বাড়ির ছাদে অন্যরকম এক বাগান

পেশায় মেডিকেল বায়োলজিস্ট, নেশায় বৃক্ষপ্রেমী৷ গ্রামে বেড়ে ওঠা এই নারীর গাছের প্রতি রয়েছে এক নির্মল ভালোবাসা৷ শহরে এসেও তাই তিনি ভুলতে পারেননি গাছপালা৷ নিজের বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন নানা রকম ফল, ফুল আর সবজির বাগান৷

ধানমণ্ডির ১২/এ সড়কে সাড়ে ১২ কাঠা জায়গাজুড়ে বিশাল বাড়িটির নাম টোনাটুনি৷ প্রয়াত স্বামী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এ এইচ এম ফিরোজকে নিয়ে এ বাড়ি গড়ে তুলেছিলেন প্রায় পনের বছর আগে৷ বাড়ির বিভিন্ন স্তরে পাঁচটি ছোট-বড় ছাদ রয়েছে৷ প্রতিটি ছাদেই ফেরদৌস আরা গড়ে তুলেছেন নানা রকম গাছপালাসমৃদ্ধ এক বাগান৷ বাড়িটিকে ছোটখাট একটি নগরঅরণ্য বললে ভুল হবে না৷ 

এই বাড়িতে সব মিলিয়ে কত প্রজাতির গাছ রয়েছে তার হিসেব ফেরদৌস আরার জানা নেই৷ দেশে-বিদেশে যেখানেই যে গাছপালা চোখে লেগেছে সেসব তিনি এনে লাগিয়েছেন তাঁর ছাদে৷ 

ফেরদৌস আরা তাঁর একটি ছাদে তৈরি করেছেন বিশাল একটি গ্রিন হাউস৷ সেখানে তিনি মূলত নানা রকমের সবজি চাষ করেন৷ 

ফেরদৌস আরার পরিবারের সবজির চাহিদার বেশিরভাগই পূরণ হয় ছাদবাগান থেকে৷ ছাদে তিনি চাষ করেন শিম, বরবটি, বেগুন, টমেটো, কাকরোল, ঢেঁড়শ, করলা, লাউ, নানা রকমের মরিচ, পুদিনা পাতাসহ অনেক রকম সবজি৷ 

বাংলাদেশে ফলে মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিনের ব্যবহারের পাশাপাশি নানা রাসায়নিক মিশ্রণের কারণে ফেরদৌস আরা নিজের ছাদেই শুরু করেন নানা রকমের ফলের চাষ৷

ডা. ফেরদৌস আরা তাঁর ছাদবাগানে ফলান আম, আমড়া, পেয়ারা, জাম, কলা, জাম্বুরা, কদবেল, বরই, জামরুলমহ নানা রকম দেশীয় মৌসুমী ফল৷ এমনকি ছাদে তিনি সুপারি গাছও বড় করে তুলেছেন৷ 

শুধু দেশি ফলই নয়, নিজের ছাদবাগানে ফেরদৌস আরা ফলিয়েছেন আঙুর, আপেল, ব্ল্যাকবেরি, পারসিমন, রামবুটান, লাল-হলুদ ড্রাগনসহ নানা বিদেশি ফল গাছ৷ অনেক গাছে ইতোমধ্যে ফলও পেয়েছেন৷ 

ফেরদৌস আরা তাঁর ছাদবাগানে লাগিয়েছেন নানা রকম ফুল গাছও৷ দেশি-বিদেশি নানা দুর্লভ ফুল শোভা বাড়িয়েছে তাঁর এই বাগানের৷ 

ফেরদৌস আরার তিন তলার ছাদে রয়েছে বিশাল এক রক্ত কাঞ্চন গাছ৷ গাছটি যখন ফুলে ফুলে ভরে যায়, তখন অনেকেই অবাক হন তা দেখে৷ 

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের জলাশয়ের পাশে জন্মে হিজল গাছ৷ বর্ষা মৌসুমে ফোটা হিজল ফুল ফেরদৌস আরার খুবই পছন্দ৷ দ্বিতীয় তলার ছাদে তিনি তাই ছোটখাট একটি চৌবাচ্চা তৈরি করে তাতে লাগিয়েছেন হিজল গাছ৷ এ চৌবাচ্চায় মাছও চাষ করেন৷ 

এই ছাদবাগানের এক পাশে তিনি লাগিয়েছেন নানা রকমের এয়ারপ্ল্যান্ট আর অর্কিড৷ বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করেছেন এগুলো৷

বাড়ির প্রতিটি বারান্দাতেও নানা রকম গাছ লাগিয়েছেন ফেরদৌস আরা৷ বিভিন্ন অর্নামেন্টাল প্ল্যান্টে ভরে আছে বারান্দাগুলো৷ 

বাড়ির সিঁড়িতেও রয়েছে রকমের গাছ৷ ছায়াতে জন্মে এ রকম নানা ধরনের অর্নামেন্টাল গাছ রয়েছে সিঁড়িসহ ঘরের অন্যান্য খালি জায়গাগুলোতে৷