বিজয় দেখেছি, বিজয় দেখছি না
১৫ ডিসেম্বর ২০২০নয় মাসের যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনতে অনেক হারাতে হয়েছিল বাংলাদেশকে৷ লাখো শহিদের রক্ত কি বৃথা গেছে? নাকি যে আকাঙ্খা নিয়ে অস্ত্র হাতে নিয়েছিল লাখো মানুষ, তাদের সব আকাঙ্খা পূরণ হয়েছে? এক কথায় কোনো প্রশ্নের উত্তরই দেয়া সম্ভব নয়৷
বিজয়ের চার বছর পূর্তির আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য এবং চার জাতীয় নেতাকে হত্যার মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে যে ঘনঘোর লেগেছিল, সেই ঘনঘোর বিজয়ের পঞ্চাশ বছরেও কাটেনি৷
বরং যে দেশের মানুষ বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে শুরু করা স্বাধিকারের আন্দোলনকে স্বাধীনতায় রূপ দিয়েছিল, সে দেশের মানুষের মাঝে বপন করা হয়েছে ‘বাঙালি না বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ'-এর দ্বন্দ্ব৷
বিশ্বের প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জনসংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ ভারতসহ আরো কিছু দেশের মতো বাংলাদেশও স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর সাংবিধানিকভাবেও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হয়েছে৷ তবে ক্ষমতার পালাবদলে শাসকের ইচ্ছাপূরণের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার পাশে রাষ্ট্রধর্মও যোগ হয়েছে সংবিধানে৷
খুঁজলে আরো বিতর্ক, আরো বৈপরিত্যের উল্লেখ করা যাবে, যেগুলো '৭১-এর শহিদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিকামী সাধারণ মানুষদের স্বপ্নে ছিল না৷ সেখানে উদার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা নিশ্চয়ই আসবে৷ অবাধ ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই কেবল তা সম্ভব হতে পারে৷ এছাড়া '৫২-র ভাষা আন্দোলন এবং '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যোগফলে ভাষা এবং সংস্কৃতিকে সব জায়গায় অগ্রাধিকার দেয়ায় সাফল্য-ব্যর্থতার প্রসঙ্গটিও খুব বড় হয়ে উঠবে অবশ্যই৷
এসব অপ্রাপ্তিকে সাথে নিয়েই করোনাকালে বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর শুভলগ্নে বাংলাদেশ৷ এ দেশে বিশ্বব্যাংক তাকিয়ে দেখে পদ্মা সেতু৷ দুর্নীতির ধারাবাহিকতা বা আরো বাড়বাড়ন্তের মাঝেও একটি বিষয়ে অন্তত খুব গর্ব করতে পারে বাংলাদেশ- অর্থনীতির অনেক সূচকে '৭১-এর শত্রুপক্ষ পাকিস্তানের চেয়ে তো বটেই, এমনকি ‘মিত্র' ভারতের চেয়েও অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ৷
এসিবি/ কেএম