বিএনপি-র আন্দোলন নিয়ে সংশয়
২৫ জুলাই ২০১৪এই অবস্থায় আন্দোলনের সফলতা নিয়ে নেতারা নিজেরাই আছেন সংশয়ে৷ বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য দলের ভেতরের এসব সমস্যাকে খুব একটা বড় করে দেখছেন না৷ তিনি বলেছেন, আন্দোলন শুরু হলে সব ঠিক হয়ে যাবে৷ আর দলের ঢাকা মহানগরের নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস দাবি করেছেন, দলের মধ্যে কোন গ্রুপিং নেই, এটা মিডিয়ার সৃষ্টি৷
সম্প্রতি মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর বিএনপি-র কমিটির গঠন করা হয়েছে৷ নতুন কমিটি গঠনের ৬ দিন পর বৃহস্পতিবার নতুন নেতৃত্বকে নিয়ে শেরে বাংলা নগরে জিয়ার সমাধিতে ফুল দিতে যান বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ সেখানেই ঘটে বিব্রতকর পরিস্থিতি৷ শত শত কর্মীর সামনেই নেতারা ধাক্কাধাক্কি করেন, নেত্রীরা চুলোচুলি করেন৷
প্রত্যক্ষদর্শী বিএনপি কর্মীরা জানান, বেলা পৌনে ১২টার দিকে মির্জা ফখরুল জিয়ার সমাধিস্থলে হাজির হন৷ এ সময় মহাসচিবের পাশে দাঁড়ান ঢাকা মহানগরের নতুন কমিটির সদস্য সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস ও আবদুল আউয়াল মিন্টু৷ এই সময় পেছনে দাঁড়ানো নতুন কমিটির সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায়কে ঠেলে ফখরুলের পাশে দাঁড়ালে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা৷ এতে গয়েশ্বর রাগান্বিত হয়ে চলে যেতে চান৷ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সোহেলকে ধমক দেন৷ তখন ফখরুল ও আব্বাস বুঝিয়ে গয়েশ্বরকে ঠেকান৷
মির্জা ফখরুল সমাধিস্থলে আসার কিছু সময় আগে সাবেক সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনির সঙ্গে ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিমা আখতার কেয়ার কথা-কাটাকাটি হয়৷ কেয়া সাবেক সাংসদ মনির ওপর চড়াও হয়ে তার চুল ধরে টানতে থাকেন এবং ঘুষি মারেন৷ একই সময়ে মহিলা দলের সভানেত্রী নুরী আরা সাফাকে অন্য এক নারী নেত্রী ঠেলা দিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়৷ তখন উপস্থিত অন্য নেত্রীরা এগিয়ে গিয়ে তাদের নিবৃত্ত করেন৷
জিয়ার সমাধিস্থলে উপস্থিত বিএনপি-র একজন সিনিয়র নেতা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা নিজেরাই সংগঠিত না৷ কী ভাবে আন্দোলনে যাব? আর এভাবে নিজেরা মিলমিশ হয়ে না হয়ে আন্দোলনে গেলে কোন রেজাল্ট আসবে না৷ বরং সরকার আমাদের গ্রেফতার করে এক এক করে জেলে পুরবে৷ এভাবে আন্দোলনে যাওয়ার চেয়ে না যাওয়াই ভালো৷ আর আন্দোলনে যেতে হলে গুছিয়ে যাওয়া উচিত৷ এসব কথা নিজের নামে মিডিয়ায় আসলে নেতারা ক্ষুব্ধ হন৷ তাই এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকি৷ যথাসম্ভব চুপ থাকারও চেষ্টা করি৷''
জিয়ার সমাধিতে ফুল দেয়ার পর মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘‘নির্দলীয় সরকারের দাবিতে তাদের এই আন্দোলন বিজয় না হওয়া পর্যন্ত চলবে৷ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমরা গত ৫ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছি৷ ৫ জানুয়ারি প্রহসনের যে নির্বাচনটি সরকার করেছে, তাতে জনগণ ভোট কেন্দ্রে যায়নি৷ ঈদের পর আবার আন্দোলন শুরু হবে৷ আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, আন্দোলন চলবে৷ বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব৷''
বিএনপি-র আন্দোলনে জনসমর্থন নেই বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে৷ এর বড় প্রমাণ হচ্ছে – গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে যায়নি৷ যারা অনৈতিকভাবে ক্ষমতায় বসেছে, তারাই এরকম বক্তব্য দেন৷ জনগণের আন্দোলনে তারা ভেসে যাবেন৷''