বিএনপি ছাড়াই মন্ত্রিসভার শপথ
১৮ নভেম্বর ২০১৩
তত্ত্বাবধায়ক নয়, সরকার শেষ পর্যন্ত সংবিধানের অধীনেই সর্বদলীয় সরকারের নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ এর অংশ হিসেবে সোমবার বিকেল ৩টায় বঙ্গভবনে সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নিচ্ছেন৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার বিষয়টি জানান৷ একই সঙ্গে তিনি জানান যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এই সর্বদলীয় সরকারের অধীনেই হবে৷ মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইঞা জানিয়েছেন, সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভা আকারে কিছুটা ছোট হবে৷ অবশ্য সোমবার যে মন্ত্রিসভা শপথ নেবে, তার পরে আরো সম্প্রসারণ করা হতে পারে৷ তবে কত সদস্যের সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা হবে, তা তিনি জানাননি৷ জানা গেছে, বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য ছাড়াও বাইরে থেকে নতুন মুখ জায়গা পাবে এই মন্ত্রিসভায়৷ আর আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পাটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভায় অংশ নেবে৷ বর্তমান মন্ত্রিসভার যাঁরা সর্বদলীয় মন্ত্রিসভায় থাকবেন, তাঁদেরগুলো বাদ দিয়ে বাকি মন্ত্রীদের পদত্যাগ-পত্র রবিবার রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তাঁরা সবাই ১১ই নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগ-পত্র জমা দেন৷
এদিকে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে বেরিয়ে গেছে৷ সোমবার সকালে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন এরশাদ৷ তবে জাতীয় পার্টি নতুন জোট করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে৷ এরশাদ বলেছেন, তাঁর দল বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচন করবে৷ আর জাতীয় পার্টি সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় অংশ নিচ্ছে৷ এরশাদ বিএনপিকেও সর্বদলীয় সরকারে অংশ নিয়ে নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ এরশাদ বলেছেন, শেষ পর্যন্ত তিনি যদি দেখেন যে নির্বাচনে কারচুপি হবে তাহলে নির্বাচন বর্জন করবেন তিনি৷ তাঁর মতে, নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারকে হটাতে হবে৷ এছাড়া আর কোনো পথ নেই৷
সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী হতে পারেন ২০ জন৷ তবে ১৫ জন মন্ত্রী নিয়ে এই সরকার যাত্রা শুরু করতে পারে৷ বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার চিন্তা মাথায় রেখে পাঁচজন মন্ত্রীর পদ খালি রাখা হতে পারে৷ সংসদে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব আছে, তারাই সর্বদলীয় সরকারে থাকতে পারবে৷ আর এই সর্বদলীয় সরকারের প্রধান হওয়ার কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার৷ তবে তিনিই প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন কিনা, তা নিশ্চিত নয়৷ কারণ গত সপ্তাহে তিনি বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব নন, শান্তি চান৷ জানা গেছে, বিএনপি সর্বদলীয় সরকারে শেষ পর্যন্ত যোগ দিতে সম্মত হলে নতুন কোনো চমক দেখা যেতে পারে৷
এদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেয়ার কোনো রকম সম্ভাবনাকে নাকোচ করে দিয়েছে৷ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সর্বদলীয় মন্ত্রিসভাকে মহাজোটের মন্ত্রিসভা অভিহিত করে বলেন, এই মন্ত্রিসভায় বিএনপির যোগ দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷ তিনি বলেন, সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে তামাশা করছে৷ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে সরকারকে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল৷
সর্বদলীয় মন্ত্রিসভায় কাঁরা থাকছেন
নতুন মন্ত্রিসভায় কাঁরা থাকছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাঁদের নাম না জানালেও বেশ কয়েকজনের নাম জানা গেছে৷ বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্য থেকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু (জাসদ), স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনন্তুপ্ত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর বহাল থাকতে পারেন৷ আওয়ামী লীগ থেকে নতুন মুখ হিসেবে আসতে পারেন আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ৷ জাতীয় পার্টি থেকে রওশন এরশাদ, রহুল আমিন হাওলাদার, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মজিবুল হক চুন্নু ও সালমা ইসলাম৷ ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে রাশেদ খান মেনন ও জাসদের মাইনুদ্দীন খান বাদল৷ তবে বর্তমান মন্ত্রিসভার যাঁরা নতুন মন্ত্রিসভায় থাকবেন, তাঁদের শপথ নিতে হবে না৷
ওদিকে নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ নির্বাচনের প্রস্তুতি জানাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা চলতি সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ৷ আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে নির্বাচন হওয়ার কথা৷