা ফুরিয়ে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কা কয়েক মাস খাদ্য ও জ্বালানি সংকটে ভুগছে৷ বিদ্যুৎসংকটের পাশাপাশি ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধিও রয়েছে দেশটিতে৷ শনিবার হাজার হাজার মানুষ রাজধানীতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷
পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেয় বিরোধী দল, অধিকারকর্মী এবং বার অ্যাসোসিয়েশন৷ এরপর শুক্রবার জারি করা কারফিউ আদেশ প্রত্যাহার করে পুলিশ বিভাগ৷ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা শনিবারের সমাবেশের জন্য কলম্বোতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রেন চালাতে বাধ্য করেছে রেল কর্তৃপক্ষকে৷
এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘‘কারফিউ কোনো বাধা নয়৷ বরং এর ফলে আরো বেশি লোক রাস্তায় নামার উৎসাহ পেয়েছেন৷ কর্তৃপক্ষকে কলম্বো পর্যন্ত ট্রেন চালাতে বাধ্য করেছেন যাত্রীরা৷''
দ্বীপরাষ্ট্রে পেট্রোলের সরবরাহ প্রায় শেষ৷ তবে প্রধান বিরোধী দল সমর্থিত বিক্ষোভকারীরা রাজধানীতে যাতায়াতের জন্য ব্যক্তিগত বাস ভাড়া করেছিলেন৷সামগ্রিক সংকটের মোকাবেলায় সরকারের ভূমিকার প্রতিবাদ করছেন বিক্ষোভকারীরা৷ প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে রাজাপাকসের অফিসে বাইরে শিবির অবস্থান করেছেন তারা৷
রাজাপাকসের সরকারি বাসভবনে পুলিশি প্রহরা রয়েছে৷ পাশাপাশি পাহারা আরো কঠোর করতে শুক্রবারই অ্যাসল্ট রাইফেলে সজ্জিত সেনাদের কলম্বোতে পাঠানো হয়েছিল৷
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টকে রক্ষার জন্য প্রায় ২০ হাজার সেনা এবং পুলিশ অফিসার মোতায়েন করেছে৷ শ্রীলঙ্কার ৫১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণখেলাপি রয়েছে৷ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে বেল আউট চেয়েছে শ্রীলঙ্কা৷ আর্থিক সংকটের মুখে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া দেশটি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না বলে জানিয়েছে৷
মে মাসে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বাইরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্যকরে রাজাপাকসের অনুগতরা হামলা চালানোর পর দেশজুড়ে সংঘর্ষ শুরু হয়৷ সংঘর্ষে নয়জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং শতাধিক জন আহত হন৷১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়া শ্রীলঙ্কায় এর আগে এমন ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা দেখা যায়নি৷
আরকেসি/এডিকে (এএফপি, এপি)