1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএনপির ‘কঠোর আন্দোলন' কবে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ মার্চ ২০২৩

চলতি বছরের ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরকেই সুবিধাজনক মনে করছে৷ নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির পরিকল্পনা কী?

https://p.dw.com/p/4OYBr
Bangladesch Dhaka | Oppositionspartei BNP und Verbündete demonstrieren mit Menschenketten  für ihren 10-Punkteplan
ছবি: Mortuza Rashed/DW

বিএনপি নেতারা অবশ্য মনে করেন যেকোনো সময় একটা কিছু ঘটে যেতে পারে, পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে৷ ডিসেম্বরের মধ্যেই কঠোর কর্মসূচি দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করে নেয়ার ব্যাপারে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷

বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলনে নানা কর্মসূচি দিচ্ছে৷ অন্য বেশ কয়েকটি দল ও জোটও এসেছে যুগপৎ আন্দোলনের ছাতার নিচে৷ আপাতত সমাবেশ, পদযাত্রা, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচিই দিচ্ছে দলটি৷ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বারবার দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে তেমন কোনো কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয় নি৷ বিএনপি মাহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হরতাল-অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচিও দলটির পরিকল্পনায় রয়েছে৷ কিন্তু সেটা কবে?

আন্দোলনের জন্য কতটা সময় পাচ্ছে বিএনপি?

যদি ডিসেম্বরের নির্বাচন হয় তাহলে বিএনপির হাতে আন্দোলনের সময় আছে আর মাত্র চার-পাঁচ মাস৷ মার্চ মাসেই রোজা শুরু হচ্ছে৷ রোজার এক মাসে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত বড় কোনো কর্মসূচি দেয় না৷ রেজার পরে ঈদুল ফিতর৷ ঈদুল ফিতরের পরের অন্তত ১৫ দিন বলতে গেলে ঢাকা শহর বেশ খালিই থাকে৷ তারপর থেকে এগিয়ে আসতে থাকে ঈদুল আজহা৷ সেটাও  দেশের মানুষকে প্রায় একমাস ব্যস্ত রাখে৷ জুন-জুলাইয়ে থাকবে বর্ষাকালের প্রভাব৷ এই মাসগুলোতে রাজনৈতিক দলের বাইরে আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়াটা বেশ কঠিন হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷

সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে৷ নির্বাচনের তফসিলও এই সময়ের মধ্যেই ঘোষণা করতে হয়৷ বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি৷ সেই হিসাবে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে ভোট হতে হবে৷ অর্থাৎ, নির্বাচনের সময় বাকি আছে কম-বেশি ১০ মাস৷ তার মধ্যে সামাজিক ও ধর্মীয় নানা কারণে তিন-চার মাস বড় কোনো আন্দোলনের জন্য উপযোগী মনে করে না রাজনৈতিক দলগুলো৷ নির্বাচনের তফসিল যদি ২১ দিন হাতে সময় রেখেও করা হয় তাহলে সেখানেই এক মাস চলে যাবে৷

এদিকে, বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গে মিলিয়ে কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগও৷ তারা ঘোষণা করেছে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে৷ কৌশল হিসেবে চলতি মার্চ মাস থেকেই তারা নির্বাচনের কাজ শুরুর জন্য তৃণমূলকে নির্দেশ দিয়েছে৷ প্রার্থীও চূড়ান্ত করা শুরু হয়েছে৷ যাদের নিয়ে কোনো সমস্যা নেই তাদের এরইমধ্যে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে৷ ঢাকার নেতারা এলাকামুখী হওয়া শুরু করেছেন৷ যার রেড লাইনে আছেন তারাও ইমেজ পুনরুদ্ধার করে মনোনয়ন বহাল রাখতে যার যার নির্বাচনি এলাকায় তৎপর হওয়া শুরু করেছেন৷ সরকার ও আওয়ামী লীগের একটি কৌশল হচ্ছে এবার আগেভাগেই সারাদেশে নির্বাচনের হাওয়া বইয়ে দেয়া৷

চার-পাঁচ মাসের আন্দোলনে সরকার ভয় পেয়েছে: শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন কীভাবে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নেবে বিএনপি?

রোজা শুরুর আগে বিএনপির যে আন্দোলন কর্মসূচি আছে তারমধ্যে ১০ দফা দাবিতে আগামী ১৮ মার্চ সারাদেশে মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বিএনপি৷ গত শনিবার সকালে নয়া পল্টনে এক ঘণ্টার মানববন্ধন শেষে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ তবে ধারাবাহিক কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি রোজার কারণে৷

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘আমরা এখন আসলে জনমত তৈরিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি৷ কিন্তু যেকোনো সময় খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে৷ আমরা হরতাল অবরোধের মত কর্মসূচিও দেব৷ আমাদের আন্দোলন কতটা কঠোর হবে তা নির্ভর করছে সরকারের মনোভাবের ওপর৷ কখনো মনে হয় সরকার জনগণের দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করবে আবার কখনো মনে হয় সরকার ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করতে চায়৷ সরকার একটা দোদুল্যমান অবস্থায় আছে৷ তবে গত চার-পাঁচ মাসের আন্দোলনে সরকার ভয় পেয়েছে৷ এর আগে তারা বলতো বিএনপির কোমর ভেঙে গেছে৷''

তার কথা, ‘‘রোজার মাসে  মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগী করেন৷ কিন্তু তাই বলে তারা এই মাসে মানুষের কথা ভাবেন না তা নয়৷ রোজার মাসেও আন্দোলন হতে পারে৷ মুক্তিযুদ্ধের সময়ও রোজা এসেছে, ঈদ এসেছে তাই বলে  মুক্তিযুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায়নি৷''

তিনি বলেন, ‘‘১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত তখনকার আওয়ামী লীগ মাঠের আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলো৷ কিন্তু ২৫ মার্চের দিবাগত রাতের ঘটনায় পরিস্থিতি কিন্তু উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে যায়৷ তাই এখনকার পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে বলা যায় না৷ যেকেনো সময় ভিন্ন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে৷''

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘এটা নিয়ে আমি এককভাবে কোনো মন্তব্য করব না৷ এ নিয়ে আমাদের নানা ধরনের বৈঠক হচ্ছে৷''

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘এই সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে যদি তাদের অধীনে নির্বাচন করতে চায় বিএনপি কোনোভাবেই হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না৷ আমাদের ১০ দফা দাবির এক নাম্বার দাবি হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ আমরা আমাদের দাবি ডিসেম্বরের আগেই আদায় করবো৷ সেটা হলে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘দাবি আদায়ে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দেবো৷ যে সময় আছে তাতে আমাদের আন্দোলন সফল করার জন্য যথেষ্ট৷ আর সরকার জোর করে কিছু করতে গেলে তার পরিণতি কী হবে বলা যায় না৷''

২০২২ সালের ছবিঘর