‘বিচ্ছিন্ন' খালেদার বিরুদ্ধে ৪২ জনকে হত্যার অভিযোগে মামলা
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫খালেদা জিয়া ৩রা জানুয়ারি থেকে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন৷ প্রথমে ‘অবরুদ্ধ' থাকলেও এখন তিনি ‘মুক্ত'৷ শনিবার রাত ৩টার দিকে গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়৷ অবশ্য পরে শনিবার রাত ১০টার দিকে বিদ্যুৎ লাইনের পুনঃসংযোগ দেয়া হয়৷ এই ১০ ঘণ্টা তিনি বিদ্যুত্হীন ছিলেন খালেদা জিয়া৷ এ সময়ে গুলশান কার্যালয়ের ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক এবং কেবল টেলিভিশন লাইনও বিচ্ছিন্ন করা হয়৷ বিদ্যুৎ ফিরে এলেও বাকি সংযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন৷
সরকার এখনও এর কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি, দায়ও নেয়নি৷ তবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগের দিন, অর্থাৎ শুক্রবার, নৌ-পরিবহণমন্ত্রী শাহজাহান খান বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং অবরোধে পোড়া যানবাহন দিয়ে খালেদার কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছিলেন৷ সংযোগ বিচ্ছিন্নের দিন তিনি খালেদার খাবারও বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন৷ রবিবার অবশ্য তিনি একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ তিনি দাবি করেছেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা খালেদার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে, সরকার কিছু করেনি৷''
জানা গেছে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি সরকারের একটি মহলও ভালোভাবে নেয়নি৷ আর এ জন্যই ফের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়৷ কিন্তু অন্যান্য সংযোগের বিষয়ে কেউ স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না৷
রবিবার থেকে শুরু হওয়া বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধের মধ্যে ৭২ ঘণ্টার হরতালের সোমবার দ্বিতীয় দিন৷ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক এবং কেবল লাইন যদি চালু করে দেয়া না হয়, তাহলে এই হরতাল অব্যাহত থাকবে৷ লাগাতার হরতাল দেয়া হবে৷ রবিবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘যে কোনো উপায়ে আন্দোল চালিয়ে যাওয়া হবে৷''
ওদিকে রবিবার রাতেই খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর গ্রেপ্তার হন তাঁর উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালু৷ তাঁকে এবং এর আগে গ্রেপ্তার আরেকজন উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুকে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় রিমান্ডে নেয়া হয়েছে সোমবার৷
অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মারা যাওয়া ৪২ জনকে হত্যার অভিযোগে সোমবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে৷ জননেত্রী পরিষদ নামে একটি সংগঠনের সভাপতি এবি সিদ্দিক বাদী হয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটি দায়ের করেন৷ মহানগর হাকিম বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে ঢাকার গুলশান থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন৷
মামলার অপর তিন আসামি হলেন – বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহম্মেদ, দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া৷
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার রাতে সংদদীয় কমিটির বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন৷ জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘‘তাঁর কপালে অনেক দুঃখ আছে৷ চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে অনেক কিছুই করতে পারি৷ কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু করতে চাই না৷''
বৈঠকে উপস্থিত বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া যে কাজটা করছেন এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ তাঁর কার্যকলাপ মানবতাবিরোধী, এটা কোনো আন্দোলন নয়৷ এটা জঙ্গিবাদ উত্থানের একটা পদক্ষেপ৷''