প্রত্যয়, প্রস্তুতি আর প্রতিরোধ
২৪ অক্টোবর ২০১৩বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, যে কোনো মূল্যে তারা শুক্রবার সমাবেশ করবেই৷ এ সময় তিনি সমাবেশ ঠেকাতে সরকারের নানা প্রতিবন্ধকতা, হুমকি-ধমকি ও গণগ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান৷ সরকারের আচরণকে অবৈধ ও অন্যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামীকালের সমাবেশকে কেন্দ্র করে হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ পুলিশ সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে হানা দিচ্ছে, আসবাব ভাঙচুর করছে, করছে দুর্ব্যবহার৷ এরই মধ্যে কয়েক'শ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, ‘‘নয়াপল্টনে অনেক আগেই আমরা সমাবেশ ডেকেছি৷ দ্বিধাহীন চিত্তে বলছি যে এই সমাবেশ হবে৷ এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার৷ সারাদেশে সভা-সমাবেশ বন্ধ করে সরকার গণতন্ত্র ও জনগণের সাথে যুদ্ধ শুরু করেছে৷ একতরফা কেউ টিকে থাকতে পারেনি৷ এ সরকারও পারবে না৷'' তাই সমঝোতার পথে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘‘যদি না আসেন তবে আপনি গণতন্ত্রের ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হবেন৷''
ব্রিফিংয়ের পরই বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন৷ বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুকের নেতৃত্বে চার সদস্যের ওই প্রতিনিধি দল শুক্রবারের সমাবেশের অনুমতি দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন৷ জবাবে পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ বলেন, কোনো ধরনের সহিংসতা হবে না এমনটি আশ্বস্ত হলে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে৷
বিএনপিপন্থি শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটকে বৃহস্পতিবার একটি সমাবেশের অনুমতি দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে পুলিশ কমিশনার বলেন, এটি শান্তিপূর্ণভাবে হলে পরের দিনের সমাবেশের বিষয়টিও বিবেচনা করবে পুলিশ৷ বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের ঐ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন৷ সমাবেশটি জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে৷
বিএনপির প্রতিনিধি দলটি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করার পর, পুলিশের মুখপাত্র যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ সব বিষয় নিয়ে কথা বলেন৷ পরে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, শুক্রবার বেলা দু'টোয় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে৷ ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি এখনও দেয়া হয়নি৷ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা নাগরিকদের নিরাপত্তা, জানমাল রক্ষা ও সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি৷ এর আগে বিএনপি ২৫শে অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চ ও নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত অনুমতি পায়নি৷ তাই আবারো তারা অনুমতি চেয়েছে৷
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে থাকবে৷ তারা বিএনপির অযৌক্তিক সব কর্মসূচি প্রতিহত করবে৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন৷ এর মাধ্যমে তিনি দেশবাসীর উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠার অবসান ঘটিয়েছিলেন৷ পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পাঁচদিন পর বিরোধীদলীয় নেত্রী নির্দলীয় সরকারের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা অবাস্তব ও অসাংবিধানিক৷
বিরোধীদলীয় নেত্রীর ক্ষমা করে দেয়ার ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করে হানিফ বলেন, ক্ষমা করার আপনি কে? আপনার কাছে কে ক্ষমা চেয়েছে? তিনি আরো বলেন, আপনারা যদি ২৫শে অক্টোবর মধ্যযুগীয় কায়দায় দা-কুড়াল দিয়ে সন্ত্রাসী তত্পরতা চালান তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ এ সময় স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক অভিযোগ করে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিএনপি রাজধানীতে কিলার ও সন্ত্রাসী ঢুকাচ্ছে৷ তিনি নেতাকর্মীদের অতন্দ্র প্রহরীর মতো বিরোধী দলের নৈরাজ্যকে রুখতে আহ্বান জানান৷