কটাক্ষের মুখে অমর্ত্য সেন
১১ জুলাই ২০১৯বিজেপির প্রশ্ন, দেশের প্রতি তাঁর কী অবদান আছে? লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাফল্যের পর জয় শ্রীরাম স্লোগান নিয়ে বিতর্ক থামছে না৷ খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই স্লোগানের সামনে পড়তে হয়েছে৷ কোথাও এই স্লোগান তুলে আক্রমণ করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের৷ কোথাও স্লোগান দেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের৷
এই বিতর্কের পারদ চড়েছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সাম্প্রতিক মন্তব্যে৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে তিনি নাম না করে দেশের ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘কাউকে একটা বুলি আওড়াতে বলা হচ্ছে৷ সেটা তিনি না বললে তাঁর মাথায় লাঠি মারা হচ্ছে৷ আমরা যদি এমন একটা জায়গায় এসে পৌঁছে থাকি, সেটা চিন্তার৷ জয় শ্রীরাম স্লোগান ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষকে প্রহার করার জন্য৷ এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই, এটা মনে করা যাবে না''৷
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ যোগ করেন ‘‘কলকাতায় এখন বড় করে রামনবমী পালন করা হচ্ছে শুনছি৷ আগে এমন হতে শুনিনি বাংলায় ইদানীং এসব আমদানি হয়েছে৷ বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে এর যোগ ছিল না''৷
অমর্ত্য সেনের এই মন্তব্যে হইচই পড়ে যায়৷ তিনি বরাবরই ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার কাঠামো রক্ষা করার পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ তাই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কোনো কালেই মধুর নয়৷ জয় শ্রীরাম বিতর্কে সেই তিক্ততা ফের প্রকাশ্যে এসেছে৷ সারা বিশ্বের বাঙালির গর্ব এই প্রবীণ মানুষটিকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করা হয়ছে৷
সবচেয়ে তীব্র আক্রমণ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি, সাংসদ দিলীপ ঘোষ৷ বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করতে গিয়ে অমর্ত্য সেনের কথা টেনে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের একজন নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন৷ বাঙালি হিসেবে আমরা গর্বিত৷ কিন্তু, উনি দেশকে কী দিয়েছেন, সেটা কেউ বোঝেন না৷ উনি নিজে বোঝেন কি না সন্দেহ৷ এই ধরনের লোকেরা আজ বাঙালির গর্ব৷ এঁদের কোনো চরিত্র নেই, মেরুদণ্ড নেই''৷ স্লোগানের পক্ষে জোরালো সওয়াল করে তিনি বলেন, ‘‘জয় শ্রীরাম স্লোগান নিষিদ্ধ নয়৷ তাহলে পশ্চিমবঙ্গে এই স্লোগান দিলে কেন গ্রেপ্তার হতে হচ্ছে? এটা অসহিষ্ণুতা নয়? মারধর করে স্লোগান বন্ধ করা যাবে না''৷
প্রাক্তন বিজেপি নেতা ও বর্তমান মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় ফেসবুক পোস্টে প্রবীণ অর্থনীতিবিদকে আক্রমণ করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘শ্রীরামপুরের নাম কখনো শোনেননি অমর্ত্যবাবু? কিংবা রামরাজাতলা? অবশ্য বছরের বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকলে আর কোথা থেকে শুনবেন''৷
তরুণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় কয়েক বছর রাজনীতিতে এসেছেন৷ তিনিও অমর্ত্য সেনকে আক্রমণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘‘তাঁর বয়স কথা বলছে, মস্তিষ্ক বা অন্য কিছু নয়৷ সেই কারণেই জয় শ্রীরামের মানে বুঝতে পারেননি উনি৷ বাংলায় জয় শ্রীরাম প্রতীকী প্রতিবাদের ধ্বনি, এর সঙ্গে ধর্মের যোগ নেই৷ জয় শ্রীরাম ধ্বনি অবশ্যই মানুষকে প্রহারের জন্য ব্যবহার অনুচিত৷ এই ধ্বনি ব্যবহার হচ্ছে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর লড়াই হিসেবে''৷
বিজেপি নেতৃত্বের আক্রমণের জবাবে স্বভাবসুলভ সহিষ্ণুতাই দেখিয়েছেন প্রাজ্ঞ মানুষটি৷ দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি যেটা বিশ্বাস করেন, সেটা বলেছেন৷ মতপ্রকাশ অধিকারের মধ্যে পড়ে''৷