বায়ার্ন বনাম মাদ্রিদ: দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জায়ান্টের লড়াই
আবারো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মুখোমুখি বায়ার্ন মিউনিখ ও রেয়াল মাদ্রিদ৷ দুই ক্লাবের প্রতিদ্বন্দ্বিতার গল্পটি বেশ পুরোনো৷ ক্ল্যাসিক সব ম্যাচে রোমাঞ্চকর সব মুহূর্তের জন্ম দিয়েছে দুই ইউরোপিয়ান জায়ান্ট৷
১৯৭৫-৭৬: ম্যুলারে সমাধি মাদ্রিদের
দুই ক্লাবের মুখোমুখিতে এই প্রথমবার বায়ার্নে চাপা পড়ে মাদ্রিদ৷ ইউরোপিয়ান কাপের সেমিফাইনালের দুই লেগে জার্মান কিংবদন্তী ফুটবলার গার্ড ম্যুলার (বাঁয়ে) তিন গোল করেন৷ এই তিন গোলে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ফাইনালে পৌঁছে যায় বাভারিয়ানরা৷ সেখানে সেইন্ট এটিয়েনেকে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ইউরোপিয়ান কাপ জেতে মিউনিখের ক্লাবটি৷
১৯৮৬-৮৭: হুয়ানিতোর পা ম্যাথিউসের মুখে
১৯৮৭ সালে ইউরোপিয়ান কাপের সেমিফাইনালে লোথার ম্যাথাউস ও চেন্ডোর সংঘর্ষের পর ম্যাথাউস মাটিতে পড়ে যান৷ এরপর হুয়ানিতো (সবার বাঁয়ে) প্রথমে ম্যাথাউসের কাঁধে ও পরে মুখে পা দিয়ে আঘাত করেন৷ স্বাভাবিকভাবেই তার জন্য লাল কার্ড দেখেন৷ বায়ার্ন ৪-১ গোলে ম্যাচ জিতে ফাইনালে পৌঁছায়৷ তবে ফাইনালে হেরে যায় পোর্তোর কাছে৷
১৯৮৭-৮৮: রেয়ালের প্রতিশোধ
এই আসরে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে মিউনিখে ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় বায়ার্ন৷ তবে রেয়াল ম্যাচে ফিরে আসে এবং দু’টি গোল পরিশোধ করে৷ পরের লেগে বার্নাব্যুতে রেয়াল ২-০ গোলে ম্যাচ জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে৷
১৯৯৯-২০০০ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতার তকমা
এই আসরে বায়ার্ন-রেয়াল মুখোমুখি হয় চারবার৷ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই আসরে গ্রুপ পর্বে দুইবার রেয়ালকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ‘দ্য ব্ল্যাক বিস্ট’ তকমা পায় বায়ার্ন৷ তবে শেষ হাসি হাসে স্প্যানিশ জায়ান্টরা৷ কোয়ার্টার ফাইনালে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে গ্যালাকটিকোরা৷
২০০০-০১: এবার বায়ার্ন
দুই লেগেই জিওভানে এলবারের গোলে বায়ার্ন সেমিফাইনালের মুখোমুখিতে ৩-১ ব্যবধানে জয় পায়৷ এই আসরের ফাইনালে ভ্যালেন্সিয়াকে পেনাল্টি শ্যুটআউটে ৫-৪ ব্যবধানে হারালে তাদের ২৫ বছরের ইউরোপ সেরা হবার অপেক্ষার অবসান হয়৷
২০০১-০২: মাদ্রিদের জয়
এবার সেমিফাইনালে প্রথম লেগের হাফ টাইমে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও পরে ২-১ ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বায়ার্ন৷ কিন্তু দ্বিতীয় লেগে হেরে যায় ২-০ গোলে৷ রেয়াল ফাইনালে আরেক জার্মান ক্লাব লেভারকুজেনকে ২-১ গোলে হারিয়ে তাদের ষষ্ঠ শিরোপা হাতে তুলে নেয়৷
২০০৩-০৪: জিজুর ঝলক
এবার রাউন্ড অফ সিক্সটিনে দেখা হয় দুই দলের৷ প্রথম লেগ ১-১ গোলে ড্র হলেও বার্নাব্যুতে দ্বিতীয় লেগে কিংবদন্তী জিনেদিন জিদানের একমাত্র গোলে জয় পায় রেয়াল৷
২০০৬-০৭: বিদ্যুৎগতির মাকায়
প্রথম লেগ রেয়াল মাদ্রিদ জেতে ৩-২ গোলে৷ দ্বিতীয় লেগে ঘটে অবিস্মরণীয় ঘটনা৷ ডাচ মায়েস্ত্রো রয় মাকায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সবচেয়ে দ্রুতগতির গোলটি করেন৷ খেলা শুরুর মাত্র ১০.২ সেকেন্ডে গোল করেন তিনি৷ বায়ার্ন ম্যাচ জেতে ২-১ গোলে৷ তবে অ্যাওয়ে গোলে এগিযে থাকায় তারা কোয়ার্টার ফাইনালে যায়৷
২০১১-১২: নয়ার নামের দেয়াল
বায়ার্নে তারকা গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ারের প্রথম সিজন ছিল এটি৷ তার নৈপুণ্যের ঝলক দেখা যায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে৷ দুই লেগই ২-১ গোলে ড্র হবার পর পেনাল্টি শ্যুটআউট হয়৷ সেখানে নয়ার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডাো ও কাকার মতো তারকাদের স্পটকিক রুখে দেন৷ বাসটিয়ান শোয়াইনস্টাইগার জয়সূচক পেনাল্টি গোল করেন বায়ার্নের পক্ষে৷
২০১৩-১৪: বায়ার্নের লজ্জা
পেপ গার্ডিওলার বায়ার্নকে লজ্জায় ফেলে বাভারিয়ানদের ৫-০ গোলে হারায় ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো অ্যান্ড কোম্পানি৷ এমনকি দ্বিতীয় লেগে হোম ম্যাচেও ৪-০ গোলে হারে বায়ার্ন৷ রেয়াল এ বছর তাদের দশম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইউরোপিয়ান কাপ শিরোপা জেতে৷
২০১৭-১৮: কিমিশের গোলের পরও
২০২৪-এর আগে সবশেষ দুই দল ২০১৭-১৮ মৌসুমে মুখোমুখি হয়৷ নিজের মাঠে বায়ার্ন প্রথম লেগে এগিয়ে থেকেও ২-১ গোলে হেরে যায়৷ দ্বিতীয় লেগেও জশুয়া কিমিশের গোলে এগিয়ে যায়৷ তবে কারিম বেনজেমার গোলে খেলায় ফেরে রেয়াল৷ এ মৌসুমে টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জেতে রেয়াল৷