1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের দ্বন্দ্ব কেন?

২৯ মে ২০১৭

বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব এখন স্পষ্ট৷ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বরাবরই বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ করে আসছেন৷ অন্যদিকে, খোদ প্রধানমন্ত্রী বলছেন বিচার বিভাগ স্বাধীন৷

https://p.dw.com/p/2dg86
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট
ছবি: M. Uz ZamanAFP/Getty Images

তবে দ্বন্দ্বের কথা কখনো কখনো প্রধানমন্ত্রীর কথাতেও প্রকাশ পায়৷ বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালানার তিনটি অঙ্গ আইন, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ৷ রাষ্ট্র বনাম মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ২০০৭ সালের পহেলা নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথক করা হলেও এখনো বিচার বিভাগের জন্য আলাদা কোনো সচিবালয় হয়নি৷ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়নি বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি৷ আর বিচারপতিদের অভিশংসন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি চলছে৷ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়া হয়৷ হাইকোর্ট তা বাতিল করে দেয়া পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে৷ দ্বন্দ্বের নেপথ্যে আরো অনেক ইস্যু থাকলেও এখন প্রধান ইস্যু এই তিনটি৷

Manjil Morshed - MP3-Stereo

দ্বন্দ্বটি গোপনে নয়, প্রকাশ্যে চলে এসেছে৷ রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী মানে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি এখন এ নিয়ে প্রকাশ্যেই কথা বলছেন৷ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অব্যাহতভাবে বলে আসছেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা হচ্ছে৷ গত বছর থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়েও তিনি এ নিয়ে অনেক প্রকাশ্য মন্তব্য করেছেন৷ তার দু-একটি নমুনা উল্লেখ করলেই পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে৷

১০ জানুয়ারি, ২০১৬

বিচার বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে যেতে চায় নির্বাহী বিভাগ:

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে আইন বইমেলা উদ্বোধনের সময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘‘নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগের কাছ থেকে সব ক্ষমতা নিয়ে যেতে চাচ্ছে৷ অতীতে দেখা গেছে, যখনই এ ধরনের কিছু হয়েছে, তখনই আইনজীবীরা সোচ্চার হয়েছেন৷ কিন্তু এখন বিচার বিভাগের দিকে আইনজীবী মহল, নির্বাহী বিভাগ, বিচারপ্রার্থী – সবদিক থেকে যদি আঘাত আসতে থাকে, তাহলে বিচার বিভাগকে রক্ষা করবে কে?''

১৮ মার্চ, ২০১৭

বিচার বিভাগ নিয়ে সরকারকে ভুল রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে: 

বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) কমিশনের অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম'– এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘বিচার বিভাগ নিয়ে একটি মহল সরকারকে ভুল রিপোর্ট দিচ্ছে৷ বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে, তাতে সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷'' 

২৫ এপ্রিল  ২০১৭

প্রশাসন চায়না বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে চলুক:

হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সব সরকারের আমলেই বিচার বিভাগের ওপর বিমাতাসূলভ আচরণ চলে আসছে৷ প্রশাসন কোনো সময়ই চায় না বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে চলুক৷ অথচ বিচার বিভাগ প্রশাসনেরও নিরাপত্তা দিয়ে থাকে৷ কিন্তু আমলাতন্ত্র সব সময় বিচার বিভাগকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে৷''

প্রধান বিচারপতির এ রকম আরো অনেক কথার জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইনমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার আরো অনেকে যোগ দিয়েছেন বাহাসে৷

২৮ এপ্রিল ২০১৭ 

ক্ষমতা কারও কিন্তু কম নয়: প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীর কাকরাইলে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের জন্য আবাসনস্থল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘পারস্পরিক দোষারোপের পথে না হেঁটে সংসদ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে সমঝোতার মাধ্যমে আরও সচেতনতার সঙ্গে কাজ করতে হবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ক্ষমতা কারও কিন্তু কম নয়৷ এখন কে কাকে সম্মান করবে, কে কাকে করবে না, কে কার সিদ্ধান্ত নাকচ করবে, কে কাকে মানবে, না মানবে; এই দ্বন্দ্বে যদি আমরা যাই, তাহলে কিন্তু একটি রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না৷'' একই অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘একটি মহল সব সময় সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে দূরত্ব তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত৷ এ রকম ভুল বোঝাবুঝির কারণে সাধারণ জনগণের কাছে ভুল বার্তা চলে যায়৷''

৮ মে ২০১৭

প্রধান বিচারপতি কীভাবে বলেন বিচার বিভাগ স্বাধীন নয় : প্রধানমন্ত্রী

সংসদে প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‘প্রধান বিচারপতি কীভাবে বললেন দেশে আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই৷ বিচার বিভাগ যে স্বাধীন তার একটাই তো প্রমাণ আছে৷ একজন নেত্রীর একটা মামলায় যদি ১৪০ দিন সময় দেওয়া হয়, বিচার বিভাগ স্বাধীন বলেই তো এতদিন সময় দেওয়া হয়েছে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘বিচার বিভাগ স্বাধীন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত৷ সরকার কোনো মামলার বিচারে হস্তক্ষেপ করেনি৷''

১ মে  ২০১৭

প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন বিচার বিভাগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ আমলে: আইনমন্ত্রী

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির অভিষেক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘‘দেশে বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়ে থাকলে সেটা প্রথম হয়েছিল ১৯৭২ সালে৷ মৃত্যু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালে হত্যার মধ্য দিয়ে৷ তারপর যদি আবার স্বাধীন হয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে তা হয়েছে ১ নভেম্বর ২০০৭ সালে (মাসদার হোসেন মামলার ঐতিহাসিক রায়ের দিন)৷ আমরা অনেক স্বাধীনতার কথা মুখে শুনেছি৷ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন বিচার বিভাগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ আমলে৷''

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী

বিচার বিভাগের সঙ্গে  নির্বাহী বিভাগের দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী৷ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এখন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হবে কি হবে না তা নিয়ে শুনানি চলছে৷ সেখানে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল ওই সংশোধনী  বহাল রাখার পক্ষে কথা বলছেন৷ আদালত এর বাইরে এমিকাস কিউরি হিসেবে বিশিষ্ট আইনজীবীদের বক্তব্য শুনছেন৷ 

১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল৷ ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়৷ পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে৷ ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়৷

কিন্তু  ২০১৬ সালে ৫ মে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট৷ রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপিল করায় এখন তার শুনানি চলছে৷

ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিলের রায়ে হাইকোর্ট তখন বলেন, ‘‘বলতে দ্বিধা নেই, ষোড়শ সংশোধনী একটি কালারেবল লেজিসলেশন (কোনো কাজ সংবিধানের মধ্যে থেকে করার সুযোগ না থাকলে আইনসভা যখন ছদ্ম আবরণে ভিন্ন প্রয়োজনের যুক্তি দেখিয়ে একটি আইন তৈরি করে) যা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘন৷''

বৃহস্পতিবার শুনানিতে এমিকাস কিউরি হিসেবে অংশ নেয়ার পর ব্যরিস্টার আমীর উল ইসলাম বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক যে আইন কানুন জাতিসংঘ থেকে শুরু করে কমনওয়েলেথের দেশসমূহ যে রুলস রেগুলেশন মানে, সব জায়গায় জুডিশিয়ারির দক্ষতা, নিয়োগ বা যে কোনো ধরণের ব্যবস্থা নিতে হলে সেটা জুডিশিয়ারিই করে৷ আমাদের এখানেও সেরকম পদ্ধতি চালু আছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল, তারাই বিষয়টি দেখবে৷ পার্লামেন্টারি রিম্যুভাল কোনো দেশেই কার্যকর হতে পারছে না৷ বেশিরভাগ দেশই এটা থেকে সরে আসছে৷'' 

ব্যরিস্টার আমীর উল ইসলাম আরো বলেন, ‘‘দুনিয়াজোড়া যে অবস্থান দেখছি, সেখানে ‘সেলফ ডিসিপ্লিণ্ড অ্যাণ্ড সেল্ফ মনিটরিং-'এর কথাই বলা হচ্ছে৷ জুডিশিয়ারি অসদাচরণ হয়েছে মনে করলে জুডিশিয়ারিই সেটা ঠিক করবে৷'' 

আরেকজন এমিকাস কিউরি ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘‘সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে কীভাবে বিচারপতি অপসারণ করা হবে– এমন প্রশ্ন রেখেছেন আপিল বিভাগ৷ আদালত বলেন, এখন না হয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, কিন্তু কোনো সময় যদি না থাকে, যদি হ্যাঙ্গিং পার্লামেন্ট হয়, তাহলে কী হবে? কীভাবে অপসারণ করা হবে? তখন তো একটা ভ্যাকুয়াম (শূন্যতা) সৃষ্টি হবে৷'' 

তিনি আরো বলেন, ‘‘এ দেশের সংসদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ তুলনা করলে হবে না৷ এ দেশে পুলিশ, নির্বাহী বিভাগের সদস্যরা অসদাচরণ করলে তাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ তাহলে জুডিশিয়ারিতে কেন সংশোধন৷ যদি এই সংশোধন বহাল হয় তাহলে বেঞ্চ গঠন ছাড়া বিচার বিভাগের কোনো কাজ নেই৷ রায় হলে তখন সংসদে আলোচনা হবে৷''

বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশের নিম্ন আদালত এখনো স্বাধীন নয়৷ এখানে প্রশাসনের প্রভাব মাসদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী গেজেট করে পুরো বিচার ব্যবস্থা এবং বিচার প্রশাসনকে আলাদা করা হয়নি৷ এরপর যদি সংসদের হাতে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা যায়, তাহলে তারা রাজনীতিবিদদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়তে পারেন৷ কোনো রাজনীতিবিদের কোনো মামলার রায় যদি তার বিপক্ষে যায়, তাহলে ওই বিচারক প্রতিশোধের মুখে পড়তে পারেন৷''

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, ‘‘আমি মনে করি, বিচার বিভাগ এবং প্রশাসন মুখোমুখি অবস্থানে নেই৷ একটা তীব্র বিতর্ক হচ্ছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে৷ আশা করি, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আপিলের রায়ে এই বিতর্কের অবসান ঘটবে৷''

বিচার বিভাগ আলাদা করা হলেও বাংলাদেশে নিম্ন আদালতের বিচারকদের এখনো নিয়ন্ত্রণ করে আইন মন্ত্রনালয়৷ তাদের বদলি, পোস্টিং আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে৷ বিচার বিভাগের সুপারিশ উপেক্ষা করার অভিযোগ আছে৷ এ মাসেই আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিমকোর্টকে না জানিয়ে ১৭ জন বিচারককে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল৷ কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট তা জানতে পেরে গত ২৩ মে তাদের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷

আদেশে হুঁশিয়ার করে বলা হয়েছে, ‘‘এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা হলে সংশ্লিষ্ট বিচারকেরা বিভাগীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত হবেন৷''

নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বিচারকদের মধ্যে ১৪ জনই প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষার জন্য তিন মাসের কোর্সে ২৭ মে অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন৷

অন্যদিকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা গেজেট এখনো প্রকাশ করা হয়নি৷ মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে আপিল বিভাগ শৃঙ্খলাবিধি তৈরি করে দেয়ার পরও তা দেড় বছরেও গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়নি৷ এটা হলে নিম্ন আদালতের বিচারকরা পুরোপুরি বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে৷ আর সুপ্রিমকোর্ট চায় বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয়, যা পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷

Mahbub uddin Khokon - MP3-Stereo

প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেটদের মোবাইল কোর্ট পারিচালনা নিয়েও আছে জটিলতা৷ গত ১১ মে হাইকোর্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করে৷ পরে অবশ্য আপিলে এই আদেশ স্থগিত করা হয়৷

এছাড়া  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সুপ্রিম কোর্টের ডিজিটাল ডকুমেন্টশন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার পক্ষের আপত্তি এবং সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে ভাস্কর্য স্থাপনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ পায়৷

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের জন্য রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মূল সমস্যা করছে আইন মন্ত্রণালয়৷ তারা নানা কৌশলে নিম্ন আদালতের ওপর কর্তৃত্ব বহাল রাখার চেষ্টা করছে৷ ফলে একটার পর একটা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে৷ উচ্চ আদালতে তেমন কোনো সমস্যা নেই৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বদলি, পোস্টিং বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে৷ বিচার বিভাগের সুপারিশ তেমন আমলে নেয় না৷ এ কারণেই মাসদার হোসেন মামলার রায় মেনে বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধি তারা গেজেট আকারে প্রকাশ করছে না৷ আইন মন্ত্রণালয়ের কারণেই বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রশাসনের এক ধরণের দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে৷''

মনজিল মোরশেদ জানান, ‘‘আমরা রিটটি করেছি সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগকে স্বাধীন রাখতে৷ কিন্তু  যারা বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদকে দিতে আইন করেছিলেন, তারা চাচ্ছেন ক্ষমতা সংসদের হাতেই থাক৷ দুই পক্ষই এখন এ নিয়ে কথা বলছে৷ আর সংবাদ মাধ্যম তা প্রকাশ করছে৷ ফলে মনে হচ্ছে বড় একটি দ্বন্দ্ব হচ্ছে৷ আসলে  এগুলো যার যার আর্গুমেন্ট৷''

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতের বিচারকদের সহায়ক জনবল সংক্রান্ত দুই হাজার ৪৬৮টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব, ৯১টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত গঠন, ২১টি অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত গঠন, জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি গঠনের প্রস্তাব, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেওয়াসহ অধিকাংশ বিষয় সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাব গত দুই বছরেও কার্যকর হয়নি৷''

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য