সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে প্রতিবাদ করছেন, অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছেন৷ আমি ভাবছি বিলম্ব, তাই তো বিলম্ব মানে দেরি! আমি আরও ভাবছি মাত্র ১৫/১৬ বছরের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিছিল করছেন কারণ তিনি মেনে নিতে রাজি হননি যে, ধর্মই সব বিজ্ঞানের উৎস! তাই তিনি ধর্মের অবমাননা করেছেন! বিলম্ব মানে দেরি, তাই না?
ইদানিং দেখতে পাই, ইদানিং, না কি আগেও ছিল, আমি ভালো জানি না৷ আমি দেখতে পাই ইদানিং যে, ধর্মের খুব দায় পড়েছে বৈজ্ঞানিক হওয়ার৷ মানে, ধর্মের অনুশাসনগুলো কত আধুনিক আর কত বেশি বিজ্ঞানের লিটমাস টেস্টে উত্তীর্ণ হয়, তা দেখানোর জন্য বিশ্বাসীরা খুব ব্যস্ত৷ বিজ্ঞানের সব আবিষ্কার ধর্মগ্রন্থে আছে একথা প্রমাণ করতে ধার্মিকেরা মরিয়া৷ বৈজ্ঞানিক হওয়ার জন্য ধর্মের এই ব্যাকুলতা আমরা পেলাম কোথায়? নাকি আমার ধর্ম ছাড়া আর বাকি সব বিশ্বাস বা আচরণ যে অবৈজ্ঞানিক আর অযৌক্তিক, তা বোঝানো এখন আমাদের অবশ্যকর্তব্য৷ আরেকজনকে ছোট করলেই আমরা বড় হই শুধু!
যতটুকু বুঝি বিজ্ঞান একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়৷ তাই তা কখনো বদলায়, প্রায়ই নানা দিকে মোড় নেয়, হামেশাই নতুন সময় তার সংস্কার করে৷ সংস্করণ সম্ভব নয় বলে ধর্মগ্রন্থের পক্ষে বৈজ্ঞানিক হওয়ার ঝুঁকি সব সময় রয়ে যায়: বিজ্ঞানে আজকের সমাধান আগামীকাল এমনকি হাসির খোরাকও হতে পারে৷ উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে আর পৃথিবী সমতল, এই ছিল এক সময়ের বিজ্ঞান! আবার মহাকাশ, মহাসাগর বা চিকিৎসাবিজ্ঞান/জীবাণুর মতো অসংখ্য বিষয় নিয়ে মানুষের জ্ঞান বাড়তে পারে, খুব কাছাকাছি সময়ই পাল্টে যেতে পারে বা সংশোধিত হতে পারে৷ তাই আজকের বিজ্ঞান মাথায় রেখে যারা পবিত্র গ্রন্থের মহত্ত্বের আলাপ দিচ্ছেন তারা কি একটু বেশি ঝুঁকি নিয়ে ফেলছেন না?
একজন মহাজন বললেন, ধর্মের আচরণে বা বইয়ে বিজ্ঞানের অনুসন্ধান আগেও ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা এমনকি বিজ্ঞানীরাও দেশে বিদেশে যার যার ধর্মের বিশ্বাস-আচরণ-নীতিমালার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ও শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরেছেন৷ আমিও মানি তারা এরকম করেছেন৷ গুগল-ইউটিউবের এই যুগে একটু পেছনে গিয়ে তাদের দাবি আর শ্রেষ্ঠত্বের পক্ষে যুক্তি এখন দেখলে তাদের জন্য একটু মায়াই হতে পারে৷ যেসব বিশ্বাসের, বয়ানের বা ডিভাইন গাইডলাইনের অংশগুলো তারা বৈজ্ঞানিক বলে দৃঢ় প্রমাণ হাজির করেছিলেন এখন বিজ্ঞান সেগুলোর বেশিরভাগই সংশোধন করে নিয়েছে৷ তো এখন? সৃজনশীল হয়ে অনুবাদের দোহাই দেওয়া ছাড়া আর উপায় কী?
বিশ্বাসের মুরুব্বি ধর্মের গুরুদের প্রতি আমার আহ্বান, বিশ্বাসই আসল, সেই শিক্ষাই দিন৷ কালের পাল্লায় সবকিছু না মাপাই বোধহয় ভাল৷
সবশেষে বলি বিজ্ঞানের শিক্ষক ধর্মকে অবমাননা করেননি৷ বিজ্ঞানের সবকিছু ধর্ম থেকে আসেনি বললে ধর্মের অবমাননা হয় না৷ ধর্ম বিশ্বাসে ভর দিয়ে চলে তাই তা বিজ্ঞান নির্ভর নয়৷ আপনারা যারা তাকে হেনস্তা করলেন, আটকে রাখছেন, তারাই ধর্মের অবমাননা করছেন৷