বিজ্ঞানীদের গবেষণার প্রিয় বিষয় জিনতত্ত্ব
১৯ এপ্রিল ২০১১প্রেক্ষাপট
২০০১ সাল৷ আবিস্কৃত হলো মানব দেহের নকশা৷ চারিদিকে রব উঠলো, পাওয়া গেছে জাদুকাঠি৷ এবার সহজেই রোগ থেকে নিরাময়ের উপায় মিলবে৷ কিন্তু না৷ আবিস্কারটা নিয়ে যতটা হৈচৈ হয়েছিল ততটা সুফল এখনো এনে দিতে পারেন নি বিজ্ঞানীরা৷ তাই গবেষণা চলছেই৷ আর এ কারণেই সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের গবেষণার প্রিয় বিষয় হয়ে উঠেছে জিনতত্ত্ব৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের মূল প্রতিষ্ঠান ‘থমসন রয়টার্স'এর সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের শীর্ষ ১৩ বিজ্ঞানীর সাতজনেরই গবেষণার বিষয় জিনতত্ত্ব৷ এর মধ্যে এক নম্বরে রয়েছেন এরিক ল্যান্ডার৷ তাঁকে বলা হচ্ছে ‘হটেস্ট রিসার্চার'৷ বিখ্যাত মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাসাচুসেস্ট ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি'র অধ্যাপক তিনি৷ তিনি গবেষণা করছেন ফুসফুসের ক্যান্সার নিরাময় নিয়ে৷
বাংলাদেশে জিনতত্ত্ব গবেষণা
বিশ্ব থেকে এবার চোখ ফেরাবো বাংলাদেশের দিকে৷ জানতে চেষ্টা করবো সেখানে জিনতত্ত্ব গবেষণার কী অবস্থা? এ প্রসঙ্গে কথা বলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক সালিম আহমেদের সঙ্গে৷ তিনি বললেন, ‘‘জিনতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা বাংলাদেশে নতুন৷ মাত্র ১০-১৫ বছর হলো এ বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে৷''
সালিম বলেন, ‘‘যেহেতু বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ৷ তাই জিনতত্ত্বের গবেষণায় এই বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে৷ এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায় ধান ও পাটের নাম৷ তবে অন্যান্য ফসল নিয়েও গবেষণা হচ্ছে৷ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই গবেষণাগুলো হচ্ছে৷''
আর এসব ক্ষেত্রে গবেষকরা বেশ সফলতা লাভ করছেন বলেও জানান তিনি৷ সালিম বলেন, ‘‘লবণাক্ততা ও খরা সহনশীল ধানের জাত নিয়ে গবেষণা চলছে৷ এবং ইতিমধ্যে বেশ কিছু জাতের উৎপাদনও শুরু হয়ে গেছে৷''
আর পাটের জিন নকশা আবিস্কার করে বাংলাদেশে যে সারা বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে সেটাও এই জিনতত্ত্ব গবেষণারই ফসল৷ এখন কাজ চলছে, কীভাবে এই নকশাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিকভাবে অধিকতর লাভজনক পাটের বিভিন্ন জাত উৎপাদন করা যায় সে বিষয় নিয়ে৷
ফসলের মাঠ পেরিয়ে পশুপাখি ও মাছ নিয়েও গবেষণায় নেমে পড়েছেন বাংলাদেশের জিনতত্ত্ব বিজ্ঞানীরা৷ এমনটাই বললেন সালিম আহমেদ৷ আর থ্যালাসামিয়া রোগের জেনেটিক ভিত্তি নিয়ে গবেষণা করছে তাঁর নিজের বিভাগ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং৷
সালিম বলেন, ‘‘উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে গবেষণার ক্ষেত্রে অর্থ একটা সমস্যা৷ কিন্তু এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গবেষকরা তাঁদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷''
এসব দেখে তরুণ প্রজন্মও জিনতত্ত্ব নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে জানান সালিম৷ প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার পর শীর্ষ মেধাবীরাই এই বিভাগে ভর্তি হতে চান বলে জানান তিনি৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়